ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মার্কিন মুসলিম সমাজে বর্ণবৈষম্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩২, ১ জুলাই ২০২০

Ekushey Television Ltd.

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর মার্কিন সমাজে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দেশটির মুসলিম সমাজেও আলোচনা শুরু হয়েছে। আহ্বান জানানো হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম ও অভিবাসী আরব বা এশীয় মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ কমানোর। খবর এপি, দ্য আটলান্টিক, নিউ ইয়র্ক টাইমস’র। 

ইসলামিক স্কুলে পড়ার সময় নিজের শিক্ষাজীবনের কিছু কথা এখনো মনে পড়ে হিন্দ মাক্কির। মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসী হয়ে আসা মুসলিম পরিবারের অনেকেই কথার মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকানদের ‘আবদ’ বা ‘দাস’ বলে উল্লেখ করতো। কিন্তু এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে কী হতো? মার্কিন সমাজে বর্ণবাদ নিয়ে এক আলোচনায় শিক্ষার্থী হিন্দ মাক্কি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেণ এভাবে, ‘অন্তত ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যারা এসব শব্দ ব্যবহার করছে, তারা উত্তর দিতো ‘ও, আমরা তো তোমাকে বলছি না, অ্যামেরিকানদের বলছি।’

হিন্দ মাক্কি নিজেকে একজন কৃষ্ণাঙ্গ আরব মুসলিম নারী বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেমিনারে মাক্কি বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী যে মানসিকতা গড়ে উঠেছে নানা স্তরে, এটিও তার একটি রূপ।’

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে পুরো দেশ স্থবির করে দেয়া বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন মুসলিমরাও। এরপর থেকে মার্কিন মুসলিম সমাজে বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষকে কিভাবে দেখা হয়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে৷ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলিমদের বাস অ্যামেরিকায়। প্রশ্ন উঠছে, ইসলাম যখন সবাইকে সমানভাবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে, সেই ধর্মের অনুসারীরা কি বর্ণবাদী আচরণ থেকে বের হতে পারছেন?

মাক্কি বলেন, ‘এখন সবাই এ নিয়ে আলোচনা করছে। ৭০-এর দশক থেকে অ্যামেরিকায় বাস করা কোনো বয়স্ক ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য, এমনকি হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। যেসব বর্ণবাদী শব্দ কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়, সেসব নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হওয়া উচিত। জাতিগত বৈষম্য আমরা কিভাবে দূর করতে পারি, এ নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত।’

মুসলিম সমাজে আলোচনা:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সমাজ বেশ বৈচিত্র্যময়। কোনো একক জাতিগত আধিক্য নেই এখানে। তবে ২০১৭ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গরা এর প্রায় ২০ শতাংশ।

বর্ণবাদ বিরোধী মুসলিমদের সংগঠন মুসলিম এআরসি’র নির্বাহী পরিচালক মার্গারি হিল জানিয়েছেন, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার পর এখন আরও বেশি মুসলিম এ নিয়ে আলোচনা করতে চাইছেন। আরবি, বাংলা এবং অন্য সব ভাষাতেও কোন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে এবং কোনটা ‘উচিত না’ সেসব তথ্য জানতে চাইছেন তারা। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছেন কাউকে ‘ব্ল্যাক’ বলা যাবে, নাকি ‘আফ্রিকার অ্যামেরিকান’ বললে ভালো হবে৷

হিল বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের আহ্বান জানাই অতীতের কোনো কুসংস্কার বা বিদ্বেষ মনের মধ্যে থেকে থাকলে তা ঝেড়ে ফেলুন৷ এখন সত্যিকার অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে তোলার সময়৷’ মিশিগানের অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস কাউন্সিলের পরিচালক দাউদ ওয়ালিদও এই আলোচনা শুরু হওয়ায় আশাবাদী। কিন্তু তার প্রশ্ন, ‘এই বিক্ষোভ শেষ হয়ে গেলেও কি মুসলিম সমাজে আলোচনাটা চলবে?’ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ওয়ালিদ। সেসব সংগঠনেও বিভিন্ন বর্ণের মুসলিমকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ অ্যামেরিকা- ইসনা’র নির্বাহী পরিচালক বাশারাত সলীমও ওয়ালিদের এই আহ্বানের সঙ্গে একমত। সলীমের ইসনা সংগঠনের পরিচালনা বোর্ডে কোনো কৃ্ষ্ণাঙ্গ মুসলিম নেই। নিজের সংগঠনে জাতিগত বিভেদ কমিয়ে আনতে অনেক কিছু করার কথা বললেও এখনও অনেক কিছু করা বাকি বলেও স্বীকার করেন সলীম।

উদাহরণ স্বরূপ ইসনার এক বার্ষিক সম্মেলনের কথা বলেন তিনি৷ আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মুসলিম নেতাদের কথা বলার আহ্বান জানানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি। সলীম বলেন, ‘আমাদের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আরো বেশি আলোচনা প্রয়োজন৷’

অভিবাসী বনাম কৃষ্ণাঙ্গ:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিমরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন। এক দিকে বর্ণবাদ অন্য দিকে ইসলাম বিদ্বেষের থাবায় তারা বিপর্যস্ত। বর্ণবাদের স্বীকার হওয়াটা কখনো কখনো খুব ‘ক্লান্তিকরও’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন মার্গারি হিল। তিনি জানান, এক বার একটি দোকানে কোরান কিনতে গেলে দোকানদার তাকে আরবিতে ‘দাস’ বলে উল্লেখ করেন। দোকানের মালিক ছিলেন আরব মুসলিম। এক পর্যায়ে দোকানদার তাকে জিজ্ঞেন করেন তিনি সত্যিই কোরান পড়তে পারেন কিনা।

ওয়ালিদ মনে করেন, ইসলাম সব সময়ই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। ফলে ইসলাম যা বলেছে, মুসলিমরা সেটি সঠিকভাবে পালন করলেই এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কেবল আলোচনা এবং সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা ও মেলামেশার মাধ্যমে সম্প্রীতি গড়ে তুললেই সেটি সম্ভব বলে মনে করেন অ্যামেরিকার মুসলিম নেতারাও।

এমএস/এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি