ডেঙ্গু নিয়ে নানা বিভ্রান্তিতে যা করণীয়
প্রকাশিত : ১৫:১৮, ২৮ জুলাই ২০১৯
বর্ষা এলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। যার ফলে সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তাও ছড়ায়। যার মূলে রয়েছে কিছু ভুল ধারণা। আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অনেকে বলেন এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, এটা খাবেন, ওটা খাবেন না ইত্যাদি। যার ফলে নানা বিভ্রান্তিতে থাকেন রোগীরা।
এ বিভ্রান্তিগুলো অতি সত্তর দূর করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদের ডা. এবিএম আবদুল্লাহ কি বলছেন তা জেনে নিন :
এ রকম বিভ্রান্তিতে রয়েছেন সদ্য নবজাতকের মায়েরা। এসব মায়েরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে সংশয়ে থাকেন। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে থাকতে ভয়ে ভয়ে থাকেন অনেকে। ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে এক বিছানায় শোয়া, একসঙ্গে থাকা খাওয়া বা রোগীর ব্যবহার্য কোনো জিনিস ব্যবহার করায় কোন বাধা নেই।
ডেঙ্গুজ্বরের প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধপত্র ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিতে থাকেন রোগীরা। এখানে বিভ্রান্তির কিছু নেই ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত তাই জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও এর সঙ্গে প্রচুর পানি এবং শরবত জাতীয় তরল খাবারই যথেষ্ট। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় রোগী এবং চিকিৎসক উভয়েই রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ যদি রক্তক্ষরণ না হয় এবং রোগীর রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে, তবে রক্ত পরিসঞ্চালন করার কোনো প্রয়োজন নেই।
এক্ষেত্রে রক্ত দিলে লাভ তো হবেই না, বরং অন্য কমপ্লিকেশন এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট কম হলেই অনেকে রক্ত দিয়ে বসেন। এতে কোনো লাভ হবে না। মনে রাখতে হবে, শুধু কম প্লাটিলেট কাউন্টের জন্য রক্ত দেয়া উচিত নয়।
ডেঙ্গুজ্বরের ৫ বা ৬ দিনে রোগের স্বাভাবিকতাতেই প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে থাকে, ২ বা ৩ দিন পর তা আপনা-আপনি বাড়তে শুরু করে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। অনেক সময় প্লাটিলেট কাউন্ট অল্প কমে গেলেই রোগী ও চিকিৎসক খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন হয় না।
এক ইউনিট প্লাটিলেটের জন্য চার ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয় এবং সেপারেটর দিয়ে আলাদা করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। অথচ রক্তে প্লাটিলেটের হাফ লাইফ মাত্র ৬ ঘণ্টা। তাই প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনের সুফল হয় অতি স্বল্পমেয়াদি।
এছাড়া অপ্রয়োজনীয় এবং তাড়াহুড়ো করে প্লাটিলেট দেয়ায় হেপাটাইটিস বি অথবা সি, এমনকি এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বারবার প্লাটিলেট দিলে রক্তে এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে প্লাটিলেট দিলে লাভ না হয়ে বরং ক্ষতি হতে পারে। কাজেই প্লাটিলেট দেয়ার জন্য রোগী এবং ডাক্তারের অযথা ব্যতিব্যস্ত হওয়ার বা চিন্তার কোনো কারণ নেই।
ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে এন্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, যেমন টাইফয়েড ফিভার বা অন্য কোনো ইনফেকশন, যার জন্য এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন।
অনেকে মনে করেন ডেঙ্গুতে এন্টিবায়োটিক ক্ষতি করতে পারে এবং তা পরিহার করতে হবে, যা একটি ভুল ধারণা। ডেঙ্গুতে এন্টিবায়োটিক কোনো ক্ষতি করবে না। তবে মাংসে ইনজেকশন দেয়া যাবে না।
ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। রোগী ও রোগীর লোকদের অভয় দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এএইচ/