ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

তুরস্কে রাজনৈতিক বিতর্কে আয়া সোফিয়া

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪০, ২ জুলাই ২০২০

ইস্তাম্বুলের জগদ্বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করতে চান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ বলা হচ্ছে, ভোটার টানতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তবে এই পরিকল্পনার বিরোধীতা করছেন অনেকে। তুরস্কের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ আয়া সোফিয়া। প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি দেখতে যান। অনন্য এক স্থাপত্যশিল্পই নয়, এটি পরিণত হয়েছে তুরস্কের রাজনীতির প্রতীকেও। খবর ডয়চে ভেলে’র।

ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সময়ে আয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৪৫৩ সালে অটোমানরা কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর দ্বিতীয় সুলতান মেহমেদ ক্যাথিড্রালটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন। আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৫৩ সালে। এরপর থেকে অসাম্প্রদায়িক তুরস্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আয়া সোফিয়াকে।

এই পরিচয়ে আবারও পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান। এর্দোয়ানপন্থিরা বরাবরই আয়া সোফিয়াকে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেন। কামাল আতাতুর্কের সিদ্ধান্তকে উল্টে দিয়ে এটিকে আবারও মসজিদে রূপান্তরের দাবি ছিল তাদের। সেই চিন্তাকেই এবার বাস্তবে রূপ দেয়ার পথে হাঁটছেন এর্দোয়ান। ১৯৩৫ সালে আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আতাতুর্ক যে ফরমান জারি করেছিলেন তা বৈধ ছিল কিনা বৃহস্পতিবার তা নিয়ে বসবে তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত, দ্য কাউন্সিল অব স্টেইট।

এর্দোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (একেপি) ডেপুটি চেয়ারম্যান নুমান কর্তুলমুস এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘আয়া সোফিয়া আমাদের ভৌগোলিক সম্পত্তি। তলোয়ার দিয়ে যারা এটি জয় করেছেন এই সম্পত্তির অধিকার তাদেরই।’ নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী একেপি। তার অংশ হিসেবে গত মাসে ১৪৫৩ সালে অটোমানদের কন্টানটিনোপল (বর্তমানে ইস্তানবুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়।

এর্দোয়ানের এই উদ্যোগকে একেপির ভোটার আকর্ষণের কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেননা বেশ কিছু জরিপে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলটির জনসমর্থন হারানোর ইঙ্গিত মিলছে। কিন্তু এই ধরণের উদ্যোগ সেখানে বড় ধরনের বিরোধেরও জন্ম দিতে পারে। ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্রথম পেট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ আয়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আয়া সোফিয়া মানব সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক স্থাপত্য। এটি কারও একক সম্পত্তি নয়।’

আয়া সোফিয়াকে রাজনৈতিক বিতর্কের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছেন ইস্তাম্বুলের গ্রিক বংশোদ্ভুতদের সংগঠনের প্রধান নিকোলাস উজোনোলুও। তিনি মনে করেন এই স্থাপত্যটি ধর্ম এবং সভ্যতার মধ্যে স্বাধীনতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। একে ‘তলোয়ারের বিজয়’ হিসেবে দেখানো সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

আয়া সোফিয়াকে নতুন করে পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন দেখেন না দেশটির ইতিহাসবিদেরাও। ইস্তাম্বুলে বোয়াজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহেম এলডেম বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে, যা রক্ষা করা উচিত। তার মতে, আয়া সোফিয়া সর্বজনীন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সারা বিশ্বের কাছে তা তুলে ধরারই পক্ষপাতী তিনি।

ধর্মতত্ত্ববিদ এহসান এলিয়াচিকেরও একই মত। তিনি বলেন, ‘‘আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের পেছনে ধর্মীয় কোনো যৌক্তিকতা নেই। ‘তলোয়ার দিয়ে জয়ের মাধ্যমে’ কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে জোরপূর্বক দখল করা কোরআনে নিষিদ্ধ বলেও মত দেন তিনি।’’

যদিও প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এসব কোনো কথাতেই কর্ণপাত করছেন না। সম্প্রতি তিনি গ্রিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলেন, ‘‘আপনারা বলেছেন, ‘অনুগ্রহ করে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করবেন না।’ তুরস্ক কি আপনাদের কথায় চলবে? আমরা কাউন্সিল অব স্টেটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি৷ এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে৷’

এমএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি