ইয়োগা ।। আধুনিক মানুষের ব্যায়াম
প্রকাশিত : ১৬:০৩, ৪ আগস্ট ২০২১
খ্রিষ্টপূর্ব ২,৫০০ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪,৫০০ বছর পূর্বে সিন্ধুনদ তীরবর্তী অঞ্চল মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি জাতির বসবাস ছিল। তারা সেই সময় এক উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলেছিল, যা পরিচিত ছিল দ্রাবিড় সভ্যতা নামে। তারা ‘যোগসাধনার’ মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করতেন।
‘যোগ’ (Yoga) শব্দটি এসেছে সংযোগ থেকে। সাধকেরা বলেন, আমাদের আত্মা পরমাত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এত অশান্তি, অতৃপ্তি, এত হাহাকার। তাই পরমাত্মার সাথে আত্মার সংযোগ স্থাপনই ছিল যোগসাধনার উদ্দেশ্য। যোগসাধনার একটি ধাপ হচ্ছে ‘আসন’, যা সময়ের পথ ধরে আমাদের কাছে যোগব্যায়াম বা ইয়োগা নামে পরিচিতি পেয়েছে।
পাশ্চাত্যে একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সেরা হলো ইয়োগা। কারণ মানুষ শুধু দেহেরই অধিকারী নয়, তার রয়েছে একটি সংবেদনশীল মন। আর এই দেহ ও মন জন্মাবধি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মনের প্রভাব যেমন দেহে পড়ে তেমনি দেহের সুখ-অসুখও প্রভাবিত করে আমাদের মনকে। আর যোগব্যায়াম হচ্ছে একমাত্র ব্যায়াম, যেখানে দেহের সাথে সাথে আপনি আপনার মনকেও সম্পৃক্ত করতে পারেন। ইয়োগা মনের অস্থিরতা বিষণ্নতা দূর করে। এসব কারণে পাশ্চাত্যেও ইয়োগার জনপ্রিয়তা ও চর্চা দিন দিন বাড়ছে।
এ-ছাড়া যোগব্যায়াম বা ইয়োগার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এ ব্যায়ামে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পেশির জন্যে আলাদা আলাদা আসন রয়েছে। হৃৎপিন্ডের তথা সার্বিক সুস্থতার জন্যে যে-সকল ইয়োগা করা যেতে পারে : উজ্জীবন, অর্ধচন্দ্রাসন, ত্রিকোণাসন, বৃক্ষাসন, উৎকট আসন,
ভুজঙ্গাসন, অর্ধশলভাসন, শলভাসন, পবনমুক্তাসন, গোমুখাসন, উষ্ট্রাসন, পদ্মাসন, বঙ্গাসন, দন্ডাসন, বজ্রাসন, শবাসন।
যখন আপনি এই ব্যায়ামগুলো করবেন, তখন অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি হৃৎপিন্ড বিশেষভাবে উপকৃত হবে। করোনারি ধমনী প্রসারিত হবে, হৃৎপিন্ড রক্ত সরবরাহ বাড়বে। ব্যায়ামের সময় যদি আপনি অবলোকন করেন যে, করোনারি ধমনীতে যে ব্লকেজ ছিল তা দূর হয়ে গেছে, সেখানে প্রচুর রক্ত চলাচল করছে, তখন আপনি আপনার মনের শক্তিটাকেও সেখানে যোগ করলেন। দেহকে স্ট্রেসমুক্ত রাখার জন্যে, পেশির টেনশনজনিত অতিরিক্ত সংকোচন দূর করার জন্যে এবং একইসাথে মেরুদন্ড ও শরীরের সমস্ত অস্থিসন্ধিগুলোকে নমনীয় রাখার জন্যে এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে আশির দশকের শুরু থেকে দীর্ঘ চার দশকের নিরন্তর চর্চা ও গবেষণার ফল হচ্ছে ইয়োগা। এখানে বিভিন্ন আসনের সাথে দমের সম্পর্ককে শিথিল করা হয়েছে। ফলে আধুনিক মানুষের কাছে ইয়োগা দিন দিন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
শুরু করার আগে ইয়োগার নিয়মাবলি জেনে নিন—
আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
একেবারে খালি পেটে অথবা একেবারে ভরপেটে ইয়োগা করা উচিত নয়। হালকা কিছু খেয়ে ইয়োগা করা যায়। যেমন, ভিজানো কাঁচা ছোলা (২/৩ টেবিল চামচ) অথবা ২/৩ টুকরো কাঁচা পেঁপে।
খুব শক্ত বা নরম জায়গায় ইয়োগা করা উচিত নয়। মেঝেতে কার্পেট বা কাঁথা-কম্বল বিছিয়ে তার ওপর চাদর বিছিয়ে ইয়োগা করা উচিত।
পূর্ণ আহারের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পরে ইয়োগা করা উচিত।
আলো-বাতাসপূর্ণ খোলা জায়গায় কিংবা বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে ইয়োগা করা ভালো।
শীতের সময় ঘরের দরজা-জানালা খুলে বাতাস প্রবেশ করিয়ে নিয়ে ইয়োগা করুন। এতে ঘরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
ইয়োগা করার সময় কথা বলবেন না, গান-বাজনা শুনবেন না। বরং যে আসন করছেন সে আসনের উপকারিতার বিষয়গুলো কল্পনা করুন ও পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে অনুভব করুন।
প্রতিদিন ১০-১২টি আসন করতে পারেন।
ব্যায়ামের আগে পাঁচ মিনিট শবাসনে শিথিলায়ন করে মনকে স্থির করে ইয়োগা শুরু করুন। ব্যায়ামের শেষে ১০-১৫ মিনিট শবাসন করুন।
বিশেষভাবে লক্ষ করুন
কোনো আসন প্রথমবারেই সঠিক ভঙ্গিমায় জোর করে করার চেষ্টা করবেন না। সহজভাবে যতটুকু পারেন, ততটুকুই করুন। ধীরে ধীরে শরীর নমনীয় হয়ে উঠলে ভঙ্গিমাও ঠিক হয়ে যাবে। তা না হলে হঠাৎ করে শরীরের কোনো জায়গায় টান পড়তে পারে কিংবা মেরুদন্ডে ঘাড়ে কোমরে টান লেগে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রতিটি আসন করতে গিয়ে অতিরিক্ত জোর না খাটিয়ে বরং আপনি যতটুকু পারছেন ততটুকুই করুন।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া।
আরকে//