ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ম্যালেরিয়ার লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

প্রকাশিত : ১২:৫০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

Ekushey Television Ltd.

ম্যালেরিয়া বিশ্বের প্রাচীনতম এবং পরজীবীবাহী ভয়ঙ্কর জীবনসংহারী ব্যাধি। প্রতিবছর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে অসংখ্য মানুষ এ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে।
ম্যালেরিয়ার কারণ : ম্যালেরিয়া হচ্ছে মশক বাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এটি কেবল সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার কামড়ে হয়। এ পর্যন্ত ষাটের অধিক প্রজাতির ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার করা সম্ভব হলেও এর মধ্যে ৪টি প্রজাতি মানুষের ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি ও ওভাল-এর যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার দংশনে ম্যালেরিয়া হতে পারে। এর মধ্যে ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়ার জটিলতা সবচেয়ে বেশি, এমনকি মস্তিষ্ক আক্রান্ত করে জীবনসংহারী হতে পারে। সংক্রমিত মশা যখন কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন ওই ব্যক্তির রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে এবং সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।
লক্ষণ :নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। জ্বর সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। তবে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে জ্বর আসা-যাওয়া করে যেমন- একদিন পর পর জ্বর, তা তিন চার ঘণ্টা দীর্ঘ হওয়া এবং এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যায়। জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যেতে পারে। এ ছাড়াও মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিবমি ভাব অথবা বমি, হজমে গোলযোগ, অত্যধিক ঘাম হওয়া, খিঁচুনি, পিপাসা লাগা, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা, মাংসপেশি, তলপেটে ব্যথা অনুভব, প্লীহা ও যকৃত বড় হয়ে যাওয়াসহ লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ম্যালেরিয়া রোগের জটিলতম ধরন হলো ‘ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া’। সাধারণ ম্যালেরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা যেমন রক্তশূন্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাসকষ্ট হওয়া, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। জরুরি চিকিত্সা না পেলে এসব রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।
 রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা : ম্যালেরিয়া সন্দেহ হলে প্রথমবার পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়ার কিছু না পাওয়া যায়, তবে পর পর তিন দিন পরীক্ষাটি করা উচিত। যদি ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়, তাহলে দেরি না করে বা উদ্বিগ্ন না হয়ে দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
 প্রতিরোধে করণীয় : ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। মশাবাহিত রোগ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হলে সচেতনতা অবলম্বন প্রয়োজন। মশার কামড় থেকে দূরে থাকাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়। এজন্য কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন- দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা। দরজা-জানালায় মশক নিরোধক জাল, প্রতিরোধক ক্রিম, স্প্রে ব্যবহার করা। ঘরের আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা বা স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা।  জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে বেশি। এসব স্থানে কীটনাশক বা কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় বেড়াতে গেলে, আগে থেকেই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সঙ্গে রাখা।
 লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
/ এআর /



Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি