ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি ডেকে আনবে বিপদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:২২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ইসরাত জাহান

ইসরাত জাহান

Ekushey Television Ltd.

আমাদের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান কার্বোহাইড্রেট। যা শরীরে ভেঙ্গে গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজটাই হলো চিনি। আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয় এই গ্লুকোজ।   

এশিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য মোট ক্যালরির ৫৫% থেকে ৬০% আসে গ্লুকোজ থেকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার আমাদের শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে। তাই আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট দরকার। চিনি ভেঙ্গে যে গ্লুকোজ হয় সেটা আমাদের শরীরে শোষণ হয়। সরাসরি চিনি খেলে সেটা কিন্তু শোষণ হবে না। গ্লুকোজ ভেঙ্গে এটি এটিপি তৈরী করে যে এটিপি থেকে আমরা শক্তি পাই। আমাদের শরীর কর্মক্ষম থাকে।        

কিন্তু চিনি শুধু খেলেই হবে না। কতোটুকু চিনি খাব, কোন ধরনের চিনি খাব বা চিনি খাওয়ার পর করণীয় কী- এসব নিয়ে রয়েছে নিয়ম কানুন। সেই নিয়ম কানুনে হেরফের হলে হতে পারে বিপদ। তাই আমরা আজ চিনির ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়েই  আলাপ করব।    

আমরা যেটাকে সাদা চিনি বলি অর্থাৎ রিফাইনড চিনি সেটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সরাসরি আখ থেকে উৎপাদিত চিনি (লাল চিনি) শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার বেশী খেলে আমাদের শরীরে ক্যালরি বেশী আসে।  আমরা যদি ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করি তাহলে শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হতে থাকবে। এই অতিরিক্ত ক্যালরি ব্যাবহৃত হওয়ার সুযোগ না পায় বা বার্ণ হতে না পেরে জমা হতে থাকে তাহলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোলস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। ফলে স্ট্রোক করতে পারেন। রক্তচাপ বৃদ্ধি পাবে। ওবেসিটি হতে পারে। ওবেসিটির ফলে ওজন আধিক্যের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। হৃদযন্ত্র ও কিডনির নানা ধরনের রোগ দেখা দিবে। লিভারের নানা অসুখ হতে পারে। বয়সের তুলনায় দ্রুত বার্ধক্য জলে আসবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ক্যান্সার ও এইডস জাতীয় ঘাতক ব্যাধিগুলো সহজে শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পায়।  

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষ দৈনিক নয় চা চামচ ও একজন নারী দৈনিক ছয় চা চামচ চিনি গ্রহণ করতে পারবে। তবে এটা নির্ভর করে শারীরিক পরিশ্রমের উপর। সারাদিন ডেস্কে কাজ করে এমন একজন লোকের যে পরিমাণ ক্যালরি দরকার হয় একজন রিক্সাচালকের তারচেয়ে অনেক বেশি ক্যালরি দরকার হয়। একজন রিক্সাচালক যদি দৈনিক ১৫ চামচ চিনিও খায় তাহলে সমস্যা হবে না। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম করেনা এমন একজন লোক যদি পনের চামচ চিনি খায় তাহলে অল্প কিছুদিন পরেই বিপদ দেখা দিবে।    

অস্বীকার করার উপায় নেই, চিনি বা চিনিজাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ সবার আছে। তাই যদি প্রয়োজনের বেশী চিনি আমরা খেয়েও ফেলি সেটা জোরে হাঁটা, দৌড়ানো, শারীরিক পরিশ্রম সহ নানা ভাবে বার্ণ করে ফেলতে হবে। সেজন্য সকালে বা বিকালে বা সন্ধ্যায় দশমিনিট করে হাঁটা যেতে পারে। হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। ফলে ঘাম হবে। অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ণ হয়ে যাবে।

যারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করে তাদের ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। ডায়াবেটিস থেকে আরও বেশী সমস্যা হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশী থাকে। `ইনসুলিন` নামক হরমোনটা চিনিটাকে কাজে লাগায়। কোন কারণে যদি ইনসুলিন ব্যবহার করা সম্ভব না হয় তাহলে এই সুগার রক্ত ও ইউরিনে চলে আসে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে এমনিতেই সুগারের পরিমাণ বেশী থাকে। তাই তাদেরকে সতর্ক করা হয় যাতে করে শরীরে সুগার পরিমাণ আরও বেড়ে না যায়।   

সুগারের কিন্তু অনেক রকমফের আছে। আমরা ভাতের সাথেও সুগার পাই আবার মিষ্টি খেলে সেখান থেকেও সুগার পাই। তবে মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার থেকে যে চিনি পাই তা সরাসরি রক্তে গিয়ে মিশে। ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। রোগীর তখন অস্বস্তি বেড়ে যায়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের বলা হয় যেন কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট (অপরিশোধিত শর্করা) গ্রহণ করতে বলা হয়। যা হজম হতে সময় লাগে। যেমন ভাত ও রুটি থেকে প্রায় সমপরিমাণ ক্যালোরি আসে। কিন্তু আমরা ডায়াবেটিক রোগীদের ভাত না খেয়ে রুটি খেতে বলি। কারণ ভাত খুব তাড়াতাড়ি হজম হয় ও রক্তে গ্লুকোজ মিশে যাচ্ছে। যতো তাড়াতাড়ি খাবার হজম হবে ততো তাড়াতাড়ি পরবর্তী খাবার খাওয়ার তাগিদ আপনি অনুভব করবেন। কিন্তু রুটি খেলে কাজটা খুব ধীরগতিতে হবে। ওটস খেলেও ধীরগতিতে ভাঙ্গবে। কারণ এগুলো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। ফলে অনেক্ষণ ধরে আপনার ক্ষুধা লাগবে না। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের আমরা যেটা বলি, কম খেতে হয়, সেটা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা অপরিশোধিত শর্করা খেলে মেনে চলা সম্ভব।   

চিনিতে আমরা যে উপাদান পেয়ে থাকি তা কিন্তু অন্যান্য খাদ্যেও উপাদান হিসেবে পাওয়া যায়। তাই অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।   

লেখক: ডায়াটেশিয়ান ও নিউট্রিশিয়ানিস্ট, বিআরবি হসপিটাল, ঢাকা।   
  
আআ/এসি  


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি