ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দুধ খেলে গ্যাস করে, পেট খারাপ হয়! জেনে নিন সমাধান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৫, ২৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৫:২২, ২৭ জুন ২০২০

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

Ekushey Television Ltd.

দুধ যে একটি সুষম খাদ্য তা আমরা অনেকেই জানি। দুধে বিশেষ করে আমিষ, চর্বি, শর্করা, নানা ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং খনিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। যা হাড়-দাঁত মজবুত করে এবং পেশী শক্ত করে। শরীরে পুষ্টি জুগিয়ে সুস্থ রাখে। তবুও দুধ খেলে অনেকেরই পেট ফাঁপে, গ্যাস করে, পেট খারাপ হয়! কিন্তু ক্যালসিয়াম তো দরকার, কি করবেন? চিন্তা নেই, আজ আমরা এর সমাধান নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। 

দুধে যে আমিষ আছে, তার নাম ক্যাসিন। এই ক্যাসিন ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম ক্যাসিনেট তৈরি করে, যা বেশ উৎকৃষ্ট মানের একটা আমিষ। দুধকে আদর্শ আমিষ বলার কারণ- এতে সব ধরনের অ্যামাইনো এসিড আছে। দুধের প্রধান শর্করা হলো ল্যাকটোজ এবং সাথে আছে অল্প পরিমাণে গ্লুকোজ। দুধের মিষ্টতা নির্ভর করে প্রধানত ল্যাকটোজের পরিমাণের ওপর। দুধে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে, যার কারণে রক্তে বেশি শর্করা বাড়ায় না। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দ্বিধায় দুধ খেতে পারবেন। দুধে কিছু পরিমাণ চর্বি আছে যা ফসফোলিপিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড গোত্রের অন্তর্গত। এটি খুব সহজেই আমাদের পাকস্থলী হজম করতে সক্ষম। তবে দুধ জ্বাল দেয়ার পরে দুধের উপরে যে সর জমে তাতে চর্বি বেশি থাকে। যারা অতিরিক্ত চর্বি খেতে চান না তারা চাইলে সর সরিয়ে শুধু দুধ খেতে পারেন।

দুধের ক্যারোটিন ও ভিটামিন 'এ'-এর পরিমাণ নির্ভর করে গরুর খাদ্যের ওপর। যে গরু বেশি ঘাস খায়, তার দুধে ভিটামিন 'এ' তত বেশি। তরল দুধের তুলনায় মাখন ও ক্রিমে ভিটামিন ‘এ’ বেশি। দুধ ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। সাধারণত এক কাপ দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এক কাপ দইয়ে পাওয়া যাবে আরও একটু বেশি (প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম)। দুধে ভিটামিন ‘এ’-এর সঙ্গে ভিটামিন ‘ডি’ পর্যাপ্ত আছে বলেই তা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। ভিটামিন ‘ডি’ দরকার ৪০০ আইইউ। আমাদের হাড়ে দুটি মূল উপাদান- ১. কোলাজেন নামের আমিষ এবং ২. ক্যালসিয়াম ফসফেট নামের খনিজ, যা দুধে পাওয়া যাবে।

আমাদের পাকস্থলীর ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে নির্গত হয় ল্যাকটোজ নামক একপ্রকার এনজাইম, যা দুধের শর্করা হজমে সাহায্য করে। যাদের শরীরে এই ল্যাকটোজ এনজাইমের ঘাটতি আছে, তারা সাধারণত দুধ হজম করতে পারেন না যার কারণে বদহজম হয়। দুধে আছে ল্যাকটোজ, আর তা হজমে সমস্যা হলে তাকে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলে। অনেকের বংশগত কারণে এই সমস্যা থাকতে পারে।

ল্যাকটোজসমৃদ্ধ খাবার অর্থাৎ দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বমি ভাব, পেটের ভেতর অস্বস্তি, কামড়ানো, পেট ফাঁপা বা গ্যাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। অনেক সময় এই লক্ষণগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে।

তবে, সুস্থ-সবল জীবন-যাপনের জন্য প্রতিদিন দুধ খাওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের হাড়ের ক্ষয়রোধে দুধে থাকা ক্যালসিয়ামের ভুমিকা অপরিসীম। সেই জন্য শুধু দুধ খেয়ে পেটের সমস্যা না করে, দুধের সাথে খাদ্যশস্য মিশিয়ে খাবেন। যেমনঃ দুধ-রুটি, দুধ-ভাত, দুধ-মুড়ি/খই বা দুধ-কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি।

আপনি চাইলে দই খেতে পারেন, তবে চেষ্টা করবেন মিষ্টি ছাড়া দই খেতে। দই হলো- ফার্মেন্টেড খাদ্য অর্থাৎ উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দই তৈরি করা হয়। গাজন প্রক্রিয়ার সময় দুধে থাকা শর্করা ল্যাকটোজ ভেঙে ল্যাকটিক এসিডে পরিণত হয়। ফলে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে অর্থাৎ দুধ খেলে হজম হয় না তাদের দই হজমে কোনো সমস্যা হবে না। এতে করে দুধের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি পুষ্টি পাবেন। দই ছাড়াও দুধের পরিবর্তে সয়া দুধ, নারিকেলের দুধ এবং আমন্ড বাদামের দুধ খেতে পারেন। এগুলো দুধের মতো পেটে সমস্যা করে না। যদি কেউ নিরামিষ/নিরামিষাশি/ভেজিটেরিয়ান হন, সেক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন 'ডি' সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।

আর যাদের বদহজমের সমস্যা তারা গরম দুধ খাবেন। কারণ ঠাণ্ডা দুধ, গরম দুধের তুলনায় ভারি, যা হজম করা আমাদের পাকস্থলীর পক্ষে কষ্টকর। আর গরম দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ কম থাকে, সেই জন্য সহজেই হজম হয়। যাদের রাতে ঘুম হয় না তারা ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাবেন। যাদের পেট ফাঁপা/গ্যাস্ট্রিক/বুক জ্বালা/পেট জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা আছে তারা ঠাণ্ডা দুধ খাবেন। 

তাছাড়াও ঠাণ্ডা দুধ মেদ কমাতে সাহায্য করে। যাদের ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা নেই তারা সকালে খালি পেটে ঠাণ্ডা দুধ খাবেন, এতে শরীরে যে পানির ঘাটতি আছে তা পূরণ হবে। যাদের প্রসাবের রাস্তায় জ্বালা-পোড়া করে, তারা ঠাণ্ডা দুধের সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে খেয়ে নিবেন। তাহলে আরাম পাবেন।

যাদের ওজন বেশি/রক্তে চর্বি বেশি, তারা দুধের সর ফেলে/নন ফ্যাটি দুধ খেতে চেষ্টা করবেন। মাখন, ননি, চিজ/পনির, ক্রিম এবং ঘন দুধ না খাওয়াই উত্তম। (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত সাপেক্ষে)।

কন্ট্রিবিউটর- আদিবা তাসনীম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি