ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কিডনি জটিলতায় মৃত্যু প্রায় তিনগুণ বেড়েছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৮, ১১ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে জানা যাচ্ছে কিডনি জটিলতায় দেশে ২০১৯ সালে যত মানুষ মারা গেছেন, তার প্রায় তিনগুণ মানুষ মারা গেছেন ২০২০ সালে। ১০ই মার্চ প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৭ জন।

আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে মারা গেছেন ১০ হাজার ৬২২ জন।

২০২০ সালে শীর্ষ মৃত্যুর কারণ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের নতুন জরিপে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সাড়ে ৮ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন ভাবে মারা গেছেন। মৃত্যুর প্রধান কারণের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হার্ট অ্যাটাক।

বিবিএসের মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ সালে জন্ম ও মৃত্যুসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক বিবিসিকে বলেছেন, ইতোমধ্যে ২০২০ সালে জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত প্রাক্কলিত তথ্য সমন্বয় করা হয়েছে। জুন মাসে পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আশরাফুল হক বলেছেন, এটি একটি খানা জরিপ, এবং তিন লাখের বেশি গৃহস্থালির ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২০ সালে সর্বমোট আট লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ জন মানুষ মানুষ মারা গেছেন। শীর্ষ মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ, ক্যান্সার, অ্যাজমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের সংগৃহীত তথ্যের সঙ্গে ২০১৯ সালের তথ্য তুলনা করেছেন তারা।

হার্ট অ্যাটাকে ২০২০ সালে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন, আনুমানিক এক লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন মারা গেছেন। ২০১৯ সালেও দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ ছিল হার্ট অ্যাটাক। ২০২০ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ব্রেইন স্ট্রোকে, এতে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন। ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৫০২ জন মানুষ ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন।

এছাড়া কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় তিনগুণ মানুষ মারা গেছেন। ২০২০ সালে কিডনি জটিলতায় মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৭ জন, যা ২০১৯ সালে ছিল ১০ হাজার ৬২২ জন।

কিডনি রোগে মৃত্যু বাড়ার কারণ কী

অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর নতুন পরিসংখ্যান নিয়ে বিবিএসের জরিপ নিয়ে এখনো কোন পর্যালোচনা করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, ২০২০ সালে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ এর সংযোগ কতটা রয়েছে সে বিষয়ে কোন বিশ্লেষণ এখনো করেনি অধিদপ্তর।

কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়ে যাওয়ার কারণে অধ্যাপক সুলতানা বলেছেন, "সাধারণভাবে ধারণা করা যায় যে কোভিডের কারণে হাসপাতালগুলোতে কিডনি সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা নিজেরাও সতর্কতার অংশ হিসেবে হাসপাতালে যাননি, সেটা মৃত্যুর হার বৃদ্ধির একটা কারণ হতে পারে।"

বাংলাদেশে ১০ই মার্চ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আট হাজার ৪৯৬ জন মানুষ।

অধ্যাপক সুলতানা বলেছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের বড় অংশটির বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং তাদের শরীরে কো-মরবিডিটি বা একাধিক প্রাণঘাতী ব্যাধির উপস্থিতি ছিল।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজীর সহযোগী অধ্যাপক হাসিনাতুল জান্নাত বলছেন মহামারির কারণে কিডনি চিকিৎসা বিশেষ করে যাদের নিয়মিত চেকআপ ও ফলোআপ করতে হয় তাদের চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়েছে, আর তার ফলেই হয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হবার কিছুদিন পরই লকডাউন শুরু হয়। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য অনেক হাসপাতালকেই কেবলমাত্র কোভিড-১৯ এর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়।

সহযোগী অধ্যাপক হাসিনাতুল জান্নাত বলেন, "যে কারণে যেসব কিডনি রোগীর নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হয়, তারা সেটা করতে পারেননি। এরপর যানবাহন বন্ধ ছিল, গণপরিবহন ছিল না, সতর্কতার জন্যও হাসপাতালে যান নাই অনেক রোগী।

এর ফলে যথাসময়ে চিকিৎসা পাননি হয়ত অনেক জটিল রোগী, যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে হয়।"

তবে এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি জানান, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ জন মানুষ সেবা নিতে আসেন।

বাংলাদেশে কত মানুষ কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন, সে সংক্রান্ত সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি