স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
প্রকাশিত : ১৭:৪২, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২১:০৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যখাতে কিছু পরিবর্তন আনতে চাই। সেটা হবে গুণগত কিছু পরিবর্তন। আমরা অন্যদের থেকে ভিন্ন ও ভালো কিছু করতে চাই। আমরা আমাদের স্বাস্থ্যখাতকে নতুনরূপে সাজাতে চাই এবং এর কিছু নিয়ম পরিবর্তন করতে চাই। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য সম্মেলন এবং বিশ্ব প্রিম্যাচুরিটি দিবস-২০১৯ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইউনিসেফের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর আয়োজন করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার এই গুণগত পরিবর্তনের জন্য শুধু আমি নই, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যারা কাজ করেন তাদেরও মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও যারা উপজেলা, জেলা পর্যায়ে কাজ করেন, প্রত্যেকেরই এ পরিবর্তনে অবদান রাখতে হবে। আমাদের এ পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হবে দেশের উন্নতি, দেশের মানুষের উন্নতি এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি।
জাহিদ মালেক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়েছেন। তার নেতৃত্বে দেশে অনেক সময়ে অনেক হাওয়া দেখতে পাচ্ছি। এখন শুরু হয়েছে পরিবর্তনের হাওয়া। আমাদের দেশে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রতিষ্ঠান হয়েছে, আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো রাখতে হলে ভালো লোকজনও প্রয়োজন। সুতরাং আমাদের কথা একটাই, তা হলো সঠিক জায়গায় সঠিক লোক থাকা এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগাছামুক্ত ও পরিস্কার রাখা। আর সেটা প্রধানমন্ত্রী করে যাচ্ছেন। আমাদের উচিত হলো এ কাজে তাকে সহযোগিতা করা। আমরা যদি একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা জয় লাভ করবো।
তিনি বলেন, আমরা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি, আমরা বিশ্বাস করি সেটাকে আরও কমিয়ে ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন করতে পারবো। আমাদের যে লক্ষমাত্রা আছে, শিশুমৃত্যুর হারকে ১২তে নামিয়ে আনতে হবে। আমি পরিসংখ্যানে দেখেছি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে, ফিনল্যান্ডে, হাঙ্গেরীতে ১/২ মারা যায়। জাপানে ২/৩ জনের বেশি মৃত্যু বরণ করে না। আমরা এই দেশগুলোকে টার্গেট নিয়ে এগুতে চাই। আমাদের টার্গেট থাকবে যেন আর একটি মৃত্যুও না হয়।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে সুবাতাস বইছে। এর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান আজ বিশ্বস্বীকৃত। এ কারণেই তিনি ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়াও আমাদের অর্জন অনেক। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার অনেক ভালো কাজ করছে, প্রাইমারি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেও আমরা ভালো করছি, শিশু মৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমে যাচ্ছে, আমাদের নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ-ইনস্টিটিউট চালু হচ্ছে। তবে আমাদের কিছু সংকট ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের কাছে স্বাস্থখাতে জনবল সংকটই এক নম্বর সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, একটি বিল্ডিং তো স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে না, একটি যন্ত্র তো স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে না, স্বাস্থ্যসেবা মানুষ দেয়। আমরা হাসপাতালগুলোতে বিল্ডিং করে দিলাম, যন্ত্রপাতি দিলাম, কিন্তু জনবল নাই, তাহলে এখানে স্বাস্থ্যসেবা দিবে কে? সুতরাং আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনবল বৃদ্ধি করা। আর এটাই আমার কাছে এখন আমাদের এক নাম্বার সমস্যা। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি, আমরা এখন সমস্যা সমাধানের দিকে যাচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাস্থ্য খাতে পার্শবতী দেশগুলো থেকে অনেক গেছি। আমাদের অনেক স্বীকৃতি রয়েছে, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভ্যাক্সি হিরো খেতাব পেয়েছেন। এগুলো কারও একার অর্জন নয়, আপনারা সকলে মিলে কাজ করেছেন, স্বাস্থ্যসেবায় আমরা উন্নতি করেছি, এর ফলশ্রুতিতে আমাদের এ অর্জনগুলো এসেছে।
তিনি বলেন, আমাদের যাত্রা এখানেই শেষ নয়। আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আামরা যদি সবাই মিলে একযোগে চিন্তা করতে পারি, পরিকল্পনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি, তাহলেই আমাদের এই অগ্রযাত্র সুদৃঢ় হবে বলে আমি আশা রাখি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর জেনারেল কাজী একেএম মহিদুল ইসলাম, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক আলম আরা বেগম প্রমুখ।
টিআই/