ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মৃত্যুদণ্ডের ৭০ বছর পর বালকটি নির্দোষ প্রমাণ!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪৮, ১০ জুন ২০২০

জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র।

জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র।

Ekushey Television Ltd.

জর্জ ফ্লয়েডের মতোই আরেক কৃষ্ণাঙ্গ, জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র। আমেরিকার ইতিহাসে কনিষ্ঠতম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মৃত্যুদন্ডের সময় ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। নির্দোষ হয়েও সেদিন শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার সাজা ভোগ করতে হয়েছিল তাকে। যার সত্যতা প্রমাণিত হয় এর ৭০ বছর পর।

১৯৪৪ সালের ২৩ মার্চ, নিখোঁজ হয় বেট্টি ও মেরী নামের যথাক্রমে ১১ ও ৭ বছরের দুটি শ্বেতাঙ্গ মেয়ে। পরেরদিন অর্থাৎ ২৪ মার্চ কিশোর জর্জ স্টিন্নির বাড়ির পাশ থেকে মেয়ে দুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাতুড়ি জাতীয় ভারী কিছুর দ্বারা মেয়ে দুটির মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ডের খুনী সন্দেহে পুলিশ জর্জকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। প্রেপ্তারের কারণ ছিলো- বেট্টি ও মেরি ২৩ মার্চ বিকেলবেলা সাইকেল চালিয়ে জর্জের বাড়ির পাশ দিয়ে ফুল কুড়াতে যাওয়ার সময় জর্জকে 'ম্যাপল' এর রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো। এই কথোপকথনের কারণেই পুলিশ সন্দেহ করে যে, জর্জ স্টিন্নিই তাদের হত্যা করেছে।

ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে জর্জ মোট ৮১ দিন ছিল। এই ৮১ দিনের ৮০ দিন সে তার মা-বাবার সাথে দেখা করতে পারেনি। কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর দুজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করেছে, এ-কী কম বড় ব্যাপার? জর্জের মা-বাবাও সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ে ছেলের সাথে ওই ৮০টি দিন আর দেখা করতে পারেননি।

১৯৪৪ সালের ১৪ জুন জর্জের বিচার শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার সেই বিচার সভায় সমস্ত শ্বেতাঙ্গ বিচারকদের নিয়ে তৈরি জুরি বোর্ড জর্জকে কোনওরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। জর্জের পক্ষে কোনও আইনজীবি, এমনকি তার মা-বাবাকেও সেখানে উপস্থিত হতে দেয়া হয়নি। এই বিচারপর্বে জর্জ স্টিন্নি কেবল একটি বাইবেল হাতে বার বার বলেছে সে নির্দোষ। জুরি বোর্ডের সদস্যরা তার কোনও কথায় কর্ণপাত না করে তাকে বেট্টি ও মেরির হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।

আদালতের এই রায়ের পর জর্জের পরিবার, তার মা-বাবা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের জন্য তৈরি সংগঠন ছেলেটির বয়স মাথায় রেখে সেখানকার গভর্নরের কাছে মৃত্যুদণ্ড রদের আবেদন করলে গভর্নর জনস্টন জানান, "আপনারা ওর প্রাণভিক্ষা করছেন? আপনারা জানেন না ও কী বিভৎস অন্যায় করেছে। বড়ো মেয়েটিকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ও ছোট মেয়েটিকে হত্যা করে। কিন্তু বড় মেয়েটি সুযোগ না দেয়ায় তাকেও সে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহের সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রথমবার মৃত দেহটিকে ধর্ষণের ২০ মিনিট পর পুনঃরায় ফিরে এসে ও আবার ধর্ষণের চেষ্টা করতে যায়। কিন্তু মেয়েটির দেহ খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় আর ধর্ষণ করতে পারেনি। এই জঘন্য অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না।"

এরপর ১৬ জুন সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে জর্জকে সেল থেকে বের করে তার বাবার সাথে দেখা করানো হয়। তারপর জর্জকে ইলেকট্রিক চেয়ার বসানো হয়। ৫ ফুট ১ ইঞ্চির ছোট্ট অসহায় ছেলেটার হাত বাঁধা হয় শক্ত চেয়ারের সাথে। ইলেকট্রিক হেলমেট মাথায় পরাতেই জর্জ কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর বলে 'আমি নির্দোষ', 'আমি নির্দোষ', 'আমি নির্দোষ'। 

এরপর জর্জের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে ৭টা ৩০ মিনিটে ৫ হাজার ৩৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক চার্জ করা হয় দুর্ভাগা কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরটির ওপর। ৮ মিনিট পর জর্জকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন তার দাঁতগুলো ধোঁয়া হয়ে গেছে, চোখের কোনও চিহ্ন নেই, গোটা শরীরটাই প্রায় ছাই সমান।

এই ঘটনার ঠিক ৬০ বছর পর ২০০৪ সালে পুরো কেস স্টাডি করে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল ওফ ল-এর একদল আইনজীবি এই কেস রি-ওপেন করেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ দীর্ঘ দশ বছর কেস চলার পর ২০১৪ সালে বিচারকদের জুরি বোর্ড ঘোষণা করেন, জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উল্লেখযোগ্য কোনও প্রমাণ নেই। ঠিক যেমন তার ধর্ষণ করার সপক্ষেও পুলিশের কাছে কোন প্রমাণ নেই।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ৭০ বছর পর জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বিচারের (ন্যায়বিচার) বাণী নীরবে নিভৃতেই কাঁদে চিরদিন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি