ডেঙ্গু : আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সতর্কতা
প্রকাশিত : ১৩:৪৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনাভাইরাস মহামারীর বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে এসেছে ডেঙ্গু। বাংলাদেশে মার্চ- এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম ৫ দিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এই রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কেও সঠিক ধারণা রাখা উচিত।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা ব পরিষদ- বিসিএসআইআর বলছে, ঢাকায় এ বছর ডেঙ্গুর ‘ডেনভি-৩’ ধরণের দাপট চলছে। এই ধরনে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন বেশি তেমনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও হচ্ছে বেশি।
ডেঙ্গু জ্বর নানা স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। শুরু থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকলে মৃত্যুঝুঁকিসহ অন্যান্য জটিলতা কমে। তাই যেকোনো জ্বরকে আমলে এনে বাড়িতেই ডেঙ্গু রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
উপসর্গ
কোভিড-১৯ বা ডেঙ্গু দুটোই ভাইরাসজনিত জ্বর। দুটোতেই কিছু উপসর্গ একইরকম। যেমন: জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা থাকে। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, অরুচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।
লক্ষণীয়, ডায়েরিয়া বা পেটের ব্যথার সমস্যা এই রোগেই হতে পারে। এজন্য জ্বর ডেঙ্গু না করোনাভাইরাসের কারণে, বোঝা অনেক সময় মুশকিল হতে পারে। তাই এ সময় জ্বর হলে দুটো পরীক্ষা করে ফেলাই ভালো।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রুপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটারী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হল-
রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ এবং দ্রুত হওয়া, হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
করণীয়
যেকোনো অসুস্থতায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি বাড়িতেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
>> চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু হলে জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা বুঝে ব্যবহার করা যাবে। জ্বর কমাতে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া জ্বর কমাতে রোগীর মাথায় পানি ঢালা, ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া অথবা গোসল করানো যেতে পারে।
>> ডেঙ্গু জ্বরে প্রধান চিকিৎসা হলো তরল ব্যবস্থাপনা। রোগীর প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি ওরস্যালাইন, স্যুপ,ডাবের পানি, ফলের শরবত, ভাতের মাড়, দুধ ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
>> ডেঙ্গু রোগীর জন্য বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় রোগী শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বলও থাকে। উপসর্গের সাত থেকে ১০ দিন ভারী কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবেনা। রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন।
>> জ্বরের পাশাপাশি অনেকের বমি ভাব, ডায়রিয়া থাকে। এসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধ চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন নেই।
>> রোগীর কিছু সতর্কসংকেত জেনে রাখতে হবে এবং এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে অথবা হাসপাতালে চলে যেতে হবে।
সেগুলো হল অস্বাভাবিক দুর্বলতা ,অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেট ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ , শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমান কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ, রক্তবমি।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি খাওয়া বিপজ্জনক। তাই নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। এসময় মনোবল শক্ত রাখাটা জরুরি। আর সবচেয়ে বেশি নজর দিন রোগ প্রতিরোধে। কোভিড থেকে সুরক্ষায় হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস মশা থেকে সুরক্ষিত থাকতে বাড়ি ও আশপাশে পানি জমে আছে কিনা, মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে কি না, সে দিকে লক্ষ রাখুন।
এমএম/এএইচএস/এসএ/