মানবাধিকার বিবেচনা না করেই অস্ত্র বিক্রি
পশ্চিমা অস্ত্রে সহিংস হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা
প্রকাশিত : ১৫:৫৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
অস্ত্র ক্রয়ে শীর্ষে সৌদি আরব আর বিক্রিতে শীর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে মোট অস্ত্রের চার ভাগের তিন ভাগই সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো। সহিংসতা বা মানবাধিকার বিবেচনায় না নিয়েই বিক্রি হয় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। খবর ডয়চে ভেলে’র।
গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি (সিআইপি) এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের অস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। এতে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই পাঁচ বছরে ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিক্রি করা হয়েছে।
বিক্রিতে শীর্ষে কারা!:
স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করা মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। এরপর রাশিয়া ১৭ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স (১১%), জার্মানি (৫%), যুক্তরাজ্য (৫%), ইটালি (৩%) এবং চীন (২%)।
ক্রয়ে শীর্ষে সৌদি আরব:
অস্ত্র ক্রয়েও স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সৌদি আরব। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের মোট অস্ত্রের ৪৮ শতাংশ নিজেই ক্রয় করে। এরপরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে মিশর (১৪%), আলজেরিয়া (১০%), আরব আমিরাত (৯%), ইরাক (৮%), কাতার (৮%), ইসরায়েল (৫%) এবং তুরস্ক (৪%)।
সহিংসতায় উসকানি:
অঞ্চলটিতে কেবল ছোটখাট অস্ত্র নয় বরং বড় এবং বিধ্বংসী অস্ত্রও বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ব্যাপকভাবে যেসব সহিংসতা ছড়াচ্ছে তাতে এসব অস্ত্রও বড় ভূমিকা রাখছে। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা বিমান, বোমা, মিসাইল এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে ইয়েমেনে হামলা হচ্ছে। মিশরে তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাম করে ব্যবহার হচ্ছে মার্কিন যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও হেলিকপ্টার।
গৃহযুদ্ধের মদদ:
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজমান। সে সব দেশে যুদ্ধরত দুই পক্ষেই দেখা যায় মার্কিন ও ইউরোপিয়ান অস্ত্র। ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং লিবিয়ায় যুদ্ধরত সব পক্ষই মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সিরিয়া এবং লিবিয়ায় রুশ অস্ত্রও দুই পক্ষের কাছে রয়েছে। এমনকি তুরস্ক ও আরব আমিরাত লিবিয়ায় যে সব অস্ত্র সরবরাহ করেছে সেগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই তৈরি করা।
ব্যবসা ও ক্ষমতা:
বিশ্বে কোটি কোটি টাকার অস্ত্রের বাজার রয়েছে। ফলে সহিংসতা বা যুদ্ধে একদিকে মানুষের প্রাণহানি হলেও সে অস্ত্র বিক্রি করে ঠিকই লাভবান হচ্ছে নানা দেশের অস্ত্র উৎপাদনকারীরা। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বেশ ক্ষমতাধর লবি বজায় রাখেন। এছাড়া বৈশ্বিক রাজনীতিতে বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ দেশের ‘বন্ধুত্ব’ ধরে রাখাও নানা ধরণের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির অন্যতম একটি কারণ।
এমএস/
আরও পড়ুন