ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ

প্রকাশিত : ১০:০৯, ১৪ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১০:২১, ১৪ মার্চ ২০১৯

প্রতি বছরের মতো এবারও ১৪ মার্চ ১২৬টি দেশে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য সর্বক্ষেত্রে’। মানবদেহে কিডনির ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাই কিডনি দিবসের প্রধান লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি বছর ২৪ লাখের বেশি মানুষ জটিল কিডনি রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে থাকে।

শুধু তাই নয়, কিডনি রোগকে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর ষষ্ঠতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই বিশ্ব কিডনি দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল- কিডনি রোগ প্রতিরোধ, কিডনি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো শনাক্ত এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কীভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় ইত্যাদি।

বর্তমানে কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। হার্ট ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত, হঠাৎ কিডনি অকেজো হওয়া, স্থুলতা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের কারণে কিডনি রোগ হয়ে থাকে।

বর্তমান বিশ্বে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ তাৎক্ষণিক কিডনি অকেজো রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর ১৭ লাখেরও বেশি মানুষ হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে মারা যাচ্ছে।

বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সের ওপরে শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ জটিল কিডনি রোগে ভুগছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা, বংশগত কিডনি রোগের উপস্থিতি, ধূমপান এবং বয়স ৬০ বছরের উপরে হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আমাদের শরীরে মেরুদণ্ডের দু’পাশে অনেকটা শিমের বিচি আকৃতির ৯-১১ সেন্টিমিটার আকারের দুটি কিডনি রয়েছে। কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে, মূত্র তৈরির মাধ্যমে শরীরের সব ধরনের খাবার ও ওষুধের পরিপাক হওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় উপাদান বের করা, শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, অম্লক্ষারের সমতা রক্ষা করা এবং খনিজ উপাদানের মাত্রা সঠিক রাখা।

এছাড়াও রক্ত তৈরির জন্য ও হাড়ের অস্থিমজ্জার পুনর্গঠনের জন্য ইরাইথ্রোপয়েটিন এবং কার্যত ভিটামিন ডি তৈরি করা। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে উপরোক্ত বিষয়গুলোর কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়; যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা ও বমি উপসর্গ দেখা দেয়।

বিশ্ব কিডনি দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিডনি রোগ শনাক্ত করা এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

খুব অল্প খরচেই কিডনি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। বলা বাহুল্য, উচ্চ রক্তচাপ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাপা যায় এবং অ্যালবুমিন ও রক্তে গ্লুকোজ খুব কম খরচে র্নিণয় করা যায়।

উন্নত দেশের তুলনায় স্বল্প আয়ের দেশগুলোয় কিডনি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৮০ ভাগ রোগী কিডনি সংযোজন ও ডায়ালাইসিস চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

পক্ষান্তরে স্বল্পোন্নত দেশে শতকরা ১০ ভাগ রোগী ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের সুযোগ পায়। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশে শতকরা ৭০ ভাগ ডায়ালাইসিস রোগী অর্থের অভাবে ৩ মাসের বেশি চিকিৎসা চালাতে পারে না; ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তারা মৃত্যুবরণ করে।

অবকাঠামোর অভাব, ওষুধের স্বল্পতা ও উচ্চমূল্য,পুষ্টিহীনতা এবং রোগের সংক্রমণের কারণে স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি সংযোজনের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম।

কিডনি রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত পানি পান করা, সবল ও কর্মক্ষম থাকা, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা, ধূমপান ও মদ্যপান হতে বিরত থাকা, বেদনানাশক ওষুধ পরিহার করা এবং সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কিডনি রোগ শনাক্তকরণের জন্য স্বল্পব্যয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

অধ্যাপক শামীম আহমেদ : সাবেক পরিচালক, জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইন্সটিটিউট

 

টিআর/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি