মোবাইলে অতিকথনের ভয়ংকর দিক
প্রকাশিত : ১৯:৩৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১০:০৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মোবাইল আমাদের জীবনে যেমন সুফল বয়ে এনেছে তেমনি ঝুঁকিও অনেক। আমরা যারা নাক, কান ও গলা বিভাগে কাজ করছি তারা জানি, মোবাইল কানের জন্য কতোটা বিপজ্জনক।
আমাদের কাছে নিয়মিত যেসব রোগী আসছে তাদের বড় একটা অংশ তরুণ। যারা মোবাইল ফোনে আশক্ত। প্রতিনিয়ত হেড ফোনে গান শুনছে। ভিডিও দেখছে। অনেকে এমনো আছে যারা রাতে ঘুমানোর সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। সারা রাত কানে গান বাজছে।
এসব তরুণরা প্রায়ই আমাদের কাছে কানের সমস্যা নিয়ে আসছে। তাদের কাছে যখন জিজ্ঞেস করি কানের সমস্যা কী, তখন তারা জানায় কানে শুনতে পাচ্ছে না, বা অস্পষ্ট শুনছে, বা খুব কাছের শব্দকে দূরের মনে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলে কানের পাশে সবসময় কেমন একটা শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কেউ কেউ বলে তাদের কান ব্যাথা করে।
কিছু পেশা আছে মোবাইল নির্ভর। তাদেরও এ সমস্যাটা হয়। কল সেন্টারগুলোতে যারা দীর্ঘদিন কাজ করছে তাদের এসব সমস্যা হতে দেখা যাচ্ছে।
আমরা এর জন্য প্রথমত ও প্রধানত যে সমস্যাটা চিহ্নিত করি সেটা হলো মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার। বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম না মানা। শুধু যে কানে কম শুনছে তাই নয়, বরং মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহারে পড়ালেখায় মনোযোগ কমছে। আচরণে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। ঘুম ব্যাহত হচ্ছে।
কান শরীরের একটি স্পেশাল অর্গান। কানে কম শোনার কারণে শরীরের অন্যান্য কার্যক্রম কমে যায়। এসব রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা তাদের কান পর্যবেক্ষণ করি। কিছু পরীক্ষা নীরীক্ষা করে দেখি। যাচাই করি তার শ্রবণ শক্তি কোন পর্যায়ে আছে। মানুষের সাধারণ শ্রবণ ক্ষমতা হলো ৩০-৪০ ডেসিবেল। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় তার শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ সে বধিরতার দিকে যাচ্ছে।
আমি সব রোগীকেই বলি, শুধু রোগী নয় বরং সবার জন্যই বলি জরুরি কাজ ছাড়া মোবাইল ব্যবহার না করাই ভাল। কথা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। এককানে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা মোটেও উচিত নয়। কিছুক্ষণ পরপর কান পরিবর্তন করা উচিত। কানে মোবাইল না লাগিয়ে লাউড স্পিকারে কথা বলা ভাল।
দাঁত থাকতে যেমন দাঁতের মর্যাদা বুঝা যায় নি তেমনি কানের ক্ষতি যখন ধীরে ধীরে হয় তখনো বুঝা যায় না। কিন্তু যখন চূড়ান্ত ক্ষতি হয় তখন কিছুই করা থাকে না। তাই আসুন, মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক হই।
(লেখক: ডা. তাপস চক্রবর্তী। বিভাগীয় প্রধান। নাক কান গলা বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ।)
আ আ//