বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
প্রকাশিত : ১৯:৪১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট দিবস’ পালিত হয়। এবারের ফার্মাসিস্ট দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘ফার্মাসিস্টই আপনার ওষুধ বিশেষজ্ঞ’। আমরা খুব ভালো করেই জানি, উন্নততর জীবনের জন্য, সমৃদ্ধ জাতির জন্য চাই সুস্থ ও সাবলীল মানুষ, চাই চেতনাস্নিগ্ধ আলোকিত ঋদ্ধ মানুষ। একটি সুন্দর সাবলীল জীবনের জন্য সুস্থ থাকা অনিবার্য। জীবনের অনন্ত চাহিদার মাঝে সুস্থতাই প্রথম চাওয়া। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যসেবাকে রাষ্ট্রের অন্যতম করণীয় হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
একজন প্রকৃত জননায়ক হিসেবে মানুষের এই আকাঙ্ক্ষাটি বাংলাদেশের সংবিধানে রূপদান করেছিলেন। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-র মূলমন্ত্র ছিল ‘সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা’। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফার্মেসি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তার ও নার্সের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, ঠিক তেমনিভাবে ওষুধের সংরক্ষণ, গুণগত মান, সঠিক ওষুধ নির্বাচন ও ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ভূমিকাও অপরিহার্য।
গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা দিয়ে ওষুধশিল্পে (উৎপাদন, মাননিয়ন্ত্রণ, মানের নিশ্চয়তা বিধান, গবেষণা ও উন্নয়ন, বিপণন, উৎপাদন পরিকল্পনা, ডিসপেন্সিং, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ারস, বিজনেজ ডেভেলপমেন্ট ও রপ্তানি) সরকারি সংস্থায়, বেসরকারি হাসপাতালে, কমিউনিটি ফার্মেসিতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং ১৮২টি দেশে রফতানি হচ্ছে। বর্তমানে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা দেশের বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওষুধের অপব্যবহার রোধ ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য দেশে মডেল ফার্মেসি চালু করা হয়েছে।
বর্তমানে ১২টি সরকারি ও ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর গড়ে চার হাজার ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন এবং বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছেন। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে না।
হাসপাতালগুলোতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মতো ফার্মেসি সার্ভিসেস পরিদপ্তর বা অধিদপ্তর গঠন করে জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখনই উত্কৃষ্ট সময়। বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ হাজার ৭৩৭ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশে কর্মরত), পাঁচ হাজার ৭০০ জন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট এবং ৫৫ হাজার সি প্রেড ফার্মাসিস্ট রয়েছেন।
এসএইচ/