ঢাকা, সোমবার   ০৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গর্ভকালীন পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসেবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২০, ৯ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

গর্ভকালীন সময়ে একজন মাকে যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় তাই গর্ভকালীন সেবা। গর্ভধারণের সময় হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়কালে মা ও শিশুর যত্নকে গর্ভকালীন যত্ন বলে। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে সমাজকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেয়া।

একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা গর্ভবতীর স্বামীসহ পরিবারের সকলের সমান দায়িত্ব ।

গর্ভধারণের পরপরই একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন যত্নের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রথম ভিজিটের পর একজন গর্ভবতীকে সাধারণত ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫ দিনে একবার এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার এই গর্ভকালীন যত্নের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
এছাড়া-
- ৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২টি টিটি টিকা নিতে হয়।
- বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
- গর্ভকালীন সময় ভারি কোনো কাজ করা যাবে না।
- হাসিখুশি থাকতে হবে এবং দিনে ১ থেকে ২ ঘন্টা বিশ্রাম ও রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
- যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে ডেলিভারি করানো নিরাপদ। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী দ্বারা ডেলিভারি করাতে হবে।
- গর্ভকালীন সময়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার
এ সময় মা ও গর্ভের শিশু দু’জনের সুস্থতার জন্য একটু বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু বেড়ে ওঠার জন্য আমিষ জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ বেশি করে খেতে হবে। এ ছাড়া সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, তরকারি ও ফল ছাড়াও যেসব খাবারে আয়রন বেশি আছে যেমন কাঁচাকলা, পালং শাক, কচু, কচুশাক, কলিজা ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে। আর বেশি পরিমাণে পানি (দিনে ৮/১০ গ্লাস) খেতে হবে এবং রান্নায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে।

অনেকেরই ধারণা মা বেশি খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক প্রসব হবে না। অনেকে গর্ভবতী মাকে বিশেষ কিছু খাবার খেতে নিষেধ করে। যেমন- দুধ, মাংস কিছু কিছু মাছ ইত্যাদি। এগুলো খাওয়া তো নিষেধ নয়ই, বরং মা বেশি খেলে মায়ের ও বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মা প্রসবের ধকল সহ্য করার মতো শক্তি পাবেন এবং মায়ের বুকে বেশি দুধ তৈরি হবে।

এ সময় স্বাভাবিক কাজকর্ম করা শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু কিছু কিছু ভারি কাজ যেমন: কাপড় ধোয়া, পানি ভর্তি কলস কাঁখে নেয়া, ভারি বালতি বা হাঁড়ি তোলা উচিত নয়। এ সময় প্রতিদিন গোসল করা, দাঁত মাজা, চুল আঁচড়ানো, পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত। এতে শরীর ও মন ভালো থাকে।

গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চেকআপের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের জন্য যাওয়ার সুপারিশ করেছে, এর মাধ্যমে ৬টি সেবা নিশ্চিত করা হয়।

তবে মনে রাখা দরকার যে, গর্ভবতী মায়ের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ৪ বার এর বেশি চেকআপে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা/চেকআপের সময়সূচি
১মঃ ৪র্থ মাসের মধ্যে (১৬ সপ্তাহ)
২য়ঃ ৬ষ্ঠ মাসে (২৪ সপ্তাহ)
৩য়ঃ ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ)
৪র্থঃ ৯ম মাসে (৩৬ সপ্তাহ)

গর্ভকালীন সেবা/চেকআপে যা যা করা হয়
- গর্ভকালীন ইতিহাস নেয়া হয়
- শারীরিক পরীক্ষা করা
- স্রাব পরীক্ষা
- চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
- প্রতিরোধক বাবস্থাপনা
- মাকে পরামর্শ প্রদান করা
- স্বাস্থ্য শিক্ষা

কিভাবে বুঝবেন গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে
গর্ভধারণের ১৮-২০ সপ্তাহ পর হতে একজন মা, বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারেন। পেটে বাচ্চার নড়াচড়া বাচ্চার সুস্থতা সম্বন্ধে ধারণা দিয়ে থাকে। একটি সুস্থ বাচ্চা স্বাভাবিক পরিমাণ নড়াচড়া করে থাকে। এই নড়াচড়ার সংখ্যা হলো ১২ ঘন্টায় ১০ বার। আপনি ১২ ঘন্টায় ১০ বার নড়াচড়া পেয়ে থাকলে আপনার বাচ্চা সুস্থ আছে মনে করতে পারবেন। আপনি যদি ১২ ঘন্টায় ১০ বার না পেয়ে ৬-৮ বার নড়াচড়া পেয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন।

জরুরি প্রসূতি সেবা
জরুরি প্রসূতি সেবা হলো জরুরি ভিত্তিতে প্রদানযোগ্য জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা বা সেবা যার মাধ্যমে প্রসবজনিত জটিলতার (Obstetric Complications) কারণে মহিলাদের মৃত্যু ও অসুস্থতা থেকে রক্ষা করা যায়।

গর্ভকালীন ৫ টি বিপদ চিহ্ন
১। গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব
২। মাথা ব্যাথা ও চোখে ঝাপসা দেখা
৩। গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খিঁচুনি
৪। ভীষণ জ্বর
৫। বিলম্বিত প্রসব

গর্ভকালীন এবং প্রসাবকালীন সময়ে এর যে কোনো একটি জটিলতা দেখা দিলে দেরি না করে গর্ভবতী মাকে জরুরি সেবার জন্য মাকে দ্রুত হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি