ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

করোনায় মনোস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে জরুরি পরামর্শ (ভিডিওসহ)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৩:৫০, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

করোনার এই সময়টাতে আমরা অনেকেই মনের সংকটে আছি। কারণ মনের ভেতরে একটু ভয়, এক ধরনের ডিপ্রেশন, নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এরকম সমস্যায় অবশ্যই মনোবল ধরে রাখা জরুরি। এই সময় কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখবো, মনের যত্ন নিবো সেই বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. মেহজাবিন হক। 

একুশে টেলিভিশন: এই মহামারীর সময় মনের স্বাস্থ্য কেন ঠিক রাখা দরকার?

ডা. মেহজাবিন হক: দীর্ঘ ৯ মাস যাবত আমরা এই মহামারী পরিস্থিতির কারণে একটা ভিন্ন ধরনের জগতে বসবাস করছি। যখন মহামারীটা শুরু হলো, এটার জন্য কিন্তু আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। অর্থাৎ আমাদের মন-মনসিকতা, আমাদের ব্রেন কিন্তু এই বিষয়টাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কারণ এটা একেবারেই নতুন একটা বিষয়। এরকম কোনও ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়নি। এটার সঙ্গে যে বড় ব্যাপারটা ছিল, সেটা হলো বিরাট ভয়, আতঙ্ক। কারণ কি করতে হবে সেটা আমরা জানতাম না। এই বিষয়গুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রচণ্ডরকম প্রভাব ফেলে। এটাকে প্রথম দিকে আমরা বলতাম কাল্টিটিভ ট্রমা, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর সবাই এই ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এই ট্রমাতে আক্রান্ত হচ্ছে। 

আমরা যখন নানারকম নেতিবাচক খবরগুলো দেখছি, আশেপাশের লোকজন মারা যাচ্ছে, পরিচিতজন মারা যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। তারা এই অসুস্থতার কারণে নানা কষ্ট ভোগ করে সুস্থ হচ্ছে। এই প্রতিটি বিষয় কিন্তু আমাদেরকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। এছাড়া এটার সঙ্গে আমাদের জীবনের ঘনিষ্ঠ কিছু বিষয় জড়িয়ে আছে। যেমন- আমাদের স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ হয়ে গেল, অফিসগুলোতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, অনলাইনে ক্লাস করা শুরু করছি। বাচ্চাদের বাইরে খেলতে যাওয়া, বাইরে পরিচিতজনদের সঙ্গে মিশতে পারা- এগুলো তো বন্ধ হয়ে গেল। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, সেখানে একজন আরেকজনের দেখা সাক্ষাৎ করা, মতবিনিময় করা, ভালোলাগার জায়গাগুলো তৈরি, তাদের শেয়ারিং-কেয়ারিং, তাদের রিলেশন্স, কম্পিটিশন, কো-অপারেশন সবকিছুই কিন্তু বন্ধ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু কাজ করে, অনেকে দিন আনে দিন খায়। সেখানে কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে গেলো, ব্যবসা-বাণিজ্যগুলো ঠিক মতো চলছিল না, আয়-রোজগার কমে গেল- এই বিষয়গুলো তাদের সংসারে প্রচণ্ড রকম চাপ সৃষ্টি করলো। 

ভবিষ্যতের চিন্তায় তারা আরও বেশি উৎকণ্ঠায় পড়ে গেল, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা রকম শঙ্কায় পড়ে গেল। এই নানা ধরনের জটিলতা মানুষের মধ্যে এক ধরনের এ্যানজাইটি টেনশন কাজ করছে এবং যখন দিনের পর দিন একইভাবে চলছে তখন কিন্তু তারা বিষণ্নতায় পড়ে যাচ্ছে। তারা ভাবছিল যে, এটা কিছুদিন থাকবে তারপর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। যখন দেখা যাচ্ছে- এটা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, তখন তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। 

বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে ছোট ছোট ঘরের মধ্যে একসঙ্গে পরিবারের সকল সদস্যরা থাকছে এবং এরা বাইরে যেতে পারছে না, তখন প্রত্যেকের মেজাজ খারাপ হচ্ছে, পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখেছি- এই দীর্ঘসময়ের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

একুশে টেলিভিশন: এই যে পরিবারের সমস্যা, বাচ্চাদের সমস্যা, তরুণদের সমস্যা, গৃহিণীদের সমস্যা- এগুলো উত্তরণের উপায় কী?

ডা. মেহজাবিন হক: আগে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যে পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই না কেন সেখানে কিন্তু আমদের মনের শান্তভাবটা ধরে রাখা সবচেয়ে জরুরি। কারণ আমরা যদি নিজেদেরকে শান্ত রাখতে পারি, রিল্যাক্স রাখতে পারি তাহলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
 
করোনা মহামারী এসেছে, একদিন এটা চলেঅ যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরে যাবে। আমাদের কাজ হচ্ছে- এই সময়টার মধ্যে নিজের মনের উপর, নিজের অনুভূতির উপর, নিজের চিন্তার উপর এবং নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণটা প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আসবে এটা স্বাভাবিক, আমাদের মধ্যে রাগ তৈরি হবে এটাও স্বাভাবিক কিন্তু সেটার প্রকাশ যেন নেতিবাচকভাবে না হয়ে থাকে। 

অন্যের ক্ষতিসাধনের কারণ এবং নিজের ক্ষতি করে যেন না হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্য সম্মতভাবে আমরা যেন রাগটা প্রকাশ করতে পারি। যখন একজন মানুষ তার চিন্তা, তার আবেগ, তার অনুভূতি এবং তার আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে, তখন দেখা যায় পরিবেশের উপরও তার নিয়ন্ত্রণ আসে। কারণ তখন তার লজিক, থিঙ্কিং, যৌক্তিক চিন্তা করার যে ক্ষমতা, সেগুলো ভালোভাবে কার্যকর হয় এবং তখন কোনও মুহূর্তে কি করতে হবে সেই ব্যাপারে তারা সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারে।

তা না হলে তারা আবেগীয়ভাবে এতোটা বেশি উদ্বেলিত হয়ে যাবে সেটাকে যখন সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তখনই কিন্তু অঘটনগুলো ঘটে থাকে।

একুশে টেলিভিশন: ইউএনডিপির কোভিড-১৯ ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট যে উদ্যোগটা নিয়েছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মানুষের মধ্যে মনোস্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য- সে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

ডা. মেহজাবিন হক: এটা কিন্তু সত্য কথা যে কোভিডের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার সামনে উপস্থিত হয়েছে। এর আগে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বললেও সেটার দিকে নজর কিন্তু তেমন একটা ছিল না। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে- কোভিড-১৯ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর যে আঘাত হেনেছে এটার কারণে এর প্রয়োজনীয়তা একেবারে চোখের সামনে চলে এসেছে। যে কারণে অনেক জায়গা থেকে, অনেক অর্গানাইজেশন, ইউনাইটেড ন্যাশন্স থেকে এরকম নানা প্রজেক্ট যেখানে মানুষের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং এই প্রজেক্টটাকেও আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি যে, সবার কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাটা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছি। কারণ এবারের যে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ছিল তার প্রতিবাদ্য বিষয় ছিল- সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য, সব জায়গায়, সবখানে, সব বয়সীরাই যেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাটা পেতে পারে। 

সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য এবং কোভিড পরিস্থিতিতে এই যে কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেটা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো। মানুষের সচেতনতা তৈরি করা, আমাদের রিসোর্সগুলোকে তৈরি করা, সেগুলো অর্গানাইজ করা, বিভিন্ন রকম ওয়ার্কশপ করা এবং মানুষকে সেবা পৌঁছে দেওয়া। এই কাজগুলো খুবই জরুরি এবং এই কাজগুলো হচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন: আমাদের সম্মুখযোদ্ধারা তো অনেক ঝুঁকি নিয়ে, মনের উপর অনেক বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

ডা. মেহজাবিন হক: প্রথমেই তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আমরা তাদের পাশে আছি। অবশ্যই চিন্তায়, মননে তাদের পাশে আছি, তাদেরকে সাপোর্ট করছি। কিন্তু তারা যে কাজটা করছেন সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং তারাও তো মানুষ, তাদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে। এটার জন্যই তাদেরকেও আমরা অ্যাড্রেস করছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে একটা কমিটি গঠন করেছে। সেখান থেকে আমরা তাদেরকে কিভাবে সাহায্য করা যায় সেই জায়গাগুলো দেখছি। অর্থাৎ তারা কিভাবে নিজের যত্নটা নিবেন, যার ফলে তাদের মনের দিকটা ভালো রাখাতে পারেন। পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা, শখের জায়গাগুলো, নেগেটিভ নিউজগুলো থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

তারা যদি খুব বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়ে যান, নানা রকম ভয় আসছে- সেক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক সময় শারীরিকভাবে এখানে উপস্থিত থাকি কিন্তু মানসিকভাবে অন্য কোথাও চলে যাই। কিভাবে নেগেটিভ নিউজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে ভালোলাগার জায়গাগুলো চর্চা করা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাগুলো তাদের বন্ধুদের-সহকর্মিদের সঙ্গে শেয়ার করা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের বিষয়ে সহমর্মিতা দেখানো, তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করা- এগুলো সবই একটা মানুষকে ভাল রাখতে সাহায্য করবে। 

অর্থাৎ শুধু অর্ডার দিয়ে নয়, ইন্সট্রাকশন দিয়ে নয়- মমত্ববোধ নিয়ে, সহমর্মিতার সঙ্গে যদি বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করা হয়, তখন কিন্তু খুব সহজে একজন মানুষ তার সমস্যাগুলো থেকে উৎরে যেতে পারে।

একুশে টেলিভিশন: করোনাত্তর সময়ে কিভাবে আমাদের মনোস্বাস্থ্যকে সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখবো?

ডা. মেহজাবিন হক: এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। এখন যেমন আমাদের অসুবিধাগুলো হচ্ছে, আমরা নিজেরা চেষ্টা করে ভালো থাকছি এবং প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছি। অর্থাৎ মনোসেবা গ্রহণ করছি, কাউন্সিলিং নিচ্ছি, প্রয়োজনে সাইকো থেরাপি নিয়ে ভাল থাকছি। একইভাবে যখন এই পরিস্থিতি কেটে যাবে, আবার যখন পরিচিত স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যাব, ততোদিনে কিন্তু অনেকগুলো সময় পার হয়ে যাবে। 

মহামারীকালীন কি করতে হবে তা নিয়ে যখন একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, কি করেবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না, অ্যাডজাস্ট করার জন্য আমাদের কষ্ট হয়েছে। ঠিক তেমনি করোনা পরবর্তী পরিবেশের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করাটাও একটু কষ্টসাধ্য হবে বৈকি। কিন্তু এই অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়ে যাবার পর আবার যখন নরম্যাল জীবন আসবে, স্কুল-কলেজ খুলে যাবে, পুরোদমে অফিস ও সমস্ত কিছু রানিং করা শুরু করবে তখনও কিন্তু সবকিছুর সঙ্গে মানুষের একটা অ্যাডজাস্টমেন্টের একটা ব্যাপার থাকবে। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তখনও কিন্তু আমরা কিছু কিছু অসুবিধায় পড়তে পারি, তাই ধীরে ধীরে নিজেকে ওই পরিবেশের জন্য তৈরি করা, যাতে একবারে সবকিছু ঘাড়ের উপর এসে না পড়ে।

বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা- যারা এখন স্কুলে যাচ্ছে না, যাদের রুটিনটা নষ্ট হয়ে গেছে। দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে, সারাদিন বাসায় সময় কাটাচ্ছে। আবার যখন নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে তখন এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে, যা মানিয়ে নিতে হয়তো কিছুটা সমস্যা হবে। বড়দের তুলনায় ছোটদের মধ্যে ঘাটতিটা বেশি। এতদিন তারা চর্চা করতে পারেনি। সে কারণে তাদের আবেগীয় বিকাশ, সামাজিকতায় কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কেউ কেউ খুব পিছিয়েও যেতে পারে।

একুশে টেলিভিশন: এই সময়টাতে নারী ও তরুণদের মনোস্বাস্থ্য কিভাবে ঠিক থাকবে?

ডা. মেহজাবিন হক: সব বয়সেরই কিছু সংকট আছে। নারীদের ক্ষেত্রে সংকটটা অনেক বেশি। কারণ পুরো সংসারের দায়িত্ব তাদের। সংসারটা চালানো, পারস্পরিক আদান-প্রদান যেন ঠিকভাবে হয়, তাদের খাওয়া, পরা- এই সব কিছুর চিন্তা-ভাবনার দায়িত্ব তাদের উপর। এখনও কিন্তু অনেক পরিবারে হেল্পিং-হ্যান্ড নেই। আগে হয়তো তাদের ছিল। এটা কিন্তু ওই পরিবারের গৃহিণীর জন্য বাড়তি চাপ। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের হেলা করা উচিত নয়। 

আমার পরামর্শ হলো- এই কাজের মধ্যে যেন তিনি ১০ মিনিট অথবা ৫ মিনিট নিজের জন্য আলাদা করে ব্যয় করেন। সেই সময়টা গান শুনে হোক, নিজের ভালোলাগা কিছু করে হোক, একটু শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম করে হোক কাটাবেন। এমন কিছু করবেন যেটা নিজের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করবে।

একুশে টেলিভিশন: সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত যে করোনার খারাপ খবরগুলো পাই, এখান থেকে উত্তরণের উপায় কি? এগুলো আমাদের মনোস্বাস্থ্যের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলছে?

ডা. মেহজাবিন হক:  সব সময়ে বলে আসছি যে- আমরা সারাক্ষণ যদি খবরগুলো দেখতে থাকি, তাহলে মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা বিরাজ করবে। ফিজিক্যালি আমি আমার শারীরিক বৃত্তি, হার্টবিট বাড়িয়ে দিচ্ছি, ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যাবে এবং অস্থিরতা বেড়ে যাবে। এগুলো পক্ষান্তরে আমাদের টেনশন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করবে। এ কারণে বলা হয়- একটা রুটিনমাফিক জীবন যাপন করা হোক। প্রাত্যহিক জীবনে যে কাজগুলো প্রয়োজন সেগুলোতে ফোকাস করা হোক এবং একটা নির্দিষ্ট সময় সে শুধুমাত্র নিউজ দেখবে, সারাক্ষণ চেক করবে না।

একুশে টেলিভিশন: এই শীতে তো আবারও অনেক মানুষ পজিটিভ হচ্ছেন, তারা কিভাবে মনোস্বাস্থ্য ঠিক রাখবেন?

ডা. মেহজাবিন হক: প্রথমে যে কথাটা আসছে, পজিটিভ হলে আমি মরে যাব- এই মানসিক ভাবনাটা। প্রথমে মনে করিয়ে দেয়া যে, ঠিক আছে আমার করোনা হয়েছে। অনেকেরই হয়েছে, বেশির ভাগই ভালো হয়ে গেছে। ফোকাসটা ইতিবাচক দিকে থাকবে, নেতিবাচক দিকে নয়। যদি ইনফর্মেশন নিতেই হয় তবে পজিটিভগুলো নিবে। কতজন মারা গেছে নয়, কতজন আক্রান্ত ছিল তার মধ্যে কতজন সুস্থ হয়েছেন। এই বিষয়গুলোতে ফোকাস করতে হবে। যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের কিছু ভিডিও রয়েছে, চাইলে সেগুলো দেখতে পারেন। যে সে কিভাবে নিজেকে ভালো রেখেছে, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে দূরে সরে থাকার জন্য সেগুলো করা যেতে পারে। একা থাকতে হচ্ছে, পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছি না এই সময়টা একটা বোরিং সময় কাটাবো, কান্নাকাটি করে কাটাবো, নাকি আমি কোনও ক্রিয়েটিভ কাজ করে কাটাবো- এই চয়েজটা নিজেকেই নিতে হবে।

সবার জন্য একটাই কথা- নিজের যত্নের উপর কোনও কথা নয়। ভালো থাকতে হবে এবং ভালো থাকার জন্য নিজের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন। নিজের যত্ন নেয়ার জন্য নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের মধ্যে ভালো জিনিসের চর্চা করুন। যদি নিজের মধ্যে কোথাও কোনও গ্লানি বা ভুল ভ্রান্তি চোখে পড়ে, নিজেকে ক্ষমা করে দিয়ে সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। 

আপনি ভবিষ্যতে কি হবেন? কালকে কি হবেন? সেটা একমাত্র নিজের হাতের মধ্যে রয়েছে। তাই সেদিকে যাতে আপনি যেতে পারেন সেই চেষ্টাটা করুন। তার জন্য মনের যত্ন নেওয়া, নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরি।

ভিডিও-

এএইচ/এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি