ঢাকা, বুধবার   ০৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ধূমপানের বদভ্যাস থেকে মুক্ত হোন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫২, ৬ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৫:৫৬, ৬ আগস্ট ২০২১

Ekushey Television Ltd.

ধূমপান বর্জনের জন্যে আপনি একটি কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। গত তিন দশকে অসংখ্য মানুষ এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করে এ বদভ্যাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছেন।

১. ধূমপান ছাড়ার জন্যে বাস্তবে কোনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন নেই। এজন্যে নিজের ইচ্ছা আর সিদ্ধান্তটাই যথেষ্ট।

২. অনেকেই সিগারেট ছাড়ার কথা ভেবে পকেটে সিগারেট রাখেন না। ভাবেন, পকেটে থাকলেই খেতে ইচ্ছে করবে। তারা বুঝতে পারেন না যে, সাথে না থাকলে ধূমপানের ইচ্ছেটা আরো বেশি হবে। পকেটে সিগারেট না রাখলে দেখা যাবে, আপনি অন্যের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নিচ্ছেন। তাই সিগারেট ও ম্যাচ পকেটেই রাখুন।

৩. আপনি শুধু খেয়াল রাখুন, কখন আপনি সিগারেট ধরান। ধূমপানের ইচ্ছা একেকজনের মধ্যে একেক সময়ে জাগে। কেউ টেলিফোনে আলাপ করতে করতে, কেউ কোনো আলোচনার শুরুতে, কেউ টিভি দেখার সময়, কেউ খাবারের পর পর, কেউ-বা আবার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সিগারেট ধরান। এ সময়গুলোতে তিনি অনেকটা নিজের অজান্তেই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন।

আজ থেকে আপনি শুধু অন্য কাজ করার সময় ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। যদি সিগারেট ধরিয়ে ফেলার পর খেয়াল হয় যে, আপনি সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি এখন সত্যি সত্যি ধূমপান করতে চান কিনা।

৪. যদি সত্যি সত্যিই সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হয়, তাহলে অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে আরাম করে বসুন। চুপচাপ বসে সিগারেট খান। মনোযোগ দিয়ে সিগারেট খান।

৫. সিগারেট খাওয়ার সময় শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। চোখ বন্ধ করে সিগারেটে টান দিয়ে অবলোকন করুন, সিগারেটের ধোঁয়া নাক দিয়ে ভেতরে যাচ্ছে। যেতে যেতে তা একটা গোখরা সাপের আকার ধারণ করছে। ফুসফুসে গিয়েই ফণা তুলে ছোবল মারছে। ঢেলে দিচ্ছে নিকোটিন নামের বিষ। বিষাক্ত সাপ ছোবল মারলে আপনার দেহ-মনে যে অনুভূতি সৃষ্টি   হতো, ক্ষণিকের জন্যে সে অনুভ‚তি সৃষ্টি করুন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে অনুভূতি না এলে সে অনুভূতির অভিনয় করুন। (মনে করুন, মঞ্চে নাটক করছেন। আপনাকে অভিনয় করতে হচ্ছে সাপে আক্রান্ত পথিকের   ভূমিকায়। সত্যি সত্যি সাপের ছোবলে আপনার যে মনোদৈহিক প্রতিক্রিয়া হতো, তা-ই করুন।) মনের চোখে আপনার নাক মুখ গলা হৃৎপিন্ড পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া অবলোকন করুন।

৬. পুনরায় সিগারেটে টান দিন। অবলোকন করুন, আরেকটা গোখরা সাপ ফুসফুসের দিকে যাচ্ছে। পূর্বের প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করুন।

৭. এ পদ্ধতিতে পুরো সিগারেট শেষ করুন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার যে অনুভূতি হলো তা একটি কাগজ বা ডায়েরিতে লিখে রাখুন।

৮. শুধু মনে রাখুন, অন্যের সামনে বা অন্য কোনো কাজ করতে করতে সিগারেট খাবেন না। যখন সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে নিরিবিলি বসে এ প্রক্রিয়ায় সিগারেট খাবেন।

এ প্রক্রিয়া কয়েকদিন অব্যাহত রাখলে অচিরেই দেখবেন, আপনার দেহ-মন নিজ থেকেই সিগারেট প্রত্যাখ্যান করছে। সিগারেটে টান দিতেই কাশি চলে আসছে। বিস্বাদ লাগছে। সিগারেটের ধোঁয়া গন্ধ লাগতে শুরু করেছে। এভাবে খুব সহজেই ধূমপানের বদভ্যাস থেকে আপনি পুরোপুরি মুক্ত হতে পারবেন।

 মেডিটেশন ।। ধূমপান বর্জন
১. নিয়মমাফিক মনের বাড়ির দরবার কক্ষে গিয়ে বসুন।

২. এবার ৩-২-১-০ গণনা করে হিলিং সেন্টারে প্রবেশ করুন। আরাম করে বসুন আপনার হিলিং চেয়ারে।

৩. এবার আপনার ধূমপান-সংক্রান্ত চিত্র পর্যালোচনা করুন। একে একে দেখুন, ধূমপানের ফলে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে আপনি কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দৈহিক ও মানসিক ক্ষতিপূরণের জন্যে যা করতে হবে, তা নিজেকে বলুন। ধূমপান কীভাবে আপনার হৃৎপিন্ডের ক্ষতি করছে, করোনারি ধমনীকে সংকুচিত করে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করছে তা অবলোকন করুন। ধূমপানের অন্যান্য শারীরিক ক্ষতিগুলোও দেখতে চেষ্টা করুন। পুরো বিষয়টি বার বার ভিজুয়ালাইজ করুন। (ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো মনকে পুরোপুরি বোঝাতে যে ধরনের কল্পনা বা ছবি ব্যবহার করা প্রয়োজন মনে করেন, সেভাবে নিজের ইচ্ছেমতো ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করুন।)

তারপর দেখুন, এসব জীবননাশী ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। ছেড়ে দেয়ার ফলে আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় নি। বরং আপনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নিকোটিনের প্রভাব কেটে যাওয়ায় আপনার প্রাণপ্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়েছে, চেহারায় এসেছে একটা আলাদা ঔজ্জ্বল্য। সিগারেটের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ করায় আপনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বাস্তবে এ ঘটনা ঘটলে যে   আনন্দ-অনুভ‚তি হতো, সবগুলো ইন্দ্রিয় দিয়ে আপনি তা অনুভব করুন। পূর্ণ আবেগ দিয়ে আপনার ধূমপানমুক্ত সত্তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন।

৪. নিয়মমাফিক হিলিং সেন্টার ও মনের বাড়ি থেকে স্বাভাবিক জাগ্রত অবস্থায় ফিরে আসুন।

একনাগাড়ে ৪০ দিন এ অনুশীলন করে যান। এ পর্যন্ত যারাই এটি অনুশীলন করেছেন—দেখা গেছে, ধূমপানের প্রতি তাদের আগ্রহ কয়েকদিনের মধ্যেই কমতে শুরু করেছে।

এ-ছাড়াও ধোঁয়া জাতীয় ড্রাগে কারো আসক্তি থাকলে তারাও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন। একই ছবি অবলোকন করুন। আপনার শরীরই একসময় ড্রাগ প্রত্যাখ্যান করবে।

লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া। 
 
আরকে//


 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি