পথ হারিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ৩ দিন, বেঁচেছিলেন ডোবার পানি খেয়ে
প্রকাশিত : ২১:৩৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
৭২ বছর বয়সী ব্রিটিশ অবসরপ্রাপ্ত লিওনার্ড ব্যারি ওয়েলার থাইল্যান্ডের হেস্টিং থেকে উত্তর-পূর্বের খোন কেন প্রদেশে মোটরবাইকে করে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে সন্ধ্যা নেমে গেলে তিনি আলোকস্বল্পতার জন্য পথ হারিয়ে ফেলেন। এমনিই পরিচিত পথ, তার উপর সন্ধ্যের ঘন অন্ধকার। এ অবস্থায় তিনি সেখানেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘুমানোর জন্য একটি পাতার বিছানা তৈরি করে সেখানে রাত কাটান। তিনি সাহায্য চাওয়ার মত স্থানীয় কোন গ্রামবাসীকে সেখানে খুঁজে পাননি সেসময়।
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গাছপালা থাকার পরেও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এঅবস্থায় তিনি বাড়ির পথ খোঁজার জন্য একটি গাছে আরোহণের চেষ্টাও করেন। কিন্তু হঠাৎ করে মৌসুমী ঝড়ের কবলে পড়লে তার জঙ্গলে রাত্রিযাপন করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় বাকি ছিল না। এমনকি সেখানকার রাতের জঙ্গল ছিল বিষাক্ত সাপের বাসস্থান এবং ভাল্লুকের অভয়াশ্রম।
এই সময়টুকুতে তিনি যখন তৃষ্ণার্ত ছিলেন তখন তিনি শিলার খাঁজে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পান করতেন। অবসরপ্রাপ্ত লিওনার্ড প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত থাকার পরও খাবার ছাড়াই তিন দিন সহ্য করেছিলেন। তিনি ডোবা থেকে থেকে বৃষ্টির পানি পান করার জন্য খড়ের মতো একটি ঘাসের টুকরো ব্যবহার করে ডোবা থেকে বৃষ্টির পানি পান করেন।
এদিকে মধ্যরাতেও যখন লিওনার্ড বাড়িতে ফেরেননি তখন তার স্ত্রী ৪৯ বছর বয়সী তাওয়ী লিওনার্ড চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি কালবিলম্ব না করে স্থানীয় পুলিশকে ফোন করেন। এরপর বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) এবং শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) একটি অনুসন্ধান দল পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। কিন্তু এর মাঝেই স্থানীয় এক শিকারী শেষ পর্যন্ত শুক্রবার বিকেলের দিকে পথ হারিয়ে ফেলা লিওনার্ডকে খুঁজে পান।
তারা বলেন, লিওনার্ডকে সেসময় জঙ্গল থেকে উঠতে দেখা গেছে এবং বিপদসংকুল জঙ্গলে তার পা কেটে গিয়েছিল। তার শার্টের বোতাম খোলা ছিল তখন তিনি জুতা হারিয়ে ফেলার কারণে খালি পায়ে ছিলেন।
স্থানীয়রা যখন লিওনার্ডকে দেখতে পেলেন, তখন তিনি জুতা ছাড়া একটি পাতার বিছানায় মাটিতে পড়ে ছিলেন। তারা পুলিশকে ডাকে এবং উদ্ধারকারী দল অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাকে নিরাপদে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
থাইল্যান্ডের জঙ্গলগুলো বাঘ, চিতাবাঘ, ভাল্লুক এবং হাতি দিয়ে ভরা। কিন্তু উদ্ধারকারীরা জানান, বনটিকে বিপজ্জনক বলে মনে হয়নি তাদের কাছে। লিওনার্ডের মেডিকেল চেক-আপের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যদিও এঘটনায় তার বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
এরপর যখন তাকে তার স্ত্রীর সামনে নিয়ে আসা হল তখন বয়স্ক লিওনার্ড বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি তার আবেগপ্রবণ স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি তখন তার স্ত্রীকে বলছিলেন, আমি আশ্চর্যজনকভাবে খুশি, আমি আমার জীবনে কখনই এত সুখী ছিলাম না।
উদ্ধার হওয়ার পর তিনি স্থানীয় উদ্ধারকর্মী পুলিশ ও উপস্থিত সবাইকে বলেন, অন্ধকার হচ্ছিল তাই আমি ঘুমানোর জন্য একটি পাতার বিছানা তৈরি করেছিলাম, এবং যখন আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম তখন আমি শিলা থেকে বৃষ্টির পানি পান করতাম। আমি সাহায্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
টানা তিনদিন না খেয়ে বেঁচে থাকা লিওনার্ড বলেন, আমার পায়ে ব্যথা, এছাড়া আমি খুশি। আমি জ্বরে আক্রান্ত কিন্তু ভালো অনুভব করছি। এই লোকেরা যা করছে আমি কেবল তার প্রশংসা করি, এটি আমাকে কাঁদায়। তারা ভালো কাজ করছে।
লিওনার্ডের স্ত্রী তাওয়ী বলেন, আমার স্বামী এবং আমি তিন বছর ধরে একসাথে বসবাস করছি। তিনি বিভিন্ন জায়গায় একা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন কিন্তু তিনি সবসময় দিনের শেষে বাড়িতে আসেন। এদিকে মধ্যরাতে আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম তাই আমি থানায় সাহায্য চেয়েছিলাম।'
তাওয়ী বলেন, আমার স্বামী বলেছিল যে তিনি আখের ক্ষেত এবং ধানক্ষেতের সুন্দর দৃশ্য দেখতে মোটরসাইকেলটি তার সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সূত্র: ডেইলি মেইল
এসি
আরও পড়ুন