ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সঠিক জীবনদৃষ্টি ও সুস্থ জীবন-অভ্যাস হৃদরোগ নিরাময় করে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৬, ১৪ জুলাই ২০২১

আমরা জেনেছি, হৃদরোগের সাথে ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি ও ভুল জীবন-অভ্যাসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টির কারণে আমরা একদিকে যেমন জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছি, তেমনি সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না আমাদের চাওয়াকে। কী চাই, কতটুকু চাই—আমরা নিজেরাই জানি না। যত পাচ্ছি তত বাড়ছে আরো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। চাওয়াপাওয়ার এই দুর্বিষহ  চক্র অভিশপ্ত করে তুলছে আমাদের জীবনকে। ভেতরে সৃষ্টি হচ্ছে অশান্তি অস্থিরতা টেনশন। এ-ছাড়াও আছে একাকিত্ববোধ ও বিষণ্নতা, যা আমাদেরকে ক্রমশ ঠেলে দিচ্ছে আরো স্ট্রেসের দিকে।

আর এই টেনশন ও স্ট্রেস আমাদের মধ্যে ক্রমাগত জন্ম দিচ্ছে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সবসময় উদ্দীপ্ত থাকছে, স্ট্রেস হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটছে। ফলে হৃৎপিন্ডের করোনারি ধমনী সংকুচিত হচ্ছে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

আবার সঠিক জীবনদৃষ্টির অভাবে আমরা শারীরিক পরিশ্রমহীনতা ও  আরাম-আয়েশকে প্রাধান্য দিচ্ছি। সেইসাথে ফাস্ট ফুডসহ অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত তৈলাক্ত খাবারের কারণে শরীরে মেদ জমছে, বাড়ছে কোলেস্টেরলের মাত্রা। এই বাড়তি চর্বি একসময় করোনারি ধমনীতে ব্লকেজ তৈরি করছে। দেখা দিচ্ছে হৃদরোগ। শুরু থেকেই চিকিৎসকদের বিশ্বাস ছিল, ধমনী একবার ব্লক হতে শুরু করলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, এনজিওপ্লাস্টি কিংবা বাইপাস সার্জারি ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।

চিকিৎসকদের এ রক্ষণশীল চিন্তার বাইরে এসে ১৯৪০-৫০ দশকে এ বিষয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কার্ডিওলজিস্ট ডা. লেস্টার মরিসন এবং ডা. জন ডব্লিউ গফম্যান। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে এবং ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা অসাধারণ ফল পান। এরপর ১৯৬০-৭০ দশকে আরেকজন মার্কিন পুষ্টিবিদ ও দীর্ঘায়ু-গবেষক নাথান প্রিটিকিন হৃদরোগীদের নিয়ে একই ধরনের গবেষণা করেন। তিনি তার পরামর্শপ্রার্থীদের তেল ছাড়া নিরামিষ খাবার, পর্যাপ্ত ফল, সালাদ, শাকসবজি, ডাল, মটরশুঁটি, পূর্ণ শস্যদানা জাতীয় খাবার খেতে উদ্বুদ্ধ করেন। সেইসাথে গুরুত্ব দেন ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণে। তিনিও অসাধারণ ফল পান।

গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০-এর দশকে হৃদরোগ চিকিৎসা-গবেষণায় এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি ছাড়াই শুধু জীবনদৃষ্টি ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্লকেজ কমাতে এমনকি ধমনীকে পূর্বাবস্থায় (ব্লকেজমুক্ত) ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হন যুক্তরাষ্ট্রের দুজন প্রখ্যাত চিকিৎসক—ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ডিন অরনিশ এবং ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সার্জন ডা. কাল্ডওয়েল বি এসেলস্টাইন। তবে ডা. ডিন অরনিশের গবেষণাটি ছিল বিশদ, বহুমুখী এবং পূর্ণাঙ্গ।

লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া হয়েছে। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি