ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হৃদরোগে কম বয়সী আক্রান্ত বেড়েছে বহুগুণে

আজাদুল আদনান

প্রকাশিত : ১৭:১০, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

দীর্ঘদিন ধরে বুকের ব্যথা ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন সুজন হাওলাদার। অসংখ্যবার চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়েছেন, কিন্তু অতিরিক্ত ধূমপান আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচারে তা বেড়েছে বহুগুণে। তাই, এসেছেন রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। 

ছোটবেলা থেকেই ধূমপান করে আসছেন। ফলে রীতিমত নেশায় পরিণত হওয়ায় চিকিৎসকরা বার বার সতর্ক করলেও ছাড়তে চেয়েও পারেননি ৩৭ বছর বয়সী সুজন হাওলাদার। বুকের ব্যথা বাড়লে কয়েকদিন বিরতি দিলেও কোনওভাবেই পুরোপুরি নিস্তার মিলছে না তার। এছাড়াও বংশগত কারণে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রায় অল্প বয়সে জীবন হারানোর শঙ্কায় আছেন সুজন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সময় মনে করা হত- হৃদরোগটা বুঝি কেবল প্রবীণ বয়সেই হয়ে থাকে। পারতপক্ষে তা নয়। অধিক সময় বসে থাকা, টিভির পাশে অথবা ল্যাপটপে অথবা মোবাইলে আসক্ত, শারীরিক ব্যায়াম না করা, ধূমপান, ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাসের কারণে আগের তুলনায় কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। 

এছাড়া অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যেই হাইপার কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা দেখা যায়। এই রোগটির হেটারোজাইগাস ফর্মগুলোর সম্ভাব্যতা প্রতি ৫শ’ জনের মধ্যে একজন। যা শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণেই নয়, বংশগত কারণেও শরীরে বেশি হয়ে থাকে। এ অবস্থাকে পারিবারিক হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া বলে। বাবা কিংবা মা অথবা উভয় থেকেই এ রোগ জিনগতভাবে হয়ে থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক দুইভাবে হয়ে থাকে। পরিবারিকভাবে বাবার থাকলে ছেলে-মেয়ের হয়। এছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেও রোগটি হয়ে থাকে। যদি কারও ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন ও ফাস্টফুডে আশক্তি থেকে থাকে, তাদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়। বর্তমান পৃথিবীতে যত লোক করোনার মতো সংক্রামক রোগে মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় অসংক্রামক রোগে। কর্মকক্ষমতা হারায় তারও বেশি সংখ্যক। 

জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিটউ ও হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগ। প্রধানত হৃদরোগ দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি জন্মগত অন্যটি জন্মের পরে পারিপার্শ্বিকগত। 

জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে হার্টে বিভিন্ন ধরনের ছিদ্র এবং হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিকতা। এটি জন্মগতভাবে আসে এবং একজনের থেকে অন্যজনে ছড়ায় না। আর যেটা নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি ভয় পাই তা হলো- হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ। যাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এটি এতই মহামারি, ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ যে, হৃদরোগে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসার আগেই প্রাণ হারান।’ 

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, ‘যাদের ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, রক্তের কোলেস্টেরেলে চর্বির পরিমাণ বেশি, অতিরিক্ত ওজন, কায়িক পরিশ্রম না করা, ধুমপান বা তামাক সেবন করা, স্ট্রেসফুল জীবনযাপন এছাড়া যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে তারাও কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘পুরুষ মানুষ নারীর চেয়ে বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাই, পুরুষ হওয়াটাও হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি। এসব কিছু যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি অর্থাৎ যার ডায়াবেটিস আছে তারা যদি একজন ডাক্তারের পরামর্শে থেকে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করে, ওষুধ খেয়ে ও ইনসুলিন দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখে, এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। একইভাবে প্রেসারের রোগীরাও ট্রাই করতে পারেন। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনে যদি আমরা কায়িক পরিশ্রম করি, ফাস্টফুড না খাই, বিশেষ করে আমাদের খাবারে শর্করার পরিমাণ যদি কম থাকে তাহলে এটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।’ 

এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। অনেকেই বাল্যকাল থেকেই ধূমপান করে আসছে, যা বাবা-মা, দেশ, সমাজ ও ওই ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। আমাদের কাছে এখন যে সমস্ত রোগীরা আসছেন, তাদের অধিকাংশই অল্প বয়সী। আগে চল্লিশোর্ধ্ব কিংবা ৫০ বছরের বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন ২০ থেকে ৩০ বছরের যুবককেও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে দেখছি। যাদের অধিকাংশই ধূমপান করেন।’

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, ‘পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ লোকটি যদি ধূমপান করেন, তাহলে তিনি তার সন্তানদের তা থেকে বিরত রাখতে পারবেন না। বড়দের দেখে সেও এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আমাদের এখানে হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ৫ শতাংশ রোগী। প্রতিদিন যদি দুইশ রোগী ভর্তি হন তাহলে ১০ জন রোগী মারা যান শুধু হৃদরোগজনিত কারণে। আর শুধু এ হাসপাতালেই যদি দিনে দশজন রোগী মারা যায়, তাহলে পুরো বাংলাদেশে কত রোগী মারা যায় তা এখান থেকে স্পষ্ট।’

এজন্য যাদের রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি, যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস আছে, অর্থাৎ যাদের বাবা-মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, হার্টে রিং ও বাইপাস পরানো তাদের সন্তানদের সবসময় চেকআপের মধ্যে থাকা দরকার। তাদের কোলেস্টোরেল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কী-না, তা নিয়মিত চেক করতে হবে বলেও জোর দেন এই চিকিৎসক। 

এআই/এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি