সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের দাম ফাঁস হওয়ায় নেপালের প্রতি অসন্তুষ্ট চীন
প্রকাশিত : ১৯:১৭, ২২ জুন ২০২১
করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ক্রয়ে চীনের সঙ্গে সম্পন্ন নন-ডিজক্লোজার (অ-প্রকাশ) চুক্তির তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নেপালের ওপর রীতিমতো অসন্তুষ্ট চীন।
জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে চীনের থেকে চার মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন ক্রয়ের পরিকল্পনা করেছে নেপাল। নন-ডিজক্লোজার চুক্তির আওতায় প্রতিটি ডোজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ ডলার করে। চুক্তির শর্তানুযায়ি এই মূল্য ও সরবরাহ তারিখ গোপন রাখার শর্ত থাকলেও নেপালের কিছু গণমাধ্যমে এই ক্রয়মূল্য প্রকাশ হয়েছে।
কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের মূল্য প্রকাশিত হয়েছে। আর্টিকেলটিতে আরো বলা হয়েছে, গত সোমবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে দুজন মন্ত্রী এবং দুজন সরকারি সচিবের উপস্থিতিতে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এই বৈঠকে সিনোফার্মের থেকে চার মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, চুক্তির ধরন অনুযায়ি দাম এখনো নির্ধারিত হয় নি; তবে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার দেয়া তথ্যে জানা গিয়েছে প্রতিটি ডোজের দাম ১০ ডলার করে হতে পারে।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র ড.কৃষ্ণা প্রসাদ পৌদেল এ প্রসঙ্গে কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে ভ্যাকসিনের মূল্য এবং অন্যান্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক, কারণ এগুলো খুবই সংবেদনশীল ইস্যু।’
ভ্যাকসিনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ায় নেপালের বিভিন্ন এজেন্সির কাছে চীন অসন্তুষ প্রকাশ করেছে বলে বিভিন্ন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া কাঠমান্ডু পোস্টকে কর্মকর্তারা বলেছেন নেপাল সরকারের ভ্যাকসিন ক্রয় নিয়ে তথ্য প্রকাশ হওয়ায় সিনোফার্মও অসন্তুষ্ট।
কাঠমান্ডুতে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চুক্তির ধরন বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র পাদৌল বলেছেন, ‘যে কোন চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগেই সে বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোর ব্যাপক আগ্রহ থাকে, বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে। আমরা ভ্যাকসিন পাবো কি পাবো না তা নিয়ে এখন চিন্তিত।’
এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো সঠিক নয় উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি ইস্যু করা হয়েছে। বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, আমরা শুধুমাত্র বলছি না যে কোন চুক্তি হয় নি বরং চীন থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করা হচ্ছে এমন তথ্য প্রচারের জন্য গণমাধ্যমকে দোষ দিচ্ছি। ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে নেপালকে প্রধান্য দিতে চীনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিবৃতিটিতে আরো বলা হয়, ‘ভ্যাকসিন সহযোগিতার ক্ষেত্রে নেপালকে অগ্রাধিকার দিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে অনুরোধ করা হয়েছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনো চলমান। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় ভ্যাকসিনের ক্রয়মূল্য নিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশ হচ্ছে তা আগাম, অনুমানমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক।’
নেপালের সঙ্গে সিনোফার্মের এ বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সিনোফার্মের মূল্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
ডেইলি স্টারের খবর অনুযায়ি ,বাংলাদেশ সরকার গত ২৭ মে চীন থেকে ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন প্রতিটি ডোজের মূল্য পড়বে ১০ ডলার করে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর অর্থমন্ত্রণালয় ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য’ গণমাধ্যমগুলোকে ভ্যাকসিনের ক্রয়মূল্য প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশের সিনোফার্মের ক্রয়মূল্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় চীন কিছুটা চিন্তিত।’ শ্রীলংকাতেও সিনোফার্মের ক্রয়মূল্য প্রকাশের পর বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যেখানে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য বাংলাদেশের তুলনায় পাঁচ ডলার করে বেশি দাম দিতে চেয়েছে তারা। সূত্র: এএনআই
এসি
আরও পড়ুন