ভারতের শিক্ষানীতিতে আমূল পরিবর্তন
প্রকাশিত : ১৭:৫৮, ৩০ জুলাই ২০২০
কার্যত ঢেলে সাজানো হচ্ছে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা। নতুন শিক্ষানীতিতে তেমনই ইঙ্গিত দেওয়া হলো। গুরুত্বহীন হচ্ছে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। ৩৪ বছর পর বিশাল পরিবর্তন হচ্ছে ভারতের শিক্ষানীতির। ব্যাপক পরিবর্তন করা হচ্ছে প্রাক প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিন পর ফের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। এত দিন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নতুন শিক্ষানীতিতে কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গেল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। খবর ডয়চে ভেলে ও এনডিটিভি’র।
গত কয়েক বছর ধরেই কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিতে ব্যাপক রদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকলকে নিজের ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমে নয়। তবে পঞ্চম শ্রেণির পর অবশ্য যে কোনও মাধ্যমেই পড়াশোনা করা যাবে। মাধ্যমিক স্তর থেকেই যে কোনও বিদেশি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের উপর কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তারা ইচ্ছে মতো যে কোনও শেখার অধিকার পাবে। তবে সংস্কৃত শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে সব চেয়ে বড় পরিবর্তন করা হয়েছে স্কুল শিক্ষার কাঠামোয়। এতদিন ১০ বছরের মাধ্যমিক স্তর এবং ২ বছরের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কাঠামোয় পড়াশোনা হতো। নতুন নিয়মে তা ভাঙা হয়েছে পাঁচ বছর, তিন বছর, তিন বছর এবং চার বছরের নিয়মে। এর মধ্যে ৩ বছরের প্রাক প্রাথমিক স্তর নিশ্চিত করা হয়েছে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন নীতিতে। অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা আর দিতে হবে না। নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মধ্যে আটটি সেমেস্টারের কথা বলা হয়েছে। এ সেমেস্টারের গড় নম্বর যোগ করেই দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশিত হবে। আলাদা করে আর কোনও পরীক্ষা দিতে হবে না। শুধু তাই নয়। এর আগে দশম শ্রেণির পর ছাত্রছাত্রীরা কলা, বিজ্ঞান অথবা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ পেতেন। নতুন শিক্ষানীতিতে এই বিভাজন তুলে দেওয়া হচ্ছে। নবম শ্রেণির পরে ছাত্রছাত্রীরা যে কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ একই সঙ্গে রসায়ন এবং দর্শন পড়া যাবে। গণিত এবং ইতিহাস একই সঙ্গে পড়তে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।
স্নাতক স্তরে আগে তিন বছর পড়াশোনা করতে হতো। নতুন নিয়মে স্নাতক স্তরে চার বছর পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবে স্নাতকোত্তর স্তরে দুই বছরের জায়গায় এক বছর পড়তে হবে। স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডির মাঝখানে এমফিল কোর্স তুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ স্নাতকোত্তর শেষ করেই ছাত্রছাত্রীরা পিএইচডি করতে পারবে। পুরাতন ব্যবস্থায় অবশ্য এমফিল বাধ্যতামূলক ছিল না। চাইলে এমফিল না করেও পিএইচডি করা যেত।
স্নাতক স্তরে ডিগ্রির জন্য চার বছর পড়তে হলেও এক বছরের সার্টিফিকেট এবং দুই বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের সুযোগ থাকছে। হাতে কলমে শিক্ষার উপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে নতুন শিক্ষানীতিতে। ভোকেশনাল কোর্সের প্রতিও অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করে দ্রুত চাকরির সুবিধার কথা ভাবা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, নতুন শিক্ষানীতিতে স্কুলছুটের সংখ্যা অনেকটাই কমানো যাবে। একই সঙ্গে ২০২৫ সালের মধ্যে সকলকে শিক্ষার আলোয় আনার টার্গেট নিশ্চিত করেছে এই নীতি।
কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ আমলেও শিক্ষানীতিতে বদল আনার একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা ব্যবস্থা বদলেরও একাধিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। তবে সার্বিকভাবে শিক্ষানীতি তৈরি করা যায়নি। বিভিন্ন স্তর থেকে নানা বাধাও এসেছে। বর্তমান আমলে নতুন শিক্ষানীতির প্রবর্তন ঐতিহাসিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষানীতিতে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ কীভাবে হবে তা দেখেই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচিন হবে।
এমএস/আরকে//
আরও পড়ুন