জেনেনিন কোন খাবারের কোন গুণ?
প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ৮ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৪:০০, ৯ জুন ২০১৯
আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই এর ভেতরেই রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কিন্তু আমাদের জানা নেই কোন কোন খাবার কি কি রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে খাবার সঠিকভাবে নিয়মিত খেলে রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার একটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হলো :
রসুন : ভোজন আর ওষুধের এক সুন্দর মিশ্রণ হলো রসুন। এটি শরীরকে রোগের সঙ্গে লড়তে শক্তি প্রদান করে আর বেশ কিছু রোগের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রসুন রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে, তার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক থেকেও বাঁচায়। ক্যান্সার, টিউমার এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। অ্যালার্জি, মানসিক চাপ দূর করে তেমনি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সহায়তা করে। রসুন ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস আর থ্রম্বোসিসের সঙ্গে লড়ার শক্তি প্রদান করে। তাই রসুনকে প্রতিদিন খাবারের মেন্যুতে বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক।
মধু : চিনিকে চিকিৎসকরা ‘হোয়াইট পয়জন’ হিসেবে দেখছেন। চিনি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। ছোট থেকে বড় সবার জন্যই ক্ষতিকর। তাই মধু হচ্ছে চিনির এক সুন্দর বিকল্প। চিনির থেকে বেশি মিষ্টি হচ্ছে মধু। আর শরীর একে দ্রুত শুষেও নেয়। মধুতে চিনি ছাড়াও এতে ভিটামিন-বি, কিছু খনিজের সঙ্গে সঙ্গে অ্যাঞ্জাইমও থাকে। শিশুদেরকে ছোট বয়স থেকেই মধু খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
লেবু : ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস লেবু। এতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম আর ক্যারোটিনও থাকে। লেবুতে অ্যান্টিসেপটিকের গুণও রয়েছে। এটি স্যালাড, ভাত ও অন্যান্য খাবারের সঙ্গেও খাওয়া যায়।
এলাচ : খাবার তৈরির মশলা আর পানীয়ের স্বাদ বাড়াবার জন্য এলাচ ব্যবহার হয়ে থাকে। এলাচ পেট ফাঁপলে আরাম প্রদান করে এবং এটি পাচক হিসেবেও কাজ করে।
লবণ : চিকিৎসকরা রান্নায় ও খাবারে লবণ কম নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অন্যান্য স্বাদের মতই লবণও হচ্ছে স্বীকৃত স্বাদ। তাই লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে লেবু, ভিনিগার, টমেটো ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
মাশরুম : ভিটামিন-বি এর ভালো উৎস হচ্ছে মাশরুম। এতে পটাশিয়াম, ফসফরাস, তামা আর আয়রন থাকে বেশি মাত্রায়। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক গুণ। চিকিৎসকরা রক্তে ফ্যাটের স্তরকে কম করার জন্য মাশরুমকে লাভজনক বলে মনে করেন। এটি অ্যান্টি-টিউমার। আর রোগের সঙ্গে লড়ার শক্তি বৃদ্ধি করে।
পেঁয়াজ : আমরা রন্ধন সামগ্রী মনে করে আসছি পেঁয়াজকে। কিন্তু এর রয়েছে প্রচুর গুণাবলী। পেঁয়াজ হার্ট অ্যাটাক থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। উচ্চ রক্তচাপ আর কোলেস্ট্রলের মাত্রাকে কম করতেও সহায়তা করে পেঁয়াজ।
পেঁপে : পাচন-ক্রিয়ায় সহায়তা করে পেঁপে। এতে এমন অ্যাঞ্জাইম থাকে, যেটা প্রোটিনকে হজম করতে সহায়তা করে। বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-বি আর ভিটামিন-সি’র ভালো উৎস হচ্ছে পেঁপে।
আলু : প্রোটিন, পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি, আয়রন, ফসফরাস আর অ্যাঞ্জাইমের ভালো উৎস হচ্ছে আলু। এটি হাইপারটেনশন কম করার সহায়ক। আলু আন্ত্রগুলোর ক্রিয়াশীলতাকেও বৃদ্ধি করে।
কুমড়া : বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন আর কিছু ভিটামিন-বি পাওয়া যায় কুমড়াতে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বা স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
পালং শাক : আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্লোরোফিল, বিটা-ক্যারোটিন, রিবোফ্লাভিন, সোডিয়াম আর পটাশিয়ামে ভরপুর পালং শাক। এটি মূত্রবর্ধক আর রেচকও হয়।
হলুদ : শুধুমাত্র মশলা বা ভাজার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয় না হলুদকে আমরা ভোজন সংরক্ষক আর রং প্রদানকারী তত্ত্ব হিসেবেও ব্যবহার করে থাকি। অব্সিডেশন আর পোড়ার বিরুদ্ধে এক দুর্লভ গুণ আছে হলুদে। বয়সের সঙ্গে যুক্ত রোগগুলোকে দূর করে, ক্যান্সার কোশিকাগুলোর বিকাশকে বাধা দেয়, লিভারকে কোলেস্ট্রল থেকে বাঁচায়, শরীরের জয়েন্টের ফোলা ভাব দূর করে, মহিলাদের মাসিক ধর্মের যন্ত্রণাকে কম করে আর এইডসের চিকিৎসাতেও সহায়তা করে হলুদ।
খাবার খাবেন ধীরে ধীরে। তাড়াতাড়ি খাবার গেলাটা পাচনের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। আপনি যদি ধীরে ধীরে খাবার খান তাহলে সেটাকে আপনি ভালো করে চিবাবেন আর খাওয়ার আনন্দও বেশি করে উপভোগ করবেন।
তথ্যসূত্র : ডা. বিমল ছাজেড়ের হৃদরোগ থেকে মুক্তি গ্রন্থ।
এএইচ//