সাম্প্রদায়িক রাজ্যে এক খণ্ড সম্প্রীতির ভূমি ‘মিঠি’
প্রকাশিত : ১৩:২৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
সিন্ধু প্রদেশের থর-পার্কার জেলার শহর মিঠি
পাকিস্তানের পূর্বপ্রান্তে সিন্ধু প্রদেশের থর-পার্কার জেলার একটি শহরের নাম মিঠি। ভারতের সীমান্ত লাগোয়া এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এই শহরকে বলা হয় সম্প্রীতির আইডল শহর।
এই শহরের ঘুম আজও ভাঙ্গে মন্দিরের সুরেলা ঘণ্টাধ্বনিতে। ‘মিঠি’র মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। যা পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তর হিন্দু অধ্যূষিত শহর।
মরুভূমি লাগোয়া এই শহরে যুগের পর যুগ ধরে একে অপরের পরিপূরক হয়ে রয়েছে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়। শান্তি ও সৌহার্দ্যের অপরূপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে এই দুই সম্প্রদায়। মিঠি যেন এক বৃহৎ পরিবারের নাম।
কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়। একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে মানবতার। ধর্ম যে শান্তির ও সৌহার্দ্যের, তা প্রমাণিত হয় এই শহরকে দেখলেই।
সুন্দর মনের মানুষেরা’ই একটি সুন্দর সমাজ গঠন করে, ‘মিঠি’ তা প্রমাণ করেছে। পাকিস্তানের যেকোনো জায়গার চেয়ে মিঠিতে অপরাধের হার অনেক কম- মাত্র ০.২% শতাংশ। শিক্ষার দিক দিয়েও পাকিস্তানের যেকোনো জেলা শহরের চেয়ে এগিয়ে মিঠি।
অপরূপ সুন্দর মিঠি এক ঐক্য, মানবতা, ভ্রাতৃত্ব ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের শক্ত ভূমি। পূজার সময় মসজিদ ও আজানের সময় মন্দির হতে একে অপরের প্রতি দেখায় গভীর শ্রদ্ধাবোধ। পূজার সময় মসজিদের মাইক বন্ধ রাখা হয়, তেমনি আজানের সময় বন্ধ থাকে মন্দিরের কাসা ঘণ্টা বা বাদ্যযন্ত্র।
পবিত্র রমজানের সময় হিন্দুরাও ঘরের বাইরে নিজেদের রত রাখে সংযমে। অপরদিকে শিবরাত্রির সময় বা অন্যান্য মূল পূজায় মাংসের দোকান বন্ধ রাখে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। পৃথিবীর বুকে ‘মিঠি’ যেন এক আইডল সম্প্রীতির শহর। যার মূল মন্ত্র ‘মানুষ মানুষের জন্য’। মানবতাই তার শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
তবে মিঠি থেকে কোনোভাবেই শিক্ষা নেয়নি পাকিস্তান। বিশ্বের কাছে পাকিস্তান মানেই অস্থির, অসহিষ্ণু এক ভূখণ্ড। যেখানে মন্দির ও চার্চে বিস্ফোরণ, নিরীহ অমুসলিমদের শোভাযাত্রায় ভয়ঙ্কর আক্রমণে মানুষের মৃত্যু নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। সাম্প্রদায়িক আদর্শ বহনকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তান বিশ্বের বুকে পরিচিত। হামলা-হত্যা- ষড়যন্ত্র লেগেই থাকে যার জন্য দেশটিতে। ধর্মের কারণে হানাহানিতে প্রাণ ঝরে নিষ্পাপ মানুষের।
সাম্প্রদায়িক রাজ্যে ‘মিঠি’ যেন এক খণ্ড সম্প্রীতি’র ভূমি। পাকিস্তানের ভেতরে এ যেন এক অন্য পাকিস্তান। আগামি দিনে ‘মিঠি’র সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে পড়ুক সমস্ত পাকিস্তান জুড়ে।
আরএমএ/এএইচএস
আরও পড়ুন