ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু: বেড়েছে রক্তের চাহিদা, সংকট প্লাটিলেট কিটের (ভিডিও)

মানিক শিকদার

প্রকাশিত : ১২:৩৭, ২৫ জুলাই ২০২৩ | আপডেট: ১৭:০৬, ২৮ জুলাই ২০২৩

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে; সেই সাথে বেড়েছে রক্তের চাহিদা। একইসঙ্গে প্লাটিলেট কিটের সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাংকে। তবে রোগীর স্বজনেরা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ায় প্লাটিলেটের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত পানি, তরল পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সচেতনতার পরামর্শ তাদের।  

কিন্তু দেশের মানুষ একটু সচেতন হয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করলে এই সংকট থাকেনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে সুস্থ একজন মানুষ বছরে তিনবার রক্ত দিতে পারেন।

বাংলাদেশের স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে ২০০০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট ও অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স, ওয়েস্ট বেঙ্গলে অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায় উক্ত সংস্থাগুলো তাদের জরিপ উপস্থাপন করে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে মাত্র ০.৪ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করে। অথচ ইউরোপে প্রতি হাজারে স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০ জন। সুইজারল্যান্ডে এ সংখ্যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ১১৩ জন।

অথচ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে এ সংখ্যাকে প্রতি হাজারে মাত্র ২ জনে উন্নীত করতে পারলে বাংলাদেশের মোট রক্তের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশেই পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের রক্ত কেনাবেচা হয় না। এ সুযোগে অনিরাপদ ও দূষিত রক্ত কেনাবেচার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্লাড ব্যাংক বাণিজ্য। এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলনে মানুষকে ব্যাপকভাবে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর মাধ্যমে বন্ধ হবে রক্তের কেনাবেচা। রক্তের অভাবে কোনো মুমূর্ষু মানুষ মারা যাবে না, দূষিত রক্ত নিয়েও দুরারোগ্য ব্যাধিতে কাউকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে না। তাই নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আমাদের পরিপূর্ণ সুস্থ থাকা ও প্রাণবন্ত জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে।

রক্তদানের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্ত দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এ ঘাটতি পূরণ করে। বছরে তিনবার রক্তদান রক্তদাতার লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে আয়রনের ভারসাম্য বজায় থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্ত ও রক্ত উপাদানের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে মাত্র ২৬ শতাংশ রক্ত সংগৃহীত হয় স্বেচ্ছা রক্তদাতার মাধ্যমে। বাকি ৭৪ শতাংশ রক্তের জন্য রোগীরা ছুটে যান আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ পরিচিতজনদের কাছে। সেখানেও ব্যর্থ হলে তারা পেশাদার রক্ত বিক্রেতার স্মরণাপন্ন হন। অথচ ১৮ কোটি মানুষের এদেশে স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা খুবই কম!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুহূর্তে চলছে রক্তের জন্য হাহাকার। অপারেশন, ডায়ালাইসিস, আগুনে পোড়ার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ডেঙ্গু মহামারী। অসহায় মানুষের আহাজারী, সময় মতো রক্ত সংগ্রহের জন্য ছুটাছুটি।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ব্লাড ব্যাংকের সামনে দেখা হয় দিদার হোসেনের সঙ্গে। তার ১৮ বছর বয়সী সন্তান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে রিমনের রক্তের প্লাটিলেট কমেছে; তাই সকাল থেকে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক ঘুরে অবশেষে পেয়েছেন রক্তের সন্ধান।

দিদারের মতো আরও অনেকেই এই ব্লাড ব্যাংকে এসেছেন প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানাচ্ছেন রক্তের আবেদন। 

স্বজনরা জানান, রোগীর তাৎক্ষণিক দরকার কিন্তু রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সময় লাগছে চার-পাঁচ ঘণ্টা। এটাই বেশি সমস্যা। 

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এই ব্লাড ব্যাংকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় রক্তের চাহিদা বেড়েছে প্রায় চার গুণ। চাহিদা অনুযায়ী প্লাটিলেট সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন হাসপাতালেও রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে।

কোয়ান্টাম ল্যাব সংগঠক শামীমা নাসরিন মুন্নী বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে ৭০-১০০ ব্যাগের চাহিদা পেতাম, সেটা এখন ২৭০-৪০০ ব্যাগের উপরে। চাহিদা অনেক বেশি, ভীড়টাও অনেক বেশি। সময় মতো সরবরাহ করার চেষ্টা করছি তবে কখনও কখনও সময়টা বেশি লেগে যাচ্ছে।”

সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর জটিল রূপ নিলে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সেটাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। পাশাপাশি যদি রক্তচাপ কমে যায়, হৃৎস্পন্দন বাড়ে বা রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে যায়, তবেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।  

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্লাটিলেট নিয়ে রোগীদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। প্লাটিলেট কমে গেলেই রক্ত নিতে হবে এমনটা নয়। 

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “প্লাটিলেট কমে গেলে প্লাটিলেট প্রয়োজন এটা একেবারেই ভুল ধারণা। যারা আতঙ্ক তৈরি করছেন তারা নিজেরাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটাছুটি করছেন এবং প্লাটিলেটের জন্য হা-হুতাশ শুরু করছেন। গাইডন বলে, এই রোগীর প্লাটিলেট কমবে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ডেঙ্গুর প্রতিটা রোগীর প্লাটিলেট কম থাকে কিন্তু প্রয়োজন হবে কিনা সেটা নির্ভর করে পর্যবেক্ষণের উপর।”

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তু রোগীকে সুষম খাবারের পাশাপাশি তরল খাবার খাওয়ানো এবং আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, “পানি শূন্যতা যাতে না হয় সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত তরল খাবারের কথা বলি। বিশেষত ও্যর স্যালাইন বেশি খেতে হবে, ডাব-শরবত বেশি করে খাওয়া যাবে। তারপরে যদি প্রয়োজন হয় স্যালাইন নিতে হবে। সেই স্যালাইন অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক হতে হবে।

ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেট নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, চিকিৎসকরাই নির্ধারণ করবেন একজন রোগীর প্লাটিলেট লাগবে কি লাগবে না।

এএইচ/এমএম//কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি