শোকরগোজার হোন ।। আপনি হবেন সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন
প্রকাশিত : ১৬:২৯, ৭ আগস্ট ২০২১
ইতোমধ্যেই আমরা বুঝতে পেরেছি, ভুল জীবনাচারের কারণে যেমন হৃদরোগ হতে পারে, তেমনি আপনার অতৃপ্ত অশান্ত মনের প্রভাবও পড়তে পারে হৃদযন্ত্রে। এ রোগের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের মন এবং দৃষ্টিভঙ্গি। আধুনিক ধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ভাষায় তাই হৃদরোগ একটি সাইকোসোমাটিক ডিজিজ বা মনোদৈহিক রোগ। একটু গভীরে তাকালে আমরা দেখব, মনোদৈহিক রোগব্যাধির আসল বিষফোঁড়াটা লুকিয়ে আছে জীবন সম্পর্কে আমাদের ভুল ও অবিদ্যাপ্রসূত দৃষ্টিভঙ্গিতেই।
অধিকাংশ মানুষ আজ ঘুরপাক খাচ্ছে না-শুকরিয়া আর ভুল জীবনাচারের বৃত্তে। ঘুরেফিরে সবখানেই একই হাহাকার—নাই নাই খাই খাই পাই পাই। এত পাই তবুও চাই, আরো চাই। শুধু চাই আর চাই।
এই নিদ্রাহীন চাওয়ার যেন কোনো শেষ নেই। জীবনের প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই আমরা বলতে পারছি না—প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ! তুমি অনেক দিয়েছ। আমি কৃতজ্ঞ। অর্থাৎ কৃতজ্ঞচিত্ততা বা শুকরিয়ার অভাব ঘটেছে আমাদের জীবনে। আর এই না-শুকরিয়ার কারণ হলো নেতিবাচকতা, ক্রমাগত অন্যের সাথে তুলনা, বস্তুর মাঝে সুখ খুঁজে ফেরা ইত্যাদি। না-শুকরিয়ার পরিণতিতে অশান্তি হতাশা অস্থিরতা ভয় বিষণ্নতা মানুষের জীবনকে নানা দিক থেকে আঁকড়ে ধরে। জীবন একসময় হয়ে ওঠে দুঃসহ, ক্লান্তিকর এবং রোগগ্রস্ত। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রেও।
তাই একটি সুস্থ সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের জন্যে দরকার শুকরিয়া ও ইতিবাচক জীবনদৃষ্টি। শুকরিয়া আমাদের জীবন থেকে নেতিবাচকতার বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করে, চিরতরে দূর করে অশান্তির সমস্ত জঞ্জাল।
শুকরিয়া ।। সঠিক জীবনদৃষ্টির উৎস
চারপাশে যত সফল মানুষ আমরা দেখি, তাদের সাফল্যের রহস্য খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, তারা শোকরগোজার বা ইতিবাচক জীবনদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। কেউ তা অনুসরণ করছেন সচেতনভাবে কিংবা কারো জীবনের সহজাত ও স্বতঃস্ফূর্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই এটি। সর্বাবস্থায় শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞচিত্ততার বোধই একটু একটু করে তাদেরকে নিয়ে যায় সাফল্য ও নিরাময়ের পথে।
কারণ একজন শোকরগোজার মানুষের দৃষ্টি সবসময় ‘কী আছে’, সেদিকে। ফলে তার শক্তি, ক্ষমতা আর উপকরণ সম্পর্কে তিনি পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। জীবনের যে-কোনো পর্যায় থেকে তিনি শুরু করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন কর্মোদ্যমী ও সফল। তার সাফল্যের আনন্দ-অনুরণনই তাকে যাবতীয় কষ্ট দুঃখ বিষণ্নতা ও স্ট্রেস থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সুখী জীবনের পথে তিনি পায়ে পায়ে এগিয়ে যান।
সবসময় বলুন, বেশ ভালো আছি
আপনার জীবনের সব ধরনের প্রাপ্তি ও সাফল্য এবং আপনার যা আছে তার সবকিছুর জন্যেই আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ হোন। ধন্যবাদ জানান স্রষ্টাকে। গভীরভাবে তাকান নিজের দিকে। একটু ভাবলেই আপনি আপনার জীবনে পেয়ে যাবেন এমন অসংখ্য উপলক্ষ, যার জন্যে আপনিও অনুভব করবেন— অন্য অনেকের চেয়ে আপনি অনেক ভালো আছেন।
তাই প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই বলুন : ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ হরি ওম/ প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ/ থ্যাংকস গড, একটি নতুন দিনের জন্যে।’ ভেতর থেকে অনুভব করুন শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞচিত্ততা। কুশল বিনিময়কালে এবং দিনে যখনই সময় পান, বলুন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি।’ আপনি সত্যিই ভালো থাকবেন।
যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন
শুকরিয়ার প্রকাশ হলো, যা আছে যতটুকু আছে সেখান থেকেই শুরু করা। পথে নামলে পথই আসলে পথ দেখায়। শোকরগোজার মানুষ যা আছে তা নিয়েই শুরু করে দিতে পারেন, পথে নামতে পারেন, তিনি পথ পেয়েও যান।
তাই নিরাময় বা সাফল্য—যে পথেই এগোতে চান—যা আছে তা নিয়েই নেমে পড়ুন, যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। কারণ যে উদ্যোগ নেয়, সচেতন প্রচেষ্টা চালায়, স্রষ্টার রহমত সবসময় তার সাথেই থাকে।
লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া।
আরকে//