ডেঙ্গুতে নারীদের বেশি মৃত্যুর কারণ কী?
প্রকাশিত : ২০:২০, ২১ আগস্ট ২০২৩
বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২২৬ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, ডেঙ্গুতে নারীদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হলেও একই সময়ে ১৬২ জন পুরুষ মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জানা গেছে। এতে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৪৭৬ জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৫৪ জন (গতকাল পর্যন্ত)।
এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৯৬৩ জন নারী আর ৬১ হাজার ১০৭ পুরুষ। যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে রোববার দুপুরে ভার্চুয়াল ব্রিফিং করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ব্রিফিংয়ে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মোঃ. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে ডেঙ্গুর ৩৩তম সপ্তাহে এসে ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী দেখা গেছে।
যার প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
ডেঙ্গু রোগী কমলেও একটা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
সেটি হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যায় পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে পুরুষদের আক্রান্তের হার ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ, নারীদের আক্রান্তের হার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ৪৬ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ মারা গেছে ৩৩ জন।
ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ডা. শাহাদাত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, জেনেটিক কারণে নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়। আর এ কারণে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোন নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।
মি. হোসেন আরও বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেন। কিন্তু নিজে অসুস্থ হলে গুরুত্ব কম দেন। অসুস্থ হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তারা। এসব কারণে হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। দেরি করে আসলে ঝুঁকিতে থাকেন তারা।
ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন সেটি নিয়ে এখনো কোন গবেষণা করা হয়নি। তবে এটি নিয়ে গাইনি ও অবস চিকিৎসকেরা গবেষণা করতে চাচ্ছেন।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো অস্বাভাবিক।
সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা হলে ডেঙ্গু সন্দেহ করা হয়, তিনি জানান, কিন্তু এ বছর ডায়রিয়া, পেটব্যথা, খিঁচুনিসহ আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কোন নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বুঝতে সময় লাগছে।
আবার অনেক সময় তারা হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। এ কারণে তাদের মৃত্যুর হার বেশি বলে তিনি বলেন।
ডা. নিয়াতুজ্জামান আরও বলেন, শারীরিক কোন সমস্যা দেখা দিলেই ডেঙ্গু কি না সেটি পরীক্ষা করা উচিত। আর অসুস্থ হলে দেরি না করে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এ বছর ২১-২৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৬ জন।
এদের মধ্যে নারী ২৯ ও পুরুষ ১৭ জন। আবার ২৬-৩০ বছর বয়সী ৩৭ জন নারী-পুরুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ২০ ও পুরুষ ১৭ জন।
ডেঙ্গুতে ৩১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীরা সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন। এই বয়সী ৩৫ জন নারী ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অথচ একই বয়সের মাত্র নয় জন পুরুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। আর ৩৬-৪০ বছর বয়সী ২৭ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। বিপরীতে একই বয়সের ১৫ জন পুরুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।
গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
চলতি বছর অনেক আগেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত মাসেই ডেঙ্গুতে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়। আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২২৫ জন মারা যান।
এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। এ ছাড়া ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০২১ সালে মারা যান ১০৫ জন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/