অতিরিক্ত প্রসাধনী বাচ্চাদের ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর
প্রকাশিত : ১১:২৪, ২০ অক্টোবর ২০২০
হেমন্তের শুরুতে ও গুমোট গরমে ছোট সোনামনিদের শরীর জুড়ে লালচে র্যাশ, কারও আবার জড়ুল, নারেঙ্গা, হারপিস, ন্যাপকিন র্যাশ দেখা দেয়। গরম হোক বা ঠাণ্ডা সব আবহাওয়াতেই হাজারো ত্বকের সমস্যা কাবু করে ফেলতে পারে ছোট্ট মানুষদের। আর এসব দেখে মা-বাবা দিশাহারা হয়ে পড়েন।
এই নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, সদ্যোজাতের সংবেদনশীল ত্বকের সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য যত্নেই ঠিক হয়ে যায়। বরং অতিরিক্ত পাউডার, ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক লোশন লাগালে সমস্যা জটিল আকার নিতে পারে বললেন ভারতের ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা সন্দীপন ধর।
এখনকার বাচ্চাদের সব থেকে বেশি যে সমস্যা হয় তাহলো ন্যাপকিন র্যাশ। ভিজে ডায়াপার পরিয়ে বাচ্চাকে অনেকক্ষণ রেখে দিলে এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় ভিজে কাঁথায় বা তোয়ালেতে দীর্ঘক্ষণ বাচ্চাকে শুইয়ে রাখলে র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভিজে ন্যাপকিনের সংস্পর্শে মূত্রে থাকা জীবাণুরা শিশুর ভিজে ত্বককে সহজেই আক্রমণ করে। আর এই কারণেই ন্যাপকিন ডার্মাটাইটিস হয়।
অনেক সময় ডায়াপারের ঘষা লেগেও কঁচি ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সদ্য মা বার বার ন্যাপকিন বদলানোর ভয়ে টানা ১২-১৩ ঘণ্টা ডায়াপার পরিয়ে রাখেন। শিশুর কোমল ত্বকের জন্য এই ব্যবস্থা যথেষ্ট ক্ষতিকারক। বাচ্চা যেন ভিজে অবস্থায় শুয়ে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
শিশুর তলপেট, উরুর আশপাশে র্যাশ বেশি দেখা যায়। জন্মের ৩ সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ন্যাপকিন র্যাশের সমস্যা বেশি হয়। তবে খোলামেলা আর শুকনো রাখলে দ্রুত র্যাশ মিলিয়ে যায়। কিন্তু বেশি সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সদ্যোজাতের আর এক সমস্যা নিয়ে অনেক মা চিন্তায় পড়েন তা হলো নাভির লেগে থাকা অংশে সামান্য রস থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৭-১৫ দিনের মধ্যে নাভি শুকিয়ে যায়। নিয়মিত ওষুধ লাগাতে হবে, কখনওই তুলো দিয়ে রাখবেন না।
গোসলের সময় পানি লাগলে কোনও সমস্যা হয় না। এই নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গ্রামাঞ্চলে জীবাণুর সংক্রমণে নারেঙ্গা নামে এক ধরনের ত্বকের অসুখ হয়। শিশুর ৩-৬ মাস বয়সে নারেঙ্গার প্রকোপ বাড়ে। মূলত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এর জন্যে দায়ী। স্ট্যাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস ইত্যাদি জীবাণু ত্বকের এই সমস্যার জন্য দায়ী। এ রকম হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
অনেক সময় ফোস্কার মত দেখতে হারপিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। হারপিস না নারেঙ্গা তা একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন। দ্রুত এই সমস্যার চিকিৎসা শুরু না করলে ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বেশ কিছু সদ্যোজাতের জন্মের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে বাদামি বা কালচে দাগ থাকে। সাধারণভাবে এই দাগকে জড়ুল বলা হয়, ডাক্তারি নাম মঙ্গোলিয়ান স্পট। এটা আদৌ কোনও রোগই নয়। অনেক সময় জন্মগত এই জড়ুল আকারে বাড়ে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারে ছোট হতে শুরু করে। কোনও মলম লাগানো বা ওষুধ খাওয়ানোর দরকারই পড়ে না। এই নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।
অনেক পরিবারে বাচ্চাকে অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন দিয়ে গোসল করানো হয়। অনেক সময় শিশুর শরীরে র্যাশ হলেও অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেওয়া হয়। যে কোনও অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। অনেকে আবার শিশুর জামাকাপড় অ্যান্টিসেপটিকে ধুয়ে রাখেন। এর থেকেও স্কিন র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। র্যাশে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগালে র্যাশের জ্বালা ব্যথা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একটু ভাল স্বাস্থ্য যে বাচ্চাদের, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হাঁটু, উরু-সহ সব ভাঁজ পরিষ্কার করে সাবান দিয়ে ধুয়ে দিন। নিয়ম করে গোসল করাবেন। বৃষ্টি বা মেঘলা হলেও গোসল বন্ধ করবেন না। পাতলা নরম তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দেবেন, পাউডার লাগানোর দরকার নেই, কিন্তু অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল মাখানো যেতে পারে।
তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে বাচ্চার শরীর ও ত্বক দুইই ভাল থাকবে। সদ্যোজাতকে সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখুন ও যত্নে রাখুন।
সূত্র: আনন্দবাজার
এএইচ/এমবি