ইউক্রেনকে রকেট দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা
প্রকাশিত : ২১:৫৯, ১ জুন ২০২২ | আপডেট: ২২:০৪, ১ জুন ২০২২
ইউক্রেনে অত্যাধুনিক রকেট পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলছেন, ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় সাহায্য করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কিয়েভ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি চাইছিল - যা দিয়ে বহু দূর থেকে শত্রুকে লক্ষ্য করে আরো নিখুঁতভাবে হামলা করা সম্ভব।
ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল রাশিয়া এবং এটি মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে এই আশঙ্কায় ওয়াশিংটনও এতদিন ইউক্রেনকে এই রকেট দিতে রাজি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই রকেট দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে কোনো ধরনের আক্রমণ করা হবে না - প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কাছ থেকে এই আশ্বাস পাওয়ার পরেই ওয়াশিংটন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক রকেটসহ যেসব যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা সেটাকে "অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে" দেখছে।
ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বুধবার বলেছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য দেওয়া হলে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে কিয়েভের শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে এর কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে বাইডেন লিখেছেন: "একারণেই আমরা ইউক্রেনীয়দের অত্যাধুনিক রকেট ও যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যার ফলে তারা ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে মূল লক্ষ্যের ওপর নিখুঁতভাবে আক্রমণ চালাতে পারে।"
এসব রকেটের ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মধ্যে খুব দ্রুত কথাবার্তা হবে বলে সংবাদদাতারা জানিয়েছেন।
কেন এই রকেট
হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা বলেছেন নতুন এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এম ১৪২ 'হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম' বা এইচআইএমএআরএস। তবে এরকম রকেট কতোগুলো দেওয়া হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু উল্লেখ করেননি।
এই সিস্টেমের সাহায্যে ৭০ কিলোমিটার দূরের টার্গেটকে লক্ষ্য করে একাধিক রকেট নিক্ষেপ করা যায়।
বর্তমানে ইউক্রেনের কাছে যেসব কামান ও রকেট লঞ্চার রয়েছে তার চাইতেও যুক্তরাষ্ট্রের এই রকেট অনেক বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এগুলো রাশিয়ার রকেটের চেয়েও নিখুঁত বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও এগুলো অনেক বেশি দ্রুত রিলোড করা যায় এবং খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করা সম্ভব।
ক্রুদ্ধ রাশিয়া
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই ঘোষণার পর রাশিয়া ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মস্কো বলছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আগুনে তেল ঢালছে। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক রকেট রাশিয়া ভেতরে কোন লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না - কিয়েভের এই আশ্বাস উড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
ওয়াশিংটনের এই প্রতিশ্রুতিতে রাশিয়া কীভাবে সাড়া দেবে সেবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তবে বাইডেনের এই ঘোষণার পর পরই রাশিয়া তার পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে।
বিমান-প্রতিরোধী সর্বাধুনিক ব্যবস্থা দেবে জার্মানি
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি জার্মান সরকারও ইউক্রেনকে বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা সরবরাহ করার কথা ঘোষণা করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস পার্লামেন্ট সদস্যদের বলেছেন, জার্মানির কাছে সর্বাধুনিক যে আইআরআইএস-টি প্রযুক্তি রয়েছে সেটি ইউক্রেনকে দেওয়া হবে যার সাহায্যে রাশিয়ার বিমান আক্রমণ থেকে গোটা একটি শহরকে রক্ষা করা যাবে।
একইসঙ্গে তিনি এমন রাডার দেওয়ার কথাও বলেছেন যা দিয়ে শত্রুপক্ষের কামান ও রকেট লঞ্চার শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
বৃহৎ যুদ্ধের আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে রাশিয়া ক্রুদ্ধ হতে পারে যার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে মস্কোর সরাসরি যুদ্ধ বেধে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলছেন, এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনকে যেসব সামরিক সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে তার মধ্যে এটি তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলছেন এই এইচআইএমএআরএস রকেট ব্যবস্থা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাসের যুদ্ধকে বদলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যদি আত্মরক্ষার জন্যেও এসব রকেট ব্যবহার করে তাহলে তারা ডনবাস এবং ক্রাইমিয়াতেও এটি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু রাশিয়া ক্রাইমিয়াকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এবং ডনবাস পুরোপুরি দখল করে নেওয়ার জন্যেও তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি
রাশিয়ার সৈন্যরা পূর্বাঞ্চলীয় সেভেরোদোনেস্ক শহরটি পুরোপুরি দখল করার উদ্দেশ্যে আরো ভেতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও শহরের যেসব জায়গা এখনও পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে সেগুলোতে তাদের অবস্থান সংহত করেছে।
লুহানস্ক অঞ্চলে এটিই শেষ শহর যা এখনও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় গভর্নর সেরহেই হাইদাই বলছেন, রুশ সৈন্যরা ওই শহরের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
তিনি জানান যে ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের কিছু সৈন্য নতুন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন, এই অঞ্চল দখলের লড়াই-এ রাশিয়া প্রচুর সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়োগ করেছে। এর ফলে অন্য কোথাও তাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালানো হলে তা ঠেকানোর শক্তি হ্রাস পেয়েছে।
খেরসন অঞ্চল থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা যাতে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য রুশ বাহিনী সেখানকার বিভিন্ন সেতু ধ্বংস করে দিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
এসি
আরও পড়ুন