ক্লিনটনকে ম্যাসাজ, লাস্যময়ীর ছবি ফাঁস
প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ১৯ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২০:১৭, ১৯ আগস্ট ২০২০
তরুণী চান্তে ডেভিস ক্লিনটনের ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছেন
বিল ক্লিনটন ছিলেন আমেরিকার ৪২তম প্রেসিডেন্ট। যৌন কেলেঙ্কারির কারণে তিনি ব্যাপক আলোচিত। এ বিষয় আসলেই মনিকা লিউনেস্কির কথাই সবাই ভাবেন। ওই ঘটনা ক্লিনটন সম্পর্কে ভিন্ন এক ইমেজ তুলে আনে। বিশ্ববাসীর কাছে আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। এতবছর পেরিয়ে গেলো কিন্তু নারীঘটিত আলোচনা যেন ক্লিনটনের পিছুই ছাড়ছে না।
বর্তমানে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বয়স ৭২ বছর, ক্লিনটনের যখন বয়স ৫৬ বছর তখন ২২ বছর বয়সী এক লাস্যময়ীর সঙ্গে তার সেই ছবি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এবং দাবী করছে এসব ছবি এর আগে কোনদিন জনসমক্ষে আসেনি।
সেখানে দেখা যায়, সুন্দরী তরুণী চান্তে ডেভিস ক্লিনটনের ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছেন। সাবেক প্রসিডেন্ট আয়েশি ভঙ্গিতে তা উপভোগ করছেন। ছবিটি ক্লিনটনের সাথে বিতর্কিত এপস্টেইনের সম্পর্কের বিষয়টাও তুলে এনেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনে জো বাইডেনকে ক্লিনটন সমর্থন জানানোর একদিনে আগেই সংবাদমাধ্যমে আনা হলো এ ছবিটি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্লিনটনের পরনে হলুদ রংয়ের শার্ট। তিনি কিছু গা এলিয়ে বসেছেন। দু হাত দু পায়ে রাখা। আর ডেভিস পেছনের চেয়ারে হাঁটু মুড়ে সুবিধাজনক কোণ থেকে ম্যাসাজ করছেন। দ্বিতীয় ছবিতে ক্লিনটনকে হাসতে দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে ম্যাসাজকারী ডেভিসের বয়স ৪০ এর কোঠায়। তিনি জানালেন, ছবিটি বিদঘুটে লাগতে পারে। কিন্তু সেই ভ্রমণে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন একজন নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন। সেই সময় তিনি কোনো অশোভন আচরণ করেননি।
ম্যাসাজকারী বলতে থাকেন, ক্লিনটনের বয়স তখন ৫৬। ২০০২ সালে এক ভ্রমণে এপস্টেইনের সাথে আফ্রিকা যাচ্ছিলেন তিনি। বিমানে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ক্লিনটন ঘাড়ে অস্বস্তিবোধ করছিলেন।
বিমানটি ওই সময় পর্তুগালের ছোট একটি বিমানবন্দরে জ্বালানী নেয়ার জন্য থেমেছিল। বর্তমানে যৌনপাচারের অভিযোগে জেলবন্দি ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল সেই ভ্রমণে ছিলেন। ম্যাক্সওয়েলই ডেভিসকে বলছিলেন ক্লিনটনের ঘাড় ম্যাসাজ করে দিতে।
ম্যাক্সওয়েলের বার বার বলতে থাকাটা কৌতুকপূর্ণ মনে হয়েছিল, তার কণ্ঠে এমন সুর ছিল যেন একটু জোরই করছিলেন আমাকে। এরপর ক্লিনটন ডেভিসকে বলেন, আপনি আমার ঘাড়টা একটু ফুটিয়ে দিতে পারেন? 'তিনি আমার দিকে পেছন ফিরে ঘুরে বসেন। আমি তার কাছাকাছি গিয়ে আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্টের গলা ও ঘাড় মালিশ করতে থাকি।
সেখানে আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল, জানান ডেভিস। তিনি ক্লিনটনকে একটি বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলেন। আসলে ম্যাসাজ করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল ডেভিসে। তিনি জুতসই অবস্থানে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তখন ক্লিনটনকে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন, যদি কিছু মনে না করেন আপনি হাঁটু গেড়ে বসতে পারেন?
স্মৃতি হাতড়ে ডেভিস বলেন, আমি নিজেই হচকিত হয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছিল, নিজের মুখে নিজের পা ঢুকিয়ে দেই। মুহূর্তের জন্যে কক্ষটা একেবারে চুপ হয়ে গেলো। আমিও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এটা বলে ফেলতে পারি। আমি কি বলছি এবং কাকে বলছি তা চিন্তার আগেই বলে ফেলেছি।
এটা শুনে যদিও তার (ক্লিনটনের) চেহারা আগুনের রং পেলো, কিন্তু তিনি হাসলেন। কক্ষের সবাই হেসে উঠলেন। তিনি এমনভাবে বসলেন যেন আমি সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়াতে পারি।
এপস্টেইনে সুপরিচিত ব্যক্তিগত জেট 'ললিটা এক্সপ্রেস'-এ চেপে আফ্রিকায় যাচ্ছিলেন তারা। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। মানবাধিকার বিষয়ক পাঁচ দিনের সফরে তারা গিয়েছিলেন ঘানা, নাইজেরিয়া, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়। ওই সফরে আরো ছিলেন অভিনেতা কেভিন স্পেসি এবং ক্রিস টাকার। ক্লিনটন বেশ কিছু উপলক্ষে এপস্টেইনের সাথে ভ্রমণ করেছিলেন, এটা সবাই জানেন। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ক্লিনটন জেফরি এপস্টেইনের জেটে মোট চারবার ভ্রমণ করেছিলেন। ইউরোপ ও এশিয়ায় একবার করে এবং দুবার আফ্রিকায়।
আফ্রিকায় এই ভ্রমণের এক সপ্তাহ আগে ডেভিসকে জানানো হয়েছিল। যথাসময়ে এয়ারফিল্ডে আসার পর তাকে ইউনিফরম পরতে বলা হয়, যেন দেখে পেশাদার ক্রু বলে মনে হয়। ওই ভ্রমণে ডেভিস বিমানবালার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ক্লিনটনকে দেখার পর তিনি রীতিমতো ভিড়মি খান।
ডেভিসকে ইউনিফর্ম পরে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়
ডেভিস দাবি করেছিলেন, ম্যাক্সওয়েল তাকে এ চাকরিতে আনার পর এপস্টেইন তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন। কয়েক বছর ধরে এ নির্যাতন চলতে থাকে। অবশেষে ২০০৫ সালে ডেভিস এপস্টেইনের কবল থেকে ছাড়া পান। ২০১৯ সালে ডেভিসের সাক্ষাৎকার নেয় এফবিআই এবং নিউ ম্যাক্সিকোর অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল। এপস্টেইনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পাঁচ দিন পর নিউ ইয়র্কে তার বিরুদ্ধে অপরাধ উত্থাপিত হয়। জেলে থাকা অবস্থায় ১০ আগস্ট এপস্টেইন আত্মহত্যা করেন। ম্যানহাটানের মেট্রোপলিটন কারেকশনাল সেন্টারের বিশেষ হাউজিং ইউনিটে তার মৃতদেহ মেলে।
লস অ্যাঞ্জেলসের একটি কলেজে ম্যাসাজ থেরাপির ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর এপস্টেইনের বন্ধুমহলের কাছাকাছি আসার সুযোগ দেয়া হয় ডেভিসকে। বেভারলি হিলসের ফোর সিজন্স হোটেলে দেখা হয় ম্যাক্সওয়েলের সাথে। ডেভিসের সাথে দেখা হওয়ার পর পরই ম্যাক্সওয়েল তাকে ব্যক্তিগত বিমানে করে এপস্টেইনের ফ্লোরিডার বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ললিটা এক্সপ্রেসে চেপে ম্যাক্সওয়েল নানা স্থানে ভ্রমণ করতে থাকেন। এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে যাওয়ার পর সেখানেই ডেভিস যৌন নির্যাতনের শিকার হন বলে দাবি করেন।
ডেভিস জানান, ছবিগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর তার মনে প্রশ্ন জাগে, এপস্টেইনের বন্ধুমহলে এমন ক্ষমতাবান মানুষ থাকার পরও সে কিভাবে যৌন অপরাধ করে যেতে পারে। ছবিগুলো এমন প্রশ্নও তোলে, বিল ক্লিনটন কেন জেফরি এপস্টেইনের বিমান ব্যবহার করতেন এবং এপস্টেইন ক্লিনটনের মাধ্যমে কি ধরনের কাজ সফল করার চেষ্টা করতেন।
এসি
আরও পড়ুন