শিশুর মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিতে প্রয়োজন পরিবারের সহযোগিতা
প্রকাশিত : ১৬:৩৯, ৩ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৬:৪৫, ৩ আগস্ট ২০২১
একজন মা যখন প্রেগন্যান্ট হন, তখন বাড়ির সবাই তাকে ঘিরে রাখে। পরিবারের সবাই তখন মায়ের প্রতি অতিমাত্রায় যত্নশীল হয়ে পড়েন। প্রেগন্যান্সির সময় একজন মা কি খাবে, কি খাবে না- সেই দিকে সবার সজাগ দৃষ্টি থাকে। একজন গর্ভবতী এবং তার গর্ভের সন্তানের জন্য অবশ্যই তা ইতিবাচক।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- বেশিরভাগ সময়ই বাচ্চার জন্মের পর নবজাতককে নিয়েই সবাই অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই তুলনায় সদ্য প্রসূতি মায়ের দিকে আর তেমন খেয়াল থাকে না। অথচ এই সময়ই ল্যাকটেটিং মায়ের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন রয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ সময় প্রসূতি মায়ের যথাযথ যত্ন নেয়া হলে মা তার নবজাতকের সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারবেন, বিশেষ করে ল্যাকটেটিং মায়ের পুষ্টি চাহিদা পরিপূর্ণ হলে তবেই মা তার নবজাতক শিশুকে পরিমাণগত ও গুণগত মানে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন।
মায়ের বুকের দুধ নবজাতক শিশুর জন্য মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। মায়ের বুকের দুধ সহজ পাচ্য ও নিরাপদ পানীয় হওয়ায় নবজাতক তা সহজে হজম করতে পারে। মায়ের বুকের দুধের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নবজাতক শিশুর সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে ওঠার মূলমন্ত্র। তাই নবজাতক শিশুকে পরিমাণ মতো মায়ের বুকের দুধ দিতে হলে প্রতিটি প্রসূতি মা-কেই বাড়তি ক্যালোরিযুক্ত সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং সেইসাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে।
এইসময় প্রসূতি মায়ের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন, যেমন- ডিম, দুধ, মাছ, মুরগির মাংস, মুরগির স্যুপ, ডাল, বাদাম, টক দই, পরিমিত ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, ওট মিল, তাজা শাক-সবজি ও ফলমূল ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
এসব খাবার ছাড়াও আরো কিছু খাবার আছে, যেগুলো গ্যালাকটোগোজ নামে পরিচিত। এই সমস্ত খাবার বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। বাঙালিদের জন্য এরকম অনেক খাদ্য উপাদানই আছে, যা তারা খাদ্য তালিকায় ঢোকাতে পারে অনায়াসে। যেমন-
* মেথি
* কালোজিরা
* মৌরি
* পোস্ত
* লাউ
* গোটা জিরা
* রসুন
* তিল
* বার্লি
* সাবু দানা
এছাড়াও এরকম আরও অনেক কিছু খাদ্য উপাদান রয়েছে, যা মায়ের বুকের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে নবজাতক শিশুর বেড়ে ওঠা সাহায্য করতে পারে খুব সহজেই। এতে প্রসূতি মায়ের শরীর যাতে সুস্থ থাকে, সে রকম কিছু খাবার হলো-
* দুধ
* ডিম
* ডাল
* দেশি ঘি
* ডাবের পানি
* অঙ্কুরিত ছোলা
* গাজর
* অ্যালমন্ড
* পেঁপে
* ওট মিল ইত্যাদি।
#সদ্য প্রসূতি মা-দেরকে বলছি-
* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
* শিশু জন্মানোর প্রথম ৬ মাস ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তা করবেন না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।
* তিনবার ভারী খাবার খাওয়া ছাড়াও দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার অল্প অল্প করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
* অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়, শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে কিংবা হজমের সমস্যা হতে পারে।
* বাজারের প্যাকেটজাত খাবার, প্রসেস ফুড কিংবা ফ্রোজেন ফুড ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিৎ নয়।
* ব্রেস্ট ফিডিং কালীন কোনও রকম সফট ড্রিংকস, হার্ড ড্রিংকস গ্রহণ করা উচিত নয়।
# একজন দুগ্ধ দানকারী মায়ের প্রতি পরিবারের সদস্যদের করণীয়-
একটি শিশুকে আদর যত্নে লালন পালন করা শুধুমাত্র একজন মায়ের দায়িত্ব হতে পারে না। এই দায়িত্ব পরিবারের সকল সদস্যদের। ব্রেস্ট ফিডিং কালীন একজন মা শারীরিক ও মানসিকভাবে খুব দুর্বল থাকে। তাই বাড়ির সবাই মিলে প্রসূতি মায়ের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিতে হবে। তাকে হাসি খুশি আনন্দে রাখতে হবে। তবেই একজন সুস্থ মা সুস্থতার সাথে নবজাতক শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন।
একজন মা যদি পরিপূর্ণভাবে সুস্থ থাকেন, তবেই তিনি পরিমাণগত ও গুণগত দিক থেকে উন্নত মানের বুকের দুধ পান করাতে পারবেন শিশুকে, যেই পুষ্টি শিশুকে আজীবনের জন্য অনেক ধরণের শারীরিক অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে পারবে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করে তাদের প্রায় ২৫% ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ওবেসিটির ঝুঁকি কমে যায় ফর্মুলা দুধ পান করা শিশুদের তুলনায়। তাই নবজাতকের যথাযথ যত্ন পেতে আগে প্রসূতি মায়ের যত্ন নিতে হবে। মাকে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমানোর সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই একজন মা সুস্থ ও সবল শিশুর জীবন দান করতে পারবেন।
তাই আসুন, ২০২১ সালের এই করোনাকালে প্রসূতি মা ও নবজাতকের প্রতি সমান আন্তরিক ও যত্নশীল হই।
লেখক- ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।
এনএস//