শীতকালীন সবজি শিমের যত উপকারিতা
প্রকাশিত : ১০:৩৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১০:৪১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯
শীতকালের একটি জনপ্রিয় সবজি শিম। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই চাষ হয় শিমের। শিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন আর মিনারেল আছে। যাঁরা সরাসরি প্রোটিন খান না অর্থাৎ মাছ, মাংস খাওয়া হয় না, তাঁদের জন্য শিমের বিচি শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। যাঁদের আমিষ খাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর এই শীতে নিয়মিত শিম খেলে ত্বকও ভালো থাকবে।
শিম (Bean) সাধারণভাবে শিম, বরবটি ইত্যাদি নামে পরিচিত লিগিউম জাতের (leguminous) উদ্ভিদ বা তাদের বীজ। সারা পৃথিবীতে নানাজাতীয় শিমের চাষ হয়। এগুলি মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য। মানুষের খাদ্য হিসেবে যেসব শিম ব্যবহূত হয় সেগুলি প্রায় ১৪টি গণের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ২৮টি প্রজাতির শিম বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিমের বীজ সাধারণত বৃক্কাকার (kidney-shaped) এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ।
শিমের পুষ্টি উপাদানঃ
আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কচি শুঁটিতে পানি ৮৫ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৭ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৭ মাইক্রো মিলিগ্রাম এবং আঁশজাতীয় উপাদান বিদ্যমান। পরিপক্ব শুঁটিতে পানি কম থাকে এবং কিছু উপাদান বেশি থাকে। যেমন শ্বেতসার ৬০ গ্রাম, আমিষ ২৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, তাপশক্তি ৩৪০ কিলোক্যালরি।
শিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
১)শিমে পাচক আঁশ (ডায়েটরি ফাইবার) থাকায় খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।
২)রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা প্রকারান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৩)পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়, শরীরের ভেতরের গরম ভাব দূর করে।
৪)এক গবেষণা থেকে জানা যায়, শিমের পুষ্টিগুণ শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় না, রোগকে শরীর থেকে দূরে রাখে।
৫)লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে।
৬)মাছসহ বিভিন্ন খাবারের ফুড পয়জনিং প্রতিরোধী অ্যান্টিডোট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৭)শিমের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ ও শিমের মধ্যে থাকা খনিজ চুল পড়া রোধে সহায়তা করে এবং চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
৮)শিমে রয়েছে সিলিকন জাতীয় উপাদান, যা হাড়কে মজবুত করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট। এ উপাদান গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ উপকারি।
৯)শীতে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক আর প্রাণহীন। নিয়মিত শিম খেলে ত্বক ভালো থাকবে এবং ত্বকের রোগবালাইও দূরে থাকবে।
১০)শিম কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর।
১১)শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
১২) শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমগাছ শিকড়ের সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে মাটিকে উর্বর করে
সতর্কতাঃ
শিমে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকর সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড আছে। কাজেই শিম পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। শুকনো শিমে এই উপাদানের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই শিমের শুকনো বিচি রান্না করার সময় অবশ্যই একবার পানি পরিবর্তন করা উচিত। শিম খেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
টিআর/