ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয়
প্রকাশিত : ১৩:৩৭, ২৭ জুলাই ২০১৯
ডেঙ্গু এখন বেশ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৯০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে ঢাকা বাইরেও ১০ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর, গাজীপুর ও কুষ্টিয়া জেলা।
এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। চোখ, নাক ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, বমি, পেটব্যথা, খাদ্যনালি, মূত্রনালিসহ বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণের উপসর্গ নিয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা হাসপাতালে বেশি আসছে। জ্বর, মাথাব্যথার উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কমই পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীরই রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই এবারের ডেঙ্গু অন্যবারের চেয়ে আলাদা বলে মনে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে যায় বা হেমাটোক্রিট (রক্তের মোট পরিমাণের সঙ্গে লোহিত কণিকার মোট পরিমাণের অনুপাত) ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। এর সঙ্গে রক্তনালিতে রক্তপাতের কারণে প্রোটিন কমে যাওয়া, বুকে-পেটে পানি জমাসহ অন্যান্য জটিলতাও দেখা দেয়। সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয়। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে ২০০০ সাল থেকে। কাজেই এবার অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে। সে অনুযায়ী ডেঙ্গু তিন প্রকার।
১. সতর্কসংকেতহীন ডেঙ্গু ২. সতর্কসংকেতসহ ডেঙ্গু এবং ৩. মারাত্মক বা সিভিয়ার ডেঙ্গু।
ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহ:
* তীব্র জ্বর এবং মাথাব্যথা।
* চোখে ব্যথা হওয়া বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া।
* মাংসপেশি এবং হাড়ের সংযোগস্থানে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
* শরীরের চামড়ায় লালচে ছাপ বা র্যাশ উঠা।
* বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং খাওয়ায় অরুচি হওয়া।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ:
বর্ষায় (এপ্রিল-অক্টোবর) ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এ সময় অধিক সতর্ক থাকুন। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। অফিস, ঘর ও আশেপাশে পানি জমতে দিবেন না। যে কোন পাত্রে জমিয়ে রাখা/জমে থাকা পানি ৩ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করুন। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরুন। দিনে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও মশারী ব্যবহার করুন। মশা তাড়ানোর ঔষুধ বা স্প্রে ব্যবহার করুন। ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচে বা অন্যকোন স্থানে বদ্ধ পানি থাকলে তা পরিষ্কার করুন। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ঔষুধ বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গুর প্রতিকার:
জীব্র জ্বর, মাথাব্যাথা ও মাংসপেশীতে ব্যাথা, শরীরে লালচে দানা ইত্যাদি ডেঙ্গু রোখের লক্ষণ হলেও সাম্প্রতিক কালে এবং ব্যতিক্রম পাওয়া যাচ্ছে। জ্বরে প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য ব্যাথানাশক ঔষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ান। জ্বর হলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন ও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করুন। জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখুন। বিশ্রাম নিন এবং রক্তচাপ কমে যাচ্ছে কিনা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
এমএস/