ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হেপাটাইটিস-ই নিয়ে এখনই ভাবতে হবে : ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৩, ১১ নভেম্বর ২০১৮

হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলোর অন্যতম হচ্ছে ই ভাইরাস। সিরোসিস আর লিভার ক্যান্সারের ভয়াবহতা আর এসবের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নিয়ে মাতামাতিতে আমরা প্রায়ই ই ভাইরাসকে ভুলে যাই। অথচ তৃতীয় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশেও জন্ডিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসের মতো হেপাটাইটিস ই অবশ্য লিভারে সিরোসিস বা ক্যান্সার রোগ তৈরি করে না। আর ই ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই যে আপনা-আপনি সেরেও যান, একথাটাও ঠিক। তাই বলে ই ভাইরাসকে হেলাফেলা করার কোন উপায় নেই। একথা আজ প্রতিষ্ঠিত যে আমাদের মতন দেশগুলোতে লিভার ফেইলিওরের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও আগে থেকে লিভার রোগে আক্রান্ত কারো যদি হেপাটাইটিস ই হয় তবে তাদের ক্ষেত্রে ঝুকিটা সবচাইতে বেশী।

এমনকি আগে থেকে কোন লিভার রোগ নেই এমন ব্যক্তিদের বেলাতেও এদেশে লিভার ফেইলিওরের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। আমাদের দেশে পরিচালিত গবেষণায় আমরা একথার প্রমাণ পেয়েছি।

হেপাটাইটিস ই মূলত পানিবাহিত একটি ভাইরাস। মূলত বলার কারণ এই যে, পাশ্চাত্য ও জাপানে পরিচালিত গবেষণায় এখন জানা গেছে যে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের মতন হেপাটাইটিস ই ভাইরাসও ছড়াতে পারে। পাশপাশি পৃথিবীর অনেক দেশেই পশুপাখির মাধ্যমেও হেপাটাইটিস ই সংক্রমনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশী ভারতে গবেষকরা অবশ্য এর প্রমাণ পাননি।

আধুনিক বিজ্ঞানের জানা তথ্য মতে পৃথীবিতে হেপাটাইটিস ই -এর প্রথম মহামারীটি হয়েছিল ৫০ এর দশকের মাঝামাঝিতে দিল্লীতে। এ সময় প্রায় ২৯ হাজার লোক হেপাটাইটিস ই -তে আক্রান্ত হয় । আর হেপাটাইটিস ই -এর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মহামারীটি দেখা দিয়েছিল চীনের জিনজিয়ানে ১৯৮৬ সালে যা স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ২০ মাস আর এতে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার লোক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই মহামারীগুলো দেখা দিয়েছিল কোন একটি বন্যার পর। ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা আর রাশিয়া, এসমস্ত দেশের অভিজ্ঞতাতে দেখা যায় হয় বর্ষাকাল অথবা কোন বন্যা বা জলোচ্ছাসের পরপরই হেপাটাইটিস ই মহামারী দেখা দেয়। এর উদাহরণ সুনামী উত্তর ইন্দোনেশিয়া। আমাদের দেশেও বন্যার পরে অনেক সময় হেপাটাইটিস ই ছড়িয়ে পরে। আর এর প্রধান কারণ বন্যার সময় সুয়ারেজ লাইন আর কাচা-পাকা টয়লেটের বর্জ্যে খাবার পানি সরবরাহ লাইন আর পাশাপাশি পুকুর-জলাশয় ইত্যাদি দূষিত হয়ে পরা। সাধারণত এ ভাইরাস শরীরে ঢোকার মোটামুটি এক মাস পরে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

হেপাটাইটিস ই -এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ওষুধ এখনও বাজারে নেই । চীনে হেপাটাইটিস ই ভ্যাকসিনের যে ট্রায়ালটি হয়েছে তাও সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা দেয় না বলেই প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে। অতএব বাচতে হলে জানতে হবে এ ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় আর তা হলো ফুটিয়ে পানি খাওয়া। ইদানিং খুব জনপ্রিয় ফিল্টারগুলো হেপাটাইটিস ই ভাইরাস ফিল্টার করতে পারে না। ফুটিয়ে পানি খাওয়া আর বেছে, বুঝে পানি খাওয়ার তাই কোন বিকল্প নেই। এতে শুধু হেপাটাইটিস ই নয়, বরং টাইফয়েড আর ডায়রিয়ার মতন আরো অনেক পানিবাহিত রোগ থেকেই বাচা যাবে। আর এত কিছুর পরও যদি হেপাটাইটিস ই হয়েই যায় তাহলে অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

মালা আর তাবিজে হেপাটাইটিস ই সারে না। এ রোগ যার সারার তার আপনিতেই সারে। সমস্যা হলো এর প্রাণঘাতি কমপ্লিকেশনগুলো নিয়েই। হেপাটাইটিস ই আক্রান্ত কার যে কমপ্লিকেশন হবে আর কার যে হবে না তা আগে থেকে বলা যায় না। আর একবার এগুলো ভালভাবে দেখা দিলে তা থেকে রোগীকে সুস্থ করা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম হাসপাতালেও দুষ্কর। প্রয়োজন তাই রোগীকে রোগের শুরু থেকে চিকিৎসায় রাখা আর কোন কমপ্লিকেশন দেখা দিলে শুরুতেই তার চিকিৎসা করা। এতেই সবার মঙ্গল।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি