স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নারীর মূত্র সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব
প্রকাশিত : ১২:১৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
সাইত্রিশ বছর বয়সী সুচন্দা দাশ (ছদ্মনাম)। স্বামী আর দু’সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরী করেন বেসরকারী কোম্পানীতে। শারীরিকভাবে সুস্থই ছিলেন সুচন্দা। কিন্তু গত প্রায় ছয় মাস ধরে তলপেটে ব্যাথা অনুভব করছেন তিনি। এছাড়াও বারবার মূত্র বেগ, বমি বমি ভাব রয়েছে তার। এতো দিন বিষয়টি কাউকে জানায়নি সুচন্দা। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে তলপেটের ব্যাথার সাথে হাল্কা জ্বর আসছে তার।
আর তাই বিষয়টি প্রথমে স্বামী অনুরাগ’কে জানায় সুচন্দা। সাথে সাথে অনুরাগ তাদের পারিবারিক গাইনোলজিষ্টের সাথে যোগাযোগ করেন এবং সন্ধ্যায় অ্যাপয়ন্টেম্যান্ট নিয়ে তার চেম্বারে যান। সেখানে ডাক্তার ভালো করে দেখার পর বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করাতে বলেন।
পর দিন সব পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে যান স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন সুচন্দার ইউরিনে ইনফেকশন (মূত্র সংক্রমণ) ঘটেছে। তিনি (ডাক্তার) এ সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য এ সময় রোগীকে বেশ কিছু ওষুধ এবং পরামর্শ দেন ।
গাইনোলজিষ্ট ডা. মনোয়ারা হক বলেন, নারীদের ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্র সংক্রমণ একটি পরিচিত এবং সাধারণ সমস্যা। সাধারণত প্রতি দু’জন মধ্যে একজন নারী জীবনের কোন না কোন সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়। মূলত মূত্রতন্ত্রের কোন অংশে জীবাণুর সংক্রমণ হলে নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। এটি সংক্ষেপে ইউটিআই নামেও পরিচিত।
তিনি বলেন, মূত্র সংক্রমণের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। তার মধ্যে বার বার মূত্র বেগ, জ্বালাপোড়া, মূত্র ঠিক মত না হওয়া, তলপেটে ব্যাথা অনুভব, জ্বর আসা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি।
ডা: মনোয়ারা বলেন, এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি করতে পারলে খুব ভালো হয়। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন টকজাতীয় খাবার, লেবু ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।
মেডিসি বিশেষজ্ঞ ডা. নওসাবাহ্ নূর বলেন, ক্র্যানবেরী জুসও গ্রহণ করতে পারেন। কেননা এ জুস বেশ উপকারী। তবে বাংলাদেশে ক্র্যানবেরী জুস সব জায়গায় পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে রোগীরা ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই ইউরিন ইনফেকশন উপসর্গ সব সময় যে দেখা যাবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো হাল্কা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক নারী বা ডায়াবেটিক আছে এমন রোগীর উপসর্গ তেমন তীব্র নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, টক দইয়ে অনেক ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ করে। এছাড়াও অনেক নারী দীর্ঘক্ষণ মূত্র আটকে রাখেন। এটা কখনোই শরীরের জন্য ভালো নয়। মূত্র আটকে রাখলেও এই সংক্রমণ হতে পারে।
এছাড়াও ডা. নূর স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার উপর জোর দেন। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস পরিধান, ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, মূত্রপথ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মাসিকের সময় স্যানিটারী প্যাড পরিধানের উপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, মূত্র ত্যাগের পর সবসময় খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় জীবানু থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ দেখা যাওয়ার পরপরই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় এই ইনফেকশন থেকে অন্য রোগ ও হতে পারে। অন্য সংক্রমণও দেখা দিতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘদিন এই ইনফেকশন থাকলে কিডনী রোগও হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র : বাসস
এমএম/ এসএ/