পঙ্গু করার রোগ অস্টিওপোরোসিস
প্রকাশিত : ১১:২৬, ২০ অক্টোবর ২০১৯
হাড়ের ক্ষয় রোগকে বলা হয় অস্টিওপোরোসিস। এটি ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত একটি রোগ। অস্টিওপোরোসিস এমন একটি অসুখ যা হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমিয়ে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর করে দেয়। সাধারণত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগটা বেশি হয়ে থাকে। তবে যারা অলস জীবন যাপন করেন কিংবা কম পরিশ্রম করেন তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া-কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের গঠন ও ক্ষয় একসঙ্গে একই গতিতে চলতে থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে হাড় ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। হাড়ের এই ক্ষয় বাড়তে বাড়তে হাড় যখন নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায় তখন সেই অবস্থাকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়।
অস্টিওপরোসিসের ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হাড় না ভাঙা পর্যন্ত এই রোগের কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তাই এই রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়ে থাকে। অস্টিওপরোসিস হাড়কে এতোটাই দুর্বল করে দেয় যে, সামান্য জোর দিলে বা এমনিতেই ভেঙ্গে যেতে পারে। হাড় ভাঙলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হারিয়ে পঙ্গুও করে দিতে যেতে পারে।
তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারাবিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি ৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ হয়। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ ভাগই মহিলা এবং ২০ ভাগ পুরুষ।
যারা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকির মধ্যে আছেন-
* যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন না
* যারা ব্যায়াম করেন না
* যাদের ওজন কম
* ধূমপায়ীরা ও এলকোহল পানকারী
* যারা ক্ষুধাহীনতায় ভোগেন
* যাদের থাইরয়েড এবং কিডনি রোগ রয়েছে
* যারা বিষন্নতা কাটানোর জন্য অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ করেন
* মনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ পরবর্তী মহিলারা
* যাদের পরিবারে কারোর অস্টিওপোরোসিস আছে
এছাড়া এমন কিছু ওষুধ আছে যা খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাহলো তিন মাসের অধিক সময় ধরে কটিকস্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে, খিঁচুনি-রোধী ওষুধ খেলে, স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, প্রস্টেড ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ইত্যাদি।
অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করবেন যেভাবে...
শৈশব, কৈশোর, যৌবনের বাড়ন্ত বয়সে হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আসল সময়। এ সময় হাড়ের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠন করে নিতে পারলে তা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় এবং ভাঙার ঝুঁকির বিরুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব হয়।
* এ জন্য খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রাখা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে দুগ্ধজাত খাদ্যে। তাই খাবারে রাখুন দুধ, দই, সয়া প্রোটিন, ব্রোকলী বা সবুজ ফুলকপি, শালগম, সামুদ্রিক মাছ।
* প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ভিটামিন ডি দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে হাড়ের গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি রয়েছে এমন খাবারগুলো হলো- ডিম, মার্জারিন, কড লিভার তেল, সামুদ্রিক মাছ, গরু কলিজা এবং ভিটামিন-ডির অন্যতম উৎস হলো সূর্যের আলো।
* খাদ্য তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন, যা আপনার পেশি সুগঠিত করবে। আর প্রচুর পরিমাণে ফল রাখুন খাবারে।
* নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করুন। যারা নিয়মিত হাঁটেন, ব্যায়াম করেন ও কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্ত তাদের হাড়ের ক্ষয় ও হাড় ভাঙার ঝুঁকি কম হয়ে থাকে।
নিয়মিত শরীর চর্চায় মাংসপেশি ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।
* ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। ধূমপানের দেহের হাড় গঠনকারী কোষ অস্টিওব্লুাস্টের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় যার ফলে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অনেকে হাড় ক্ষয় রোগকে তেমন একটা আমল দেন না। কিন্তু এই রোগই আপনাকে পঙ্গু করে দিতে পারে তাই এখনই অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার।
এএইচ/