ঢাকা, সোমবার   ২৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

নিরাপদ খাদ্যাভ্যাসে সুস্থ শিশু 

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন 

প্রকাশিত : ১৫:১১, ৮ নভেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সুনাগরিক প্রয়োজন। সুনাগরিক হতে হলে স্বাস্থ্যবান হতে হবে, সুস্থ চিন্তা করতে হবে এবং সুকর্ম করতে হবে। স্বাস্থ্যবান থাকা বা সুস্থ চিন্তা এসবের জন্য মূলত অবদান থাকে খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা ও পরিবেশের। 

একটি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের সময় হলো ৫ বছর বয়স পর্যন্ত। এই সময়ে যদি শিশুদের সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ/সুষম খাবার না দেয়া হয়, তবে পুষ্টি ঘাটতির ফলে কম মেধা নিয়ে তারা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে আমাদের পরিবার বা জাতীয় পর্যায়ে তার অবদান রাখার ক্ষমতা কমে যায়। অর্থাৎ সুনাগরিক হতে সুষম খাবার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। 

এক্ষেত্রে খাবার হওয়া চাই নিরাপদ। খাবারের জোগান দিচ্ছে আমাদের কৃষক এবং কৃষি। এজন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানসম্পন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

একটি রিপোর্ট বলছে, দেশে মহিলাদের মধ্যে জিংক স্বল্পতা ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৫ বছরের নিচের শিশুদের জিংক স্বল্পতা ৪৪ শতাংশ। এভাবে সকল প্রকার ভিটামিনেরই ঘাটতির চিত্র আছে। খর্বকায় শিশুর হার এখনও ৩১ শতাংশ এবং কৃশকায় শিশুর হারও ১৪ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে তীব্র অপুষ্টির শিকার হলে বয়সের তুলনায় শিশুরা খর্বকায় হয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে ‘মায়ের পুষ্টি শিশুর তুষ্টি’। অর্থাৎ সুস্থ ও স্বাস্থ্যবতী মা-ই কেবলমাত্র স্বাস্থ্যবান সন্তানের জন্ম দিতে পারে। পুষ্টিহীন মায়ের সন্তানের জন্মকালীন ওজন কম এবং অসুস্থ, হাবাগোবা, রুগ্ণ হয়ে জন্মায়। পরে নানা রোগে ভোগে। 

প্রসূতি মায়েদেরও নানা রকম জটিলতা দেখা যায়। গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী অবস্থায় মায়েদের খাবারের প্রয়োজন সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশি থাকে। এ সময় প্রয়োজন অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন, জিংকসমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। অনেক সময় পুষ্টি সম্পর্কে ধারণা না থাকার ফলে পুষ্টির অভাবে নিজের চাহিদার ঘাটতির সঙ্গে সন্তানও পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের ঘাটতি নিয়ে জন্মায়। মাকে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি, ফল, টকজাতীয় ফল, পানি ও পানিজাতীয় খাবার প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হয়।

আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। শিশুর জন্য জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই যথেষ্ট এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার দিতে হবে। সেই সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে খাদ্য পরিবেশন করা হয়। 

অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু, মা ও বৃদ্ধরা পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক ও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর মধ্যে দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি না ঘটার কারণে আত্মকেন্দ্রিকতা, অবসাদ, ব্যক্তিত্বহীনতা দেখা যায় এবং মেধাশক্তি বিকশিত হতে পারে না। ফলে এসব  ছেলে-মেয়ে অলস ও উদাসীন, পরনির্ভর নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে। যদি শিশুদের সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার না দেয়া হয় তবে পুষ্টি ঘাটতির ফলে কম মেধা নিয়ে তারা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে আমাদের পরিবার বা জাতীয় পর্যায়ে তার অবদান কমে যায়। এই ঘাটতি কিন্তু আজও আমরা বয়ে চলেছি।

এ  থেকে উত্তোরণের একমাত্র উপায় হলো জাতিকে পুষ্টি শিক্ষাসহ সুশিক্ষিত করা। আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদনের সাথে নিয়োজিত শ্রম শক্তি এখনও ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ৪০ শতাংশ জনশক্তি, গ্রামীণ মহিলা এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের যদি সঠিকভাবে পুষ্টি শিক্ষা দেয়া যায়, তবে আমাদের দেশের জনগণের পুষ্টিহীনতা দূর হতে বেশি সময় লাগবে না।
লেখক : নার্স ও পুষ্টিবিদ, বিএসসি ইন নার্সিং (চবি) এমপিএইচ ইন নিউট্রিশন (ইবি)। 
এআই/ এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি