ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৬, ২ মে ২০২১ | আপডেট: ১৭:২৯, ২ মে ২০২১

আফগানিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন এর মাধ্যমে একটি অন্তহীন যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে উপস্থিতির রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোটের সেনাবাহিনীর।

সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ পর্যন্ত সেনা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলবে। যদিও এমন এক সময়ে সেনা প্রত্যাহার শুরু হল যখন দেশটিতে নতুন করে সংঘর্ষ বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তালিবানদের এক চুক্তি অনুযায়ী এ বছর মে মাসের এক তারিখের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।

চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সেনাদের উপরে হামলা বন্ধ রাখতে হবে তালিবান বাহিনীকে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মাসে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ পর্যন্ত আফগানিস্তানে সেনা উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন।

এই বছর নাইন ইলেভেন হামলার ২০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেটিকে ঘিরে কোন ধরনের নিরাপত্তা-নিত হুমকির কথা মাথায় রেখে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করার তারিখ বর্ধিত করা হয়। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়ে আফগানিস্তানের অন্য ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের হামলা থেকে পশ্চিমা সেনাদের সুরক্ষা দিয়ে আসছে তালিবান বাহিনী।

যদিও আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর তালেবানদের হামলা বন্ধ হয়নি। সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সময়ে কোন ধরনের আক্রমণের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন জেনারেল স্কট মিলার।

তিনি বলেছেন, "ভুলে যাবেন না, যে কোন ধরনের আক্রমণের জবাব দেবার, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে আক্রমণে তাদের সহায়তায় সামরিক সক্ষমতা জোটের রয়েছে।"

অন্যদিকে চুক্তি সত্বেও তারিখ পিছিয়ে দেয়া সম্পর্কে তালিবানদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, "চুক্তির লঙ্ঘন দখলদার বাহিনীর (পশ্চিমা সেনা) উপর তালিবান যোদ্ধাদের যেকোনো ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা নেবার নীতিগত সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।"

তবে কোন ধরনের আক্রমণে যাওয়ার আগে তালিবান যোদ্ধারা তাদের নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষা করবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়সীমা বড় ধরনের হামলা এড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তবে সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে মার্কিন বাহিনী। কোন সরঞ্জামগুলো দেশে ফেরত পাঠানো হবে আর কোনগুলো আফগানিস্তানে বাতিল হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হবে তার তালিকা তৈরি করছে তারা।

কেন আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী?
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার সহ তালিবানদের আরও দুটি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই হামলার জন্য ইসলামপন্থী জঙ্গি বাহিনী আল কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করা হয়।

সেসময় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা উগ্র ইসলামপন্থী বাহিনী তালিবান ওসামা বিন লাদেনকে নিরাপত্তা দিয়েছিল এবং তাকে মার্কিন বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করতে প্রত্যাখ্যান করে। নাইন ইলেভেন হামলার এক মাস পর আফগানিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন মিত্র দেশগুলো এতে যোগ দেয় এবং দ্রুতই তালিবানদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট নেটোর সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। কিন্তু তাতে তালিবান শক্তি অদৃশ্য হয়ে যায়নি বা তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। তখন থেকে আফগান সরকারের পতন ঠেকাতে এবং তালিবানদের হামলা প্রতিহত করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

"তালিবান যুগের কালো অধ্যায়"

আফগানিস্তানে দেশটির সরকারি বাহিনী এবং তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের পটভূমিতে মার্কিন ও নেটো সেনা প্রত্যাহার শুরু হল। গাজনি প্রদেশে গতকালও রাতভর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার পুল-এ-আলম শহরে এক গাড়ি বোমা হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছে এবং ১১০ জন আহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই স্কুল শিক্ষার্থী।

সেনা প্রত্যাহার যুক্তিসঙ্গত উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পশ্চিমের দেশগুলোতে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রের করার জন্য জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানকে যাতে ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে মার্কিন বাহিনী তা নিশ্চিত করেছে।

একই সাথে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি বলেছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেকোনো হামলা প্রতিহত করে সরকারি বাহিনী সম্পূর্ণ সক্ষম। মার্কিন ও নেটো সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার অর্থ হবে তালিবানদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আর কোন কারণ থাকবে না।

তালিবান বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "আপনারা কাদের হত্যা করছেন? কি ধ্বংস করছেন? বিদেশিদের উপর হামলার অজুহাত এখন শেষ হয়ে গেছে।" কিন্তু সবাই এত ইতিবাচক মনোভাব রাখতে পারছেন না।

কাবুলে একটি বেসরকারি রেডিওতে কর্মরত মিনা নওরোজি বলছেন, "অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে আমরা আবারো তালেবানদের সেই কালো অধ্যায়ে ফিরে যাব। তালিবানরা যেমন ছিল তেমনই আছে। তারা বদলে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল এখানে তাদের উপস্থিতি আরও এক দুই বছর বাড়ানো উচিৎ ছিল।"

বিবিসির পাকিস্তান ও আফগান সংবাদদাতা সিকান্দার কিরমানি বলছেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু আফগান সরকার ও জঙ্গিদের সাথে শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে রয়েছে তাই সংঘাত যে চলতে থাকবে তা অনিবার্য সেই আশংকা থেকে যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি