ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

কর্মক্ষেত্রে মেডিটেশন প্রশিক্ষণ কমাতে পারে চিকিৎসা ব্যয়

ড. সাজেদুল ইসলাম নাহিম

প্রকাশিত : ২০:২৮, ২৫ জুন ২০২২ | আপডেট: ২০:৪৭, ২৫ জুন ২০২২

পৃথিবীর সব দেশেই কর্মক্ষেত্রে নানান পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় কর্মজীবীদের। কাজের চাপে হাঁপিয়ে ওঠা, পরিবারের দায়িত্ব, যানজটের ঝক্কি আর নিত্যনতুন প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অফিসের কাজে মনোনিবেশ করতে হয় তাদেরকে।

মেজাজ হারিয়েও ফেলেন কেউ কেউ। ক্লায়েন্টদের সাথে যথাযথ আচরণ করাও মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে এসব ঝামেলা ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করলে কমে যায় কর্মদক্ষতা, ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিষ্ঠান। 

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস আর্লিংটনের গবেষণা প্রতিবেদনে কানাডার চাকরিজীবীদের সম্পর্কে এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে চাকরিজীবীদের মনে দৈনন্দিন স্ট্রেস থেকে জমা ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছে। 

২০২০ সালে কানাডিয়ান ফেডারেশন অব নার্স ইউনিয়ন জানায়, ২৯.৩ শতাংশ নার্স কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয় করতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার। 

কানাডা ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষিত নার্সদের নিয়োগ দেয়ার আন্তর্জাতিক কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নার্সিং সলিউশন ইনকর্পোরেটেড (এনএসআই)। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন আনুসারে, প্রতি পাঁচজনে একজন নার্স স্ট্রেসজনিত কারণে হাসপাতালের চাকরি চালিয়ে যেতে পারছে না। দক্ষ কর্মী হারানো ও কর্মীদের চিকিৎসা ব্যয় বাবদ হাসপাতালগুলোকে গুনতে হচ্ছে নার্সপ্রতি গড়ে ২৫ হাজার ডলার ক্ষতি।

এ অবস্থা থেকে বাঁচতে কানাডার হাসপাতালগুলো নার্সদের জন্যে মেডিটেশনের কোর্স চালু করে এবং নিয়মিত মেডিটেশন চর্চার সুযোগ করে দেয়। এতে বছর শেষে কোনো কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মী ঝরে পড়া বাবদ ৬৮ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাঁচাতে সক্ষম হয়! 

বিখ্যাত মার্কিন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এটেনার ক্ষেত্রে কর্মীদের জন্যে মেডিটেশন কোর্স চালু ছিল বাঁক বদলকারী একটি সিদ্ধান্ত। মেডিটেশন কোর্স চালুর পর কর্মীপ্রতি তাদের ২,০০০ ডলার চিকিৎসা ব্যয় কমেছে এবং ৩,০০০ ডলার উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।  

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর হার্ভার্ড হেলথ ব্লগে প্রকাশিত হয় ব্যতিক্রমী একটি রিপোর্ট। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ৯১ জন স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর এক বছর পর্যবেক্ষণের পর গবেষকরা জানান, নিয়মিত মেডিটেশন ভ্যাকেশন বা ছুটি কাটানোর চেয়ে স্ট্রেস কমাতে অধিক কার্যকর। উপরন্তু নিয়মিত মেডিটেশনের ফলে চর্চাকারীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠেন।

বিশ্বজুড়ে নাইকি, গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপলের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে মেডিটেশন চর্চায়। এর পাশাপাশি কর্মীদের কিছু সময়ের জন্যে মৌনতা চর্চায়ও উৎসাহিত করছে তারা। 

তাদের মতে, এতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে অসুস্থতাজনিত ছুটি ও চিকিৎসা ব্যয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করে কর্মীরা অন্তর থেকে সুখী হয়ে ওঠে। ফলে কর্মস্থলের পরিবেশ থাকে সুন্দর। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে কর্মীরা থাকে আন্তরিক।

বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের যোগ-ধ্যানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। ফলে প্রতিষ্ঠানে সুন্দর কর্মছন্দ এসেছে। মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ, রিভ সিস্টেম, লা-রিভ ফ্যাশন হাউজ, পিপলস্ পোলট্রি এন্ড হ্যাচারি লি. ইত্যাদি দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিদিনের কর্মপ্রবাহ শুরু করে মেডিটেশনের মাধ্যমে।

তাই শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, শিক্ষার্থী, গৃহিনীসহ অন্যরাও মেডিটেশনকে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী করে নিতে পারেন। কারণ স্ট্রেস থেকে বাঁচতে মেডিটেশন এক অব্যর্থ ওষুধ। এছাড়া এজমা, এলার্জি, আইবিএস ইত্যাদি মনোদৈনিক রোগগুলো থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে বর্তমান সময়ে মেডিটেশন চর্চা একটি অপরিহার্য বিষয়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জহির উদ্দিন আহমাদ বলেন, মেডিটেশন ইজ এ পার্ট অফ ট্রিটমেন্ট, পার্ট অফ রিলাক্সেশন এবং এটা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজন এবং উপকারী। ট্রিটমেন্টের সাথে আমরা মেডিটেশন এবং মেডিকেশন, ঔষধ এবং যোগ ব্যায়ামকে আমরা একসাথে যোগ করে দেই। যাদের স্ট্রেস একটা বিরাট ফ্যাক্টর তাদেরকে বলি, ওষুধ ছাড়াও আপনারা মেডিটেশন প্র্যাকটিস করবেন। যদি এ সেবাতে ট্যাক্স ধরা হয়, তাহলে অনেকে বাদ দিয়ে দেবে, বাদ দিয়ে দিলে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই মেডিটেশন চর্চার ওপর ভ্যাট নয়, বরং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত মেডিটেশন চর্চার সুযোগ করে দিতে সরকারি উদ্যোগ ও প্রণোদনা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে মেডিটেশন চর্চার সুযোগ চালু করে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং অসংখ্য মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ও কমানো যেতে পারে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি