ঢাকা, শুক্রবার   ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সুস্থ জীবনধারা, প্রার্থনা ও মেডিটেশন ॥ হৃদরোগ নিরাময় করে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৫১, ২১ আগস্ট ২০২১

জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগে. (অব.) ডা. আব্দুল মালিক

জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগে. (অব.) ডা. আব্দুল মালিক

Ekushey Television Ltd.

বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক ব্যাধির পরিমাণ কমে যাওয়ার সাথে সাথে অসংক্রামক ব্যাধি বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার মারাত্মক স্বাস্থ্য-সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো এসব অসংক্রামক ব্যাধি, যার অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ এবং এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ। গত ২০ বছরে বাংলাদেশে হৃদরোগে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২০-২৫ জন উচ্চ রক্তচাপে এবং শতকরা ১০ জন করোনারি হৃদরোগে ভুগছেন।

মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যে অঙ্গটি নিরলস কাজ করে আমাদের কর্মক্ষম রাখে, সেটি হলো আমাদের হৃৎপিন্ড। আমরা জানি, রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। আর হৃৎপিন্ডে এটি পৌঁছে দেয় করোনারি আর্টারি।

আমরা যখন ক্রমাগত ভুল খাদ্যাভ্যাস ও ভ্রান্ত জীবনাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন এই করোনারি আর্টারির ভেতরের দেয়ালে ক্রমশ কোলেস্টেরল জমতে থাকে এবং রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে হৃৎপিন্ডে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। একসময় বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয় এনজাইনা। এরই পরিণতিতে একসময় দেখা দিতে পারে হার্ট অ্যাটাক (Myocardial Infarction)।

সাধারণভাবে ছোটবেলা থেকেই রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা শুরু হয় এবং একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর উপসর্গ দেখা দেয়। করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো হলো : ধূমপান, ভুল খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য, অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং মানসিক চাপ ইত্যাদি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোক অন্যতম ঘাতক ব্যাধি এবং অকালমৃত্যুর জন্যে দায়ী। বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ এ রোগে মারা যায় এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে দুই কোটি ৩০ লাখ মৃত্যু ঘটবে শুধু হৃদরোগেই, যা সত্যিই খুুব দুঃখজনক। কারণ যে বয়সে হৃদরোগসহ এ ধরনের ভুল জীবনাচারজনিত অসুখে মানুষ ভুগতে শুরু করে এবং মারা যায়, সেই সময়টি হলো জীবনের সুন্দরতম একটি সময়, যখন তারা নিজেদের পরিবার-সমাজ- জাতির জন্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রাখতে পারতেন।

করোনারি হৃদরোগ একবার হয়ে গেলে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। এজন্যে প্রথম থেকেই এর প্রতিরোধের দিকে জোর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডা. ডিন অরনিশ প্রমাণ করেছেন যে, সুস্থ জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে অনেক হৃদরোগী অপারেশন ও এনজিওপ্লাস্টি ছাড়াই সুস্থ হয়েছেন। আর আমাদের মনে রাখা উচিত যে, অপারেশন ও এনজিওপ্লাস্টি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

নিরাময়ের এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে  পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর মানুষ শুধু একটি দেহ নয়, দেহ এবং আত্মা—এ দুয়ের সমন্বয়ে একজন মানুষ। পরিপূর্ণ সুস্বাস্থ্যের জন্যে তাই দেহ ও আত্মা উভয়েরই সুস্থতা জরুরি। আমাদের দেহ বস্তু জগতের, এটি স্থান-কালে সীমাবদ্ধ। আর আত্মা অপার্থিব জগতের—যা মুক্ত, বন্ধনহীন এবং স্থান-কালে সীমাবদ্ধ নয়। এই আত্মা ভালো থাকলে মানুষের শরীরও ভালো থাকে। তাই প্রয়োজন স্রষ্টার প্রতি মানুষের পরিপূর্ণ ঈমান বা বিশ্বাস, প্রকৃত জ্ঞান অর্জন এবং সবসময় সৎকর্ম করা।

জীবনে সুখশান্তি চাইলে এটি অর্জনের উপায়ও জানতে হবে। শুধু পার্থিব সম্পদ মানুষকে সুখশান্তি দিতে পারে না। সুখী হতে হলে শরীর এবং আত্মাকেও সুস্থ রাখতে হবে। আর শারীরিক সুস্থতার জন্যে সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। আত্মার সুস্থতার জন্যে স্রষ্টায় বিশ্বাসের পাশাপাশি পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী হতে হবে। ধর্মের মূল শিক্ষার অনুশীলন, নিয়মিত প্রার্থনা ও মেডিটেশন চর্চা আত্মায় প্রশান্তি আনে। আর রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে এটি কাজ করে এক চমৎকার সহায়ক শক্তি হিসেবে।

মানুষের মন তার অতীতের সুখ-দুঃখ কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তা-আশঙ্কা নিয়ে সবসময় অস্থির থাকে। এই অস্থির মনকে স্থিরতা, শান্তি ও কল্যাণের পথে আনতে হলে মেডিটেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চঞ্চল মনকে শান্ত ও সংযত করতে পারলে বিশ্বব্রহ্মান্ড- নিয়ন্ত্রণকারী মহাচেতনার সাথে যোগাযোগ সম্ভব। সত্যে পৌঁছার জন্যেও মনকে শান্ত করা চাই। এজন্যেই মেডিটেশন।

মেডিটেশন আমাদের মনকে শান্ত করে, বর্তমানে নিয়ে আসে। নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে শেখায়। টেনশন ও চাপমুক্তি তখন সহজ হয়। এর পাশাপাশি জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ এবং জীবনধারা পরিবর্তন করাও অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান সময়ে যত রোগ হচ্ছে, তার একটা বড় কারণ হলো মানুষের ভুল জীবনযাপন। এ বিষয়গুলোর প্রতি কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব মানুষকে সচেতন করে তুলছে, একটি সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্যে আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।

লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া। 
 
আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি