ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হার্ট হিরো হোন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সুস্থ, স্বাভাবিক ও আনন্দপূর্ণ জীবনের জন্য দরকার একটি সুস্থ হৃদযন্ত্র। কিন্তু এ যন্ত্রটিকে সুস্থ রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক বিশ্বে জীবনযাত্রার নানামুখী পরিবর্তন, কাজের পরিবেশ সব কিছুই যেন প্রতিনিয়ত হৃদযন্ত্রকে প্রতিকূলতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তার পরও হৃদযন্ত্র ভাল রাখতেই হবে। আর তাই সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের কোনো বিকল্প নেই।

আগামীকাল ২৯ সেপ্টেম্বর পালিত হবে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। ‘হার্ট হিরো হোন’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি পালন করবে বিশ্ব।

বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ। কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই হৃদরোগ যেকোনো সময় কেড়ে নেয় জীবন। সারাবিশ্বে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি লোক মৃত্যুবরণ করেন। যার বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।

একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু পূর্বে হৃদরোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেয়ার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরী।

হৃদরোগের কারণ :
- পারিবারিক হৃদরোগ ইতিহাস
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ-রক্তচাপ
- অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
- অলস জীবনযাত্রা
- অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা।

হার্ট সুস্থ রাখার উপায় :

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ :
ডায়াবেটিস রোগীদের এ্যাথারোস্কে¬রোসিস বেশি হয়। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই রোগীদের অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ :
জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

ধূমপান বর্জন :
হৃদযন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু ধূমপান। ধুমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্র্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হ্রাস :
যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

ভারসাম্যপূর্ণ ওজন :
ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো। স্থূলতায় হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা সমস্যা হতে পারে। ফলে ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে মনোযোগী হতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম :
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের মতো কার্যকর অন্য কোনো পথ নেই। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা চলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি। জিমে যেতে হবে এমন নয়। ঘরেই ব্যয়াম করা যায়। তাও না করতে পারলে প্রতিদিন অবশ্যই হাঁটতে হবে।

অতিরিক্ত লবণ নিয়ন্ত্রণ :
খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়, ফলে হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। অনেকেই খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ খান। এটা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। বেশি লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এ থেকে হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন :
রক্তে উচ্চ চর্বি, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
কম চর্বি ও কম কোলেষ্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন খাশি বা গরুর গোসত, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, কম খেতে হবে। কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ, অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন সয়াবিন, ক্যানোলা, ভুট্টার তেল অথবা সূর্য্যমুখীর তেল খাওয়া যাবে।

মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে :
অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।
নিজের শখের কাজ করা, নিজ ধর্মের চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে। অতিরিক্ত মানাসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর। এজন্য খেলাধুলা, আড্ডা, বইপড়া, যোগব্যায়াম ও ধ্যান হতে পারে চাপ মুক্তির উত্তম দাওয়াই। প্রতি রাতে ভাল ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

মদ্যপান পরিহার :
অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে। বেশি এ্যালকোহল গ্রহণ মানে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়া। এতে হৃদস্পন্দনেও প্রভাব পড়ে। সুস্বাস্থ্য ও সবল হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপানের মতো মদ্যপানও ছাড়তে হবে।

সুন্দর জীবনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য সুস্থ হার্টের বিকল্প নেই। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে কঠিন অসুখ হৃদরোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেতে পারি।

এসএ/

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি