ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রান্নায় কতটুকু তেল লাগে?

প্রকাশিত : ১১:৩৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

আমাদের দেশীয় রান্নায় তেলের ব্যবহার একটি খুবই সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কিন্তু আমরা কি জানি রান্নায় ঠিক কতটুকু তেল ব্যবহার করলে আমাদের দৈহিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত হবে? আমাদের দৈহিক চাহিদার কথা যদি বলি সবকিছুর আগে আমাদের জানতে হবে।

আমাদের বয়স, ওজন, উচ্চতা, পরিশ্রমের প্রকার অনুযায়ী দৈনিক শক্তির বা ক্যালরির চাহিদা কতটুকু এবং একই সাথে, ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের দৈহিক অভ্যন্তরীণ বিপাকে কতখানি শক্তি খরচ হয়। এই মোট ক্যালরির কিছু অংশ আসবে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ শস্য ও শস্য জাতীয় খাবার থেকে, কিছু অংশ আসবে প্রোটিন অর্থাৎ মাছ,মাংস, দুধ, ডিম তথা প্রানীজ খাবার এবং ডাল, বাদাম, বীচি তথা উদ্ভীজ্জ খাবার থেকে। আর কিছু ক্যালরির অংশ আসবে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার যেমন, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, প্রানীজ চর্বি, ঘি, বাটার, মেয়নিজ এবং বিভিন্ন প্রানীজ প্রোটিনে প্রাপ্ত ফ্যাট থেকে। মুলতঃ আমাদের বয়স, ওজন, উচ্চতা এবং পরিশ্রমের প্রকার ভেদে সারাদিনের ক্যালরির ২০% থেকে ৩৫% ক্যালরি ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে গ্রহণ করতে হবে।

সুতরাং আমরা যদি এই হিসাব টি একটু বুঝে নিতে পারি, আমাদের চর্বি এবং তেল গ্রহণের মাত্রাকে আমরা নিজেরাই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

ধরে নিচ্ছি একটি ৫ সদস্যের পরিবারে মধ্য বয়স্ক একজন সুস্থ, মাঝারি পরিশ্রমের পুরুষ এর ক্যালরির চাহিদা ২০০০ ক্যালরি। নিয়ম অনুযায়ী ওই ব্যাক্তির ক্যালরির চাহিদার ২০% বা ৪০০ ক্যালরি গৃহীত হবে ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে। জেনে রাখুন, ১ গ্রাম ফ্যাট থেকে আমরা ৯ ক্যালরি পেয়ে থাকি।

অর্থাৎ মাত্র ৫ গ্রাম বা ১ চা চামচ তেল বা ঘি বা বাটার থেকে আমরা পাই (৫x৯)=৪৫ ক্যালরি। সুতরাং ৪০০ক্যালরি কে ৯ দিয়ে ভাগ করলেই ওই ব্যাক্তির সারাদিনের ফ্যাটের চাহিদা হবে ৪৪.৪৪ গ্রাম। জরুরী একটি বিষয় হলো, আমরা যা কিছু প্রোটিন জাতীয় খাবার খাই, তা থেকেও আমরা প্রতিদিন কিছু প্রাণীজ ফ্যাট গ্রহণ করছি। এক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, একপিস মুরগীর রানের মাংসে (১০০ গ্রাম) ফ্যাট থাকে ১০.৯ গ্রাম। এভাবে বিভিন্ন পরিমানে প্রাণীজ ফ্যাট ( স্যাচুরেটেড ফ্যাট) থেকে আমরা যেসব ফ্যাট পাই তা মুলত খুব কমই (ফ্যাটের চাহিদার ২০% থেকে ২৮%) আমাদের দেহে প্রয়োজন হয়।

এখানে উল্লেখ্য প্রাণীজ ফ্যাট আমাদের দেহে চাহিদার অতিরিক্ত গৃহীত হলেই অতিরিক্ত ফ্যাট শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংঙ্গে জমা হয়ে ওজনাধিক্য এবং ওজনাধিক্যের সাথে সম্পর্কিত রোগ সমূহ, যেমনঃ ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হার্ট ডিজিজ, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি অসুস্থতার মূল কারন হিসেবে বিবেচিত হয়। ধরে নিচ্ছি ওই ব্যাক্তির প্রানীজ ফ্যাট এর গ্রহণের পরিমান হলো ২৫ গ্রাম পর্যন্ত।

সুতরাং ওই ব্যাক্তিটি উদ্ভিজ্জ ফ্যাট (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) থেকে গ্রহণ করবেন মাত্র ২০ গ্রাম পর্যন্ত। জেনে রাখুন, উদ্ভিজ্জ ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এবং হার্ট, মস্তিষ্কের সুস্থতা রক্ষাসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এর শোষণ, ত্বকের স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে এর ভুমিকা অপরিসীম।

যদি ওই ব্যাক্তিটির যেকোন উদ্ভিজ্জ তেল অর্থাৎ সয়াবিন, জলপাই, সূর্যমুখী, রাইসব্র‍্যান, ক্যানোলা ইত্যাদি তেলের সারাদিনের চাহিদা ২০ গ্রাম হয় তবে সারামাসে ওই ব্যাক্তিটির রান্নার জন্য বরাদ্দ তেল হবে ৬০০ গ্রাম অর্থাৎ ১ লিটার এর ও অনেক কম।

ওই পরিবারের শিশু সদস্য থেকে শুরু করে মহিলা এবং বৃদ্ধ পর্যন্ত বয়স, ওজন, উচ্চতা, লিংগ, পরিশ্রমের প্রকার এবং অসুস্থতা ইত্যাদির তারতম্যে ক্যালরির চাহিদায় ভিন্নতা থাকবে। তাই আনুমানিক হিসাবে বলা যায় ওই পরিবারে সারামাসে সব ধরনের রান্নার তেলের চাহিদা হবে আনুমানিক ৩ লিটার থেকে ৩.৫ লিটার পর্যন্ত।

সবারই একটি সাধারণ সমস্যা রান্নার সময় তেলের হিসেব করাটা খুব কঠিন। এই কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও রান্নার তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। হ্যা, একটু কঠিন হলেও সহজ ভাবে বিষয়টিকে আয়ত্তে আনা যায়। ওই পরিবারের সারাদিনের আনুমানিক তেলের পরিমান অর্থাৎ আনুমানিক ১০০ গ্রাম থেকে ১২০ গ্রাম তেল আলাদা করে রেখে, রান্নায় তেলের ব্যবহার কে অনেকটাই সীমিত করা যায়। এখানে উল্লেখ্য, ওই পরিবারে কোন বাড়তি মেহমানের জন্য রান্নার তেল প্রতিজন ব্যাক্তির (মেহমান) চাহিদার আনুমানিক হিসাব ধরে ওই পরিমান তেল যুক্ত করে রান্না করা যায়।

লেখকঃ সোনিয়া শরমিন খান
নিউট্রিশনিস্ট ও ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান
সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিমিটেড, বসিলা রোড,মোহাম্মদপুর,ঢাকা


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি