ঢাকা, বুধবার   ০৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

হৃদরোগ নিরাময়ে মেডিটেশন

প্রকাশিত : ১৮:০৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৮:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শ্যামল আতিক

শ্যামল আতিক

Ekushey Television Ltd.

হৃদরোগ বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা এবং একটি আতংক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের মৃত্যুর একটি বড় কারণ এই হৃদরোগ। বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে- বর্তমান বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের শতকরা ১০ ভাগ হৃদরোগে আক্রান্ত এবং এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আমরা যদি একটু অতীতে ফিরে যাই তাহলে দেখব- এতো হৃদরোগ, এত অসুস্থতা আমাদের চারপাশে ছিল না। আগে কোন গ্রামে বা মহল্লায় হয়তো দু-একজন বা তারও কম হৃদরোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই চিত্র ভয়াবহ। এখন ঘরে ঘরে হৃদরোগী, প্রতিটি ঘর একটি ওষুধের ডিসপেনসারিতে। এর কারণ কি? জীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, ভুল বা অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাবাস, কায়িক পরিশ্রম না করা, বদ অভ্যাস (ধূমপান, মদ্যপান) এবং পারিবারিক আশান্তিসহ সর্ব প্রকারের টেনশনই হলো হৃদরোগের প্রধান কারণ।

প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে শহর কিংবা গ্রাম, সব জায়গায়ই আমাদের হাটার পরিমান কমে গেছে। সর্বত্রই যানবাহনে চলাচল করি। আমাদের জীবনযাত্রা হয়ে গেছে শারীরিক পরিশ্রমহীন। খাদ্যাবাসেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নিয়মিত শাকসব্জির পরিবর্তে আমরা এখন খাচ্ছি ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত এবং অতিরিক্ত মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার। আর ধূমপানের কথা না বললেই নয়। সিগারেটের নিকোটিন হৃদপিন্ডের ধমনীকে সংকুচিত করে। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, যা করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিক জীবনের নানা সমস্যা ও টেনশন। তবে কারণ যাই হোক না কেন, এই রোগের পরিণতি খুব একটা সুখকর নয়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বহু মানুষ তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় এই রোগের পেছনে খরচ করতে বাধ্য হয়েছেন। হাজার হাজার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। আর দুর্ভোগের কথা নাই বললাম। এছাড়া চিকিৎসা করেও যে আপনি খুব স্বস্তিতে থাকতে পারবেন, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।

করোনারি হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা বলতে আমরা বুঝি এনজিওপ্লাস্টি, বাইপাস সার্জারি, রোবটিক সার্জারি ইত্যাদি। কিন্তু খোদ চিকিৎসকরাই এখন স্বীকার করছেন- এগুলো কোন স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ সার্জারির পর রোগীরা আবার ডাক্তারের কাছে আসেন সমস্যা বা পুনঃব্লকেজ নিয়ে। ফলে বেশিরভাগ রোগীই হৃদরোগের দুষ্ট চক্রে পড়ে যান। অন্যদিকে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে আছে সার্জারির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ভার। মার্কিন কার্ডিওলজিস্ট ডা. ক্রিচটন দীর্ঘ গবেষণার পর দেখিয়েছেন –হৃদরোগের মূল কারণ হলো মানসিক চাপ। তিনি বলেছেন, কোলেস্টেরল বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে করোনারি আর্টারিকে প্রায় ব্লক করে ফেললেই যে হার্ট এট্যাক হবে, এমন কোন কথা নেই। করোনারির আর্টারির ৮৫ শতাংশ ব্লকেজ নিয়েও একজন ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন। আবার এমন দেখা গেছে, পরিস্কার আর্টারি নিয়েও বহু মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আসলে অত্যাধিক মানসিক চাপ ও দুঃশ্চিন্তা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান অনুঘটক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রচলিত এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানসিক চাপ বা দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তির কোন সমাধান নেই।

১৯৮৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার কার্ডিওলজিস্ট ডা. ডিন অরনিশ ৪০ জন গুরুতর হৃদরোগী নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এসব হৃদরোগীকে এক বছর ধরে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করানোর মাধ্যমে হৃদরোগ থেকে মুক্ত করে তিনি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। ডাক্তারদের রক্ষনশীল চিন্তামূলে আঘাত হেনে তিনি প্রমান করতে সক্ষম হন- হৃদরোগ হলেই বাইপাস বা এনজিওপ্লাস্টি করাতে হবে, এটা আসলে ঠিক নয়। ওষুধ বা সার্জারি ছাড়া যে হৃদরোগ নিরাময় করা যায়, এটা তিনিই প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন। তার এই গবেষণা কাজকে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সে বছর প্রথম পৃষ্ঠার খবর হিসেবে প্রকাশ করে। মেডিটেশনের মাধ্যমে হৃদরোগ নিরাময়ে অসাধারণ সাফল্যের ওপর তার বিখ্যাত বই “প্রোগ্রাম ফর রিভার্সিং হার্ট ডিজিস” বেস্ট সেলার গ্রন্থে রূপান্তরিত হয়। মেডিটেশনের মাধ্যমে হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে ডা. ডিন অরনিশের গবেষণা কাজ এতো ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে যে এটি এখন আর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। সার্জারি ছাড়া হৃদরোগ নিরাময়ের এ চিকিৎসা পদ্ধতিই এখন সবচেয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। গত দু-দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বেই এটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আমরা সবাই জানি, মন সেরা ডাক্তার আর দেহ সেরা ফার্মেসি। শরীরের চেয়ে মন অনেক বেশি শক্তিশালী। মনের গতি, শক্তি ও পরিধি সবই ব্যাপক। মনের এই দুর্দমনীয় শক্তির প্রভাবে শরীরে এমন কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এমনকি রোগ নির্মূলেও সাহায্য করে। যুগে যুগে মহামানবরা, নবী-রসূলরা এবং আধ্যাত্মিক সিদ্ধপুরুষরা রোগ নিরাময়ে ধ্যানের এই শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। তাই এটি নতুন কিছু নয়। এটি হাজার বছরের শাশ্বত চেতনারই একটি আধুনিক ও সমন্বিত রূপ। বর্তমানে হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের এ প্রক্রিয়া সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে গ্রহনযোগ্য ও সর্বজন স্বীকৃত।

আসলে মেডিটেশন করলে মন প্রশান্ত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হয়, হৃদস্পন্দন ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। সর্বোপরি দেহ ও মন শিথিল হয়। মেডিটেশনের প্রথম প্রাপ্তিই হলো প্রশান্তি। নিয়মিত মেডিটেশনে মনের এই প্রশান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। ব্রেনে আলফা ওয়েভ সৃষ্টি হয় বলে, টেনশন থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। আস্তে আস্তে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে এবং জীবনে আসে এক চমৎকার ছন্দ। যার ফলে রোগী নিরাময় লাভ করে। তাই হৃদরোগের সুস্থতার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন করুন।

এসএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি