বিয়ের আগে বর-কনের যেসব প্রস্তুতি খুব জরুরি
প্রকাশিত : ১৩:২৫, ২১ অক্টোবর ২০২০
মানুষের জীবনের নানা অধ্যায়ের মধ্যে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবনের একটা অনুসঙ্গ, এটা জীবনকে করে সুন্দর। কিন্তু এই সুন্দর সম্ভাবনাময় জীবনগুলো আরও সুন্দরতর হয়ে উঠতে পারে যদি নবদম্পতি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকেন। বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে উভয়ের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিটাও থাকা চাই। আসুন জেনে নিন বর-কনের পূর্ব প্রস্তুতি-
বর-কনের দাম্পত্য জীবন সুখী করার জন্য নিজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
মানসিক প্রস্তুতি
♦ বিয়ে জীবনের লম্বা অধ্যায়। তাই বিয়ের পূর্বে ও পরে একে অন্যকে ভালোভাবে জেনে ও বুঝে নিতে হবে।
♦ প্রতিটি পরিবারের আলাদা নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার। এসব ক্ষেত্রে দুজনকেই সহযোগিতাপরায়ণ হতে হবে।
♦ লাভ বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ উভয় ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েকে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।
♦ বিয়ে মানেই বিরাট অর্থের প্রয়োজন এমনটা নয়। আপনি যতটা আয় করছেন, তার মধ্যেই যদি নিজে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে সঙ্গীকে সুখী করাও অবাস্তব হবে না।
♦ সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই নিজের স্বাধীনতা কমে যায়, এমন ধারণাও ভুল। আপনি যখন আপনার সঙ্গীর ভুল-ত্রুটিসহ মেনে নিয়েছেন, তখন তার সমস্যাগুলোর সমাধান করার দায়িত্বটাও আপনার। তাই সংসার নিয়ে হতাশামুক্ত থাকুন, নিজেদের মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।
♦ হয়ত আপনাকে তার মত হয়ে যেতে হবে নচেৎ তাকে আপনার মত করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ভেবে নিতে হবে আপনারা একজন অপরজনের পরিপূরক।
শারীরিক প্রস্তুতি
মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর শারীরিক প্রস্তুতিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
♦ মেডিকেল চেকআপ
বিয়ের আগে উভয়ের বয়স বেশি না কম, শারীরিক উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায়। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা, হেপাটাইটিসসহ সব টিকা দেওয়া আছে কি না এসব বিষয়েও জানা যায়। এছাড়া তাদের কেউ ধূমপান বা অন্য কোনো নেশায় আসক্ত কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায়। তাই বিয়ে করার আগে ছেলে-মেয়ে উভয়কে লজ্জা পরিহার করে সুখী জীবনের উদ্দেশ্যে মেডিকেল চেকআপ করানো উচিত।
♥ রক্তের গ্রুপ যাচাই
যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। কিন্তু স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজিটিভ হয়, তাহলে স্ত্রীকেও পজিটিভ রক্তের গ্রুপের একজন হতে হবে। কোনোভাবেই স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়া চলবে না। অর্থাৎ একজন নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের নারী কেবলই একজন নেগেটিভ রক্তের গ্রুপের পুরুষকে বিয়ে করাই নিরাপদ।
♥ রক্ত সম্পর্কে আত্মীয়ের মাঝে বিয়ে নয়
মায়ের শরীরে ডেলিভারির সময় যে রক্ত প্রবেশ করবে, তা ডেলিভারি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে Rh এন্টিবডি তৈরী করবে। এবং সমস্যা হবে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে। যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবে, তখন যদি তার ভ্রূণের রক্তের গ্রুপ পুনরায় পজিটিভ হয় তাহলে মায়ের শরীরে আগে যেই Rh এন্টিবডি তৈরী হয়েছিলো সেটা প্লাসেন্টা barrier ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন ভ্রূণের শরীরে Rh এন্টিবডি ঢুকবে তখন, ভ্রূণ এর RBC এর সাথে জমাট বেঁধে যাবে, যার ফলে লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙে যাবে। একে মেডিকেল টার্ম এ “Rh incompatibility” বলে। অর্থাৎ শিশুটি মারা যাবে। অর্থাৎ পজিটিভ রক্তের গ্রুপের পুরুষ নেগেটিভ গ্রুপের মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁদের একটিই সন্তান থাকার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে প্রথম সন্তানটি জন্ম না নিলে পরবর্তীতে তারা নিঃসন্তান থেকে যাবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত বেশি।
♥ বয়স
আরেকটি বিষয় মনে রাখলেই নয়, বিয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু বয়সটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্ব হতে পারে। আবার মেয়েদের বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়াসহ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেয়েদের ৩০ বছরের পর প্রথম বাচ্চা নেওয়াটা খুবই ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। তবে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হলেও বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ খুব ঝুঁকির ব্যাপার। তাই বিয়ের জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়ের বয়স বিবেচনা করাটা খুব জরুরি।
♥ বংশগত কোন রোগ আছে কিনা?
আমাদের শরীরে বংশগত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে থ্যালাসেমিয়া, মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশিতে এক ধরনের দুর্বলতা), নার্ভের বিশেষ কয়েকটি অসুখ, অ্যাপিলেটিক ডিজঅর্ডার (মৃগী রোগ), মানসিক অসুস্থতা যেমন সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার, যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক), ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ওবেসিটি, অ্যাজমা, গ্লুকোমা ইত্যাদি। এসব রোগের যাবতীয় পরীক্ষা বিয়ের আগেই করে নেওয়া উচিত। এর যে কোনো রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করে নেওয়া ভালো। তাছাড়া শারীরিক আরও সমস্যা থাকতে পারে। sexually transmitted disease রোগ এসবের চিকিৎসা বিয়ের আগেই করে নেওয়া প্রয়োজন। তাই বিয়ের আগে সুস্থ থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবারই করা দরকার।
♥ বিয়ের আগে এক্সারসাইজ
শুরুতেই খুব বেশি আর খুব কঠিন এক্সারসাইজে যাবেন না। গায়ে ব্যথা ছাড়াও ছোটখাটো চোট-আঘাতও আসতে পারে। তাই অল্প অল্প করে এক্সারসাইজের সময় আর তীব্রতা বাড়ান। পুরুষ কিংবা মহিলা, শুরু করতে পারেন বডি ওয়েট এক্সারসাইজ দিয়ে। স্কোয়াট, লাঞ্জেস, পুশ আপ, হরাইজন্টাল পুল আপ এসব এক্সারসাইজ কৌশল শিখে নিন। দুই সপ্তাহ আগে থেকেই নিয়ম মেনে জোরে হাঁটুন বা দৌঁড়ান।
বিয়ের জন্য আপনি প্রস্তুত কি না! সুন্দর এক জীবনের জন্য একটু তো ভাবতে হবেই!
লেখকঃ বিএসসি ইন নার্সিং (চবি) এম পি এইচ ইন নিউট্রিশন (ইবি)
এমবি//