বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবসের কিছু ভাবনা
প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ১৪ অক্টোবর ২০২৩
বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস আজ ১৪ অক্টোবর। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সহমর্মী সমাজ: সম্মিলিত পালিয়েটিভ সেবা’।
নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্তদের শারীরিক ও মানসিক সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়কে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলা হয়। আমাদের মত দেশে নানাদিক দিয়েই এই দিবসটির তাৎপর্য সীমাহীন। দেশে প্রতিবছর অন্তত ৬ লাখ রোগী প্যালিয়েটিভ পর্যায় পৌঁছে যায়। পরিসংখ্যান বলছে এ হার বছরওয়ারি বাড়ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে প্যালিয়েটিভ নিয়ে অজ্ঞতা আছে এখনও।
অনেকেই জানে না এর অর্থ কি? ঢাকায় সীমিতভাবে কিছু চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হলেও জেলা বা প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও সেভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি। দেশে ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যে আনুপাতিক হার তাতে অন্য রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি এই বিশালসংখ্যক প্যালিয়েটিভ রোগীর সেবা দেয়ার মত অবকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।
আমাদের চারপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো যে, প্রতি ৫টি পরিবারের মধ্যে হয়ত একজন প্যালিয়েটিভ রোগী আছে। একটি পরিবারে একজন প্যালিয়েটিভ রোগী থাকলে সেই পরিবারের উপর যে ধকল যায় তা একমাত্র যারা এর মুখোমুখি হচ্ছে তারাই বুঝতে পারে।
একজন অসুস্থ ব্যক্তি এবং তার পরিবারের সঙ্কট শুধুমাত্র শারীরিক নয়; হতে পারে মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক-যা শারীরিক অসুস্থতার মতই গুরুত্বপূর্ণ। কখনও একটি সমস্যা আরেকটিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
এই সঙ্কটে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে কমিউনিটিভিত্তিক সম্মিলিত সেবা ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় পরিবার ছাড়াও প্রতিবেশি, সমাজ সর্বোপরি সরকাকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বল্প প্রশিক্ষণে কিছু স্বাস্থ্য কর্মী তৈরি করার প্রকল্প গ্রহণ করা ছাড়াও সমাজের সকলকে সম্মিলিতভাবে প্যালিয়েটিভ রোগীর চিকিৎসা সেবার বাইরেও রোগীর এ সম্পর্কিত সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়ের মূল কথাও এটাই। সহমর্মী সমাজব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্মিলিতভাবে প্যালিয়েটিভ সেবা দেয়া সম্ভব।
আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়াও ভারতের কেরালায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সুফল পাওয়া গেছে আশাতীতভাবে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসিএসবি) দেশে প্যালিয়টিভ সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংস্থা ইতোমধ্যে ঢাকার কড়াইল এবং নারায়ণগঞ্জের বস্তিতে সীমিতপর্যায়ে কেরালা মডেলের আদলে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে এই সংগঠনের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা আছে। এ বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছাড়াও বিত্তশালী এবং সামর্থ্যদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসা উচিৎ।
আমরা জানি মৃত্যু অনিবার্য। তাই আশা থাকুক প্রতিটি মৃত্যু যেন হয় স্বস্তিদায়ক। নিরাপদ এবং শান্তিময় মৃত্যু সবারই কাম্য।
এএইচ