ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে তালেবান, মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
প্রকাশিত : ২১:৪৩, ৬ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ০৮:২১, ৭ মার্চ ২০২২
আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে তালেবান। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সংস্থাটির গবেষক ফেরেশতা আব্বাসিকে তার খালা ফোনে বলেছেন, “তারা (তালেবান) ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি করছে। আমাকে তোমার সব বই ও তোমার কম্পিউটার পুড়িয়ে দিতে হয়েছে। তারা বাড়িগুলো তল্লাশি করছে। আমি সেগুলো রাখতে পারিনি। তোমার একটা ছবিও আমার কাছে নেই। সবগুলো আমাকে ধ্বংস করতে হয়েছে।”
আব্বাসি বলেন, তিনি যখন কাজ করছিলেন, তখনই তার খালা ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন এসব কথা। তালেবানের হাত থেকে রক্ষা পেতে তার বই ও কাগজপত্রগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
২২ ফেব্রুয়ারি তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ঘোষণা করেন, তারা কাবুল ও নিকটবর্তী প্রদেশগুলোতে অপরাধী ও অস্ত্রের সন্ধানে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করেছেন।
এইচআরডব্লিউ বলছে, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির কারণে প্রদেশগুলোতে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক শরীফ হাসান টুইট করেছেন, “কাবুলে তালেবানদের ঘরে ঘরে তল্লাশি নিয়ে সবাই চিন্তিত। বাড়িতে এমন কিছু নথি আছে যেগুলো বিদেশি এনজিও বা সাবেক আফগান সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত কিংবা তালেবানদের অপছন্দ সংগীতের বই ও দলিল আমার পরিচিতরা লুকানোর চেষ্টা করছেন।”
এইচআরডব্লিউ বলছে, আফগানরা পাসপোর্টও লুকাচ্ছেন, যদিও অনেকের জন্য আফগানিস্তান ত্যাগ করা এখন অসম্ভব। ২৭ ফেব্রুয়ারি তালেবান নতুন বিধিনিষেধে ঘোষণা করে, নারীদেরকে ‘ধর্মীয় কারণ’ ছাড়া একা বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। অবশ্যই নারীদরে জন্য একজন মাহরাম, একজন পুরুষ আত্মীয়কে পরিচারক হিসেবে সঙ্গে থাকতে হবে।
তালেবান পরে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু ‘অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া’ আফগানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই।
আব্বাসীর ভাষ্যে, শৈশব থেকে তিনি যে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ও কাজের পুরস্কার পেয়েছিলেন তা পুড়িয়ে দিয়েছেন তার খালা। তার পরিবার আর আফগানিস্তানে নেই। কিন্তু মানুষ নিজেদের রক্ষা করার জন্য তাদের অতীত পুড়িয়ে ফেলছে।
কাবুলে থাকা আব্বাসীর এক বন্ধু তাকে বলেছেন, “আমরা আমাদের ল্যাপটপটি হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেছি, কারণ এতে আমার সৈনিক ভাইয়ের ছবি ছিল। আমরা জানতাম না, তালেবানরাও কম্পিউটারটি অনুসন্ধান করতে পারে।”
আব্বাসি বলেন, “কাবুলে জীবন দিন দিন কঠিন হচ্ছে। আমরা এমন জীবন যাপন করেছি, ভেবেছিলাম একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। কখনও ভাবিনি, একদিন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের নিজস্ব পরিচয় ধ্বংস করতে হবে।” সূত্র: এএনআই
এসি
আরও পড়ুন