ঢাকা, বুধবার   ০৫ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চায় মরিয়ম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ০০:০৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

যে বয়সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে হেসে খেলে স্কুলে যাওয়ার কথা মরিয়মের; সে বয়সে সে এখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। মরিয়ম (১৫) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ বিএম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবা মোমিন একজন হতদরিদ্র কৃষক। এই মেধাবী ছাত্রী দুই বছর বয়সে অগ্নিদগ্ধ হয়। ওই সময় আগুনে তার শরীরের ৫৫ ভাগ পুড়ে যায়।

প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মাঝে মাঝে নানা সমস্যা দেখা দেয় মরিয়মের শরীরে। আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তার দুটি হাত শরীরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে হাত দুটি আলাদা করার জন্য দুইবার তার শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়। ডাক্তার বলেছেন আরও চারবার তার শরীরে আস্ত্রোপচার করতে হবে।

রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে আহাজারি করছে অসহায় মরিয়ম।

মরিয়ম জানায়, আমার সামনে এসএসসি পরীক্ষা। অসুস্থ থাকায় নবম শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিতে পারিনি। সারাক্ষণ হাসাপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগে না। খুব কষ্ট হয় আমার।

আবেগতাড়িত হয়ে মরিয়ম বলে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি সুস্থ্য জীবন ফিরে পেতে চাই। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। বন্ধুদের সঙ্গে হাসিখুশি ভাবে মিশতে চাই। পড়াশুনা শেষে ভাল চাকরি নিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।

আরও জানান, প্রথমবার একটানা ৪ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এসময় শরীরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে একটি হাত আলাদা করা হয়। চার বছর পর আবার ভর্তি হই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবারও আস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীর থেকে আরও একটি হাত আলাদা করা হয়। এখন একটু ভাল আছে মরিয়ম। চার মাস আগে ফের তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আবার কবে মরিয়মের শরীরের অস্ত্রোপাচার করা হবে এখনো কিছুই জানাননি ডাক্তার।

এবিষয়ে মরিয়মের মা মুরশেদা জানান, মেয়ের বয়স যখন দুই বছর, তখন হারিকেন থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হয় সে। অভাবের সংসারে ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। প্রাথমিক চিকিৎসায় মরিয়ম সুস্থ হলেও স্থায়ীভাবে ভাল ছিলো না। ফলে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।

এদিকে অভাবের সংসারে যেখানে ঠিক মতো খাবার জোটে না, সেখানে কিভাবে তারা ঢাকায় মেয়ের চিকিৎসা করাবে এ চিন্তায় দিশেহারা মরিয়মের পরিবার।

মরিয়মের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (প্লাষ্টিক সার্জারী) ডা. কৌশিক মল্লিক একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, তার চিকিৎসা চলছে। এটা একটা জটিল সমস্যা। আস্তে আস্তে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। আমরা সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

মরিয়মের বাবা মোমিন বলেন, এ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করেছি। খেয়ে না খেয়ে মেয়ের চিকিৎসা করেছি। এখন ঢাকায় চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমার নেই।

মা মুরশেদা বলেন, আমরা গরিব মানুষ, তাই মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারছি না। নিয়মিত ওষুধ লাগে। এসব ওষুধ কিনতে যে টাকা লাগে সেটার যোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

এসময় অসুস্থ মরিয়মের জন্য তার মা বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। মরিয়ম বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ৬ তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তার একটাই আকুতি সে সুস্থ হয়ে অন্যদের মতো স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়।

টিআর/এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি