ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বায়ুদূষণ: হুমকিতে শিশু ও প্রজনন স্বাস্থ্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

ঢাকার বাতাসে বেড়ে গিয়েছে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড। তার সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস। এমনকি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্লাস্টিক কণাও। শুধু তাই নয়, ঢাকার বায়ুতে ক্ষতিকর বস্তুকণার মধ্যে সীসাও রয়েছে। ফলে বাড়ছে বায়ু দুষণ। যা মারাত্মক ক্ষতি করছে মানবদেহের।

ভয়েস অফ আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এ সমস্ত ক্ষতিকর উপাদান ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করছে। মানুষ নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই বিষাক্ত উপাদানগুলো গ্রহণ করছে এবং শ্বাসতন্ত্রের নানা অসুখে ভুগছে। এমনকি হৃদরোগও বেড়েছে।”

টানা দশ দিন ধরে বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২৯১ রেকর্ড করা হয়েছে। যার অর্থ হলো জনবহুল এ শহরের বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার এ তালিকা প্রকাশ করেছে।

২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়, যেখানে ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই এ বায়ুদূষণে ভুগছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। বর্তমানে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “বায়ুদূষণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা, বিশেষ করে যাদের বয়স ১৪ বছরের মধ্যে। শিশুদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে ঢাকার বাতাসের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো। কারণ দূষণের ধাক্কা সামলানোর জন্য শিশুদের ফুসফুস পরিপক্ক থাকে না। আমাদের ফুসফুসের মধ্যে একটা তরল পদার্থ রয়েছে যাকে সারফেকট্যান্ট বলে। এটি ফুসফুসের দুটি অংশকে একসাথে আটকে যেতে বা সংকুচিত হয়ে যেতে বাধা প্রদান করে। সারফেকট্যান্ট না থাকলে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।”

তিনি বলেন, “ঢাকার দূষিত বায়ু ফুসফুসের এই তরল পদার্থটি নষ্ট করে ফেলছে। বিশেষ করে, যানবাহনের পেট্রোল থেকে উৎপাদিত মাত্রাতিরিক্ত ধোঁয়া, ঢাকায় এই বিষাক্ত উপাদানগুলো ছড়াচ্ছে। এভাবে শিশু ও বয়স্ক মানুষের ফুসফুস কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বড় ধরনের দীর্ঘদিনের শারীরিক সমস্যা যেমন সিওপিডি, শ্বসকষ্ট, হাপানি, ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়তে পারে এমনকি ক্যানসারও হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “একটি শিশু যদি শৈশবেই এ ধরণের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়, তাহলে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ সমস্যাগুলো জটিল আকার ধারণ করে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং তা অন্যান্য শারিরীক সমস্যাও তৈরি করে। সীসা শিশুদের হার্ট, কিডনি ও লিভারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। শরীরের অপরিহার্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আক্রান্ত হলে শিশুর আয়ুষ্কাল কমে যাবে। বায়ুদুষণের প্রভাব পড়ে খাদ্য, পরিবেশ, পানি সবকিছুর উপর। যার ফলে ঢাকায় জন্ম নেয়া নবজাতক শিশুর মধ্যে এখন হৃদরোগ, ডায়েবেটিসের মতো অসুখও পরিলক্ষিত হচ্ছে।”

ডা. মুজাহিদুল বলেন, “সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য। বায়ুতে উপস্থিত বিষাক্ত উপাদানের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর। এতে পুরুষের শুক্রাণু তৈরির পরিমান কমে যাচ্ছে, আবার ডিম্বানুর সাথে নিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন সুস্থ্ শুক্রাণুও তৈরি হচ্ছে না। অপরদিকে নারীদের ক্ষেত্রেও তাই। ডিম্বাণু তৈরির পরিমান কমে যাচ্ছে। আবার দুর্বল বা নষ্ট ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছে, ফলে এসব ডিম্বাণু যখন শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণ তৈরি করে সেই ভ্রূণ জরায়ুর নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান তৈরি করতে পারে না। ফলে গর্ভপাত হয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আবার দেখা যাচ্ছে, কিছু প্রেগন্যান্সিতে গর্ভাবস্থায় শিশু বাড়ছে না। সেটারও মূল কারণ বায়ুদূষণ। এ ধরণের শিশু হয় গর্ভেই মারা যায় অথবা অতিরিক্ত অপুষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ ধরণের দুর্বল শিশু জন্মের পরও বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারেনা। এজন্য বাংলাদেশে নবজাতক মৃত্যুর হারও দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। যদিও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ হচ্ছে, দায়বদ্ধতা আমাদের সবার। একটা অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ প্রজন্মের জন্ম হলে তা প্রজন্মান্তরে প্রটেনে যেতে হবে।”

যানবাহনের দূষণ এবং ঢাকার আশে পাশের এলাকাগুলো থেকে ইটভাটা সরানো গেলে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব হবে বলে মত দেন ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
সূত্র: ভয়েস অফ আমেরিকা
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি