মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা দৃঢ়চেতা
প্রকাশিত : ১১:০০, ২৩ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ১১:০২, ২৩ আগস্ট ২০২০
জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন এবং কামালা হ্যারিস ও তার স্বামী ডগলাস এমহফ- রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি বেশ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা এ ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের প্রকাশ করেছে। প্রমান করতে সমর্থ হয়েছে যে, তারা বেশ ঐক্যবদ্ধ দল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষুরধার বক্তব্য রেখেছেন। নিজেকে আলোর পূজারি সম্বোধন করে ‘ট্রাম্পযুগের আঁধার’ দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনটি বিশ্লেষণ করেছে এজেন্সী ফ্রান্স-প্রেস বা এএফপি।
৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেনের রানিংমেট উদীয়মান তারকা কমলা হ্যারিস মার্কিনিদের মুগ্ধ করেছেন। একই সঙ্গে মার্কিনিদের বাইডেনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষার ডাক দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর মাধ্যমে তিনি যে দলের পূর্বপুরুষ তারই জানান দিয়েছেন। সম্মেলনের প্রথম দিন সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার অগ্নিঝরা ভাষণ দলীয় আভিজাত্যের পরিচয় বহন করেছে। আনুষ্ঠানিক রাজনীতির বাইরে থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জোর গলায় সমালোচনা করেছেন তিনি। বার্নি স্যান্ডার্সের মতো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাদের সমর্থকদের বাইডেনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেমোক্রেট দলের এ সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অনেকটাই একমুখী ছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভালো-মন্দের কথা নিয়েই রাজনৈতিক শিরোনামগুলো আবর্তিত হচ্ছিল। গত সপ্তাহে ডেমোক্রেট দলের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনীতির এ আলাপ অনেকটাই বদলে গেছে। ট্রাম্প মন্দ করার কারণে লোকজন বিরক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেবে-এ চিন্তা থেকে যেন দলটি বেরিয়ে এসেছে। ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমেও ডেমোক্রেট দল নিজেদের কর্মসূচি উপস্থাপন করতে পেরেছে। ট্রাম্পের বিভেদ আর অস্থির রাজনীতির পাল্টা নিজেদের একটি সহনশীল রাজনৈতিক প্রস্তাবনা জনগণের সামনে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পেরেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এখন সময়টা পরিবর্তনের উল্লেখ করে দলীয় সম্মেলনে জো বাইডেন বলেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট বড় বেশি সময় আমেরিকাকে অন্ধকারে ঢেকে রেখেছেন। বড় বেশি ক্রোধ, বড় বেশি ভীতি, বড় বেশি বিভক্তি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমাকে যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনারা দায়িত্ব দেন, তাহলে আমি অন্ধকার নয়, আলোর মিত্র হব।’ এ নির্বাচনকে আলো-অন্ধকারের লড়াই উল্লেখ করেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পতনের জন্যই এ আলো ও অন্ধকারের লড়াই বলে মন্তব্য করেন বাইডেন।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীন ছুরি ঘোরাবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে বাইডেন সরকার চায় বেইজিং এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন তার কাছে রয়েছে বলেও সম্প্রতি অভিযোগ করেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবর বলে এসেছেন, বাইডেন মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পান। তিনি এত বৃদ্ধ যে হাঁটাচলার শক্তি পর্যন্ত নেই। ট্রাম্প বাইডেনের নাম দিয়েছিলেন ‘স্লো জো’। তবে বাইডেন যেন তা ভুল প্রমান করে দিলেন।
আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন ঘোষণার পর মঞ্চে জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিস- রয়টার্স
বাইডেন ভালো বক্তা নন এমন বিষয়টি যেন সবাই জানেন। কিন্ত তিনি তার ভাষণে এবার বেশ শক্তভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা। সম্মেলনে বারাক ওবামা, মিশেল ওবামা ও কমলা হ্যারিসের মতো অসাধারণ বাগ্মিতাপূর্ণ ভাষণের পর তাকে ভাষণ দিতে হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ডানা পেরিনো বলেন, ‘সম্ভবত জীবনের সেরা ভাষণটাই দিয়েছেন বাইডেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি ও তার সমর্থকদের সামনে এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরাস্ত করাই সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।’
ডেমোক্রাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে ট্রাম্পের হাতে পরাস্ত হয়েছিলেন। এর প্রধান কারণ ছিল বিপুলসংখ্যক আফ্রিকান-আমেরিকান ও নবীন ভোটারদের অনুপস্থিতি। তাই এবার এ বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টি এমন এক সময় নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন যখন বর্ণবাদবিরোধী নারী ও পুরুষরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ। বাইডেন ইতোমধ্যে সম্ভাব্য নারীদের ভোটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। তিনি আশা করছেন, কমলাকে মনোনীত করার পর এই সমর্থন আরও সুদৃঢ় হবে।
এমএস/
আরও পড়ুন